দেশের উত্তরের প্রবেশদ্বার পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে আবারও মিলছে না ভারতীয় ভিসা। যদিও দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে ভিসা চালু থাকলেও জনপ্রিয় এ রুটটি দিয়ে আবারও ভিসা বন্ধ রয়েছে। বিগত প্রায় দুই মাস ধরে ইমিগ্রেশনটিতে নতুন করে ভিসা মিলছে না বলে জানা গেছে। নতুন ভিসা না পাওয়ায় যাত্রী পারাপারও কমে গেছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন এ ইমিগ্রেশন দিয়ে নিয়মিত পারাপার হওয়ায় পর্যটকরা। তবে যাদের আগের ভিসা আছে কেবলমাত্র তারাই এ রুট ব্যবহার করতে পারছেন। ফলে অলস সময় কাটছে ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের।
সরেজমিনে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে গিয়ে জানা যায়, গত আগস্ট মাস থেকে নতুন করে ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। পূর্বের যাদের ভ্রমণ ও মেডিকেল ভিসা রয়েছে তারাই বন্দরটি ব্যবহার করে ভারত যেতে পারছেন।
ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, লিখিতভাবে ভিসা বন্ধের কথা না বলা হলেও দুই মাস ধরে এ ইমিগ্রেশনে ভিসা প্রদান বন্ধ রয়েছে। এ কারণে লোক পারপারও কমে গেছে।
বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে কিছু যাত্রীরা জানিয়েছেন, তারা পূর্বের ভিসা দিয়ে ভারতে যাচ্ছেন। নতুন করে কোনো ভিসা না পাওয়ায় অনেকে ভারতে যেতে পারছেন না। কী কারণে ভিসা দেওয়া বন্ধ হয়েছে তা তারা বলতে পারছেন না।
জানা যায়, বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ভারতীয় ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। এতে করে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করা গেলেও বাংলাবান্ধা দিয়ে যেতে পারছেন না বাংলাদেশিরা। তবে বাংলাদেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের ফুলবাড়ী ইমিগ্রেশন। ইমিগ্রেশন দিয়েই বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ীসহ পর্যটকরা ভারত, নেপাল এবং ভুটানে যাতায়াত করেন। করোনা সংক্রমণের পর ভারতীয় বিভিন্ন রুটে ভিসা প্রদান করা হলেও বাংলাবান্ধা দিয়ে ভিসা বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে নতুন করে ভিসা দেওয়ার কয়েকমাস পর আবারও ভারতের ফুলবাড়ী রুটে কোনো ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। এতে সমস্যায় পড়েছে স্থানীয়সহ দেশের হাজারো ভ্রমণপিপাসু মানুষ।
এদিকে, আগে এ রুটে প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ ভারত, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের দার্জিলিং, কাঞ্চনজনা, সিকিম, গ্যাংটক, ডুয়ার্সসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় যাতায়াত করত। অনেকে চিকিৎসা ও ব্যবসার নানা কাজে ভারত গমনে ব্যবহার করত এ রুট। কিন্তু বর্তমানে ফুলবাড়ী রুটে ভিসা না দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন বাংলাদেশিরা। তারা অতিদ্রুত ফুলবাড়ী বন্দর দিয়ে ভিসা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে এ বন্দর থেকে। কিন্তু ভিসার রুট সমস্যার কারণে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অন্য রুট দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ভ্রমণের জন্য পর্যটক, শিক্ষার্থী এবং রোগীরা খুব সহজে মাদ্রাজ, বাঙ্গালোর, কলকাতা, দিল্লি বিভিন্ন শহরে যাওয়া যায়। তাই বাংলাবান্ধা ফুলবাড়ী রুটে দ্রুত ভিসা চালু করা দরকার। এ বন্দর দিয়ে ভিসা সংকট দূর হলে দুর্ভোগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশি ও ভারতে থাকা আত্মীয়স্বজনদের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের জন্য বন্দরটির কাছে হওয়ায় ভ্রমণ ভিসা চালু থাকলে তারা সহজেই ঘুরে আসতে পারেন। এ জন্য ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট যেন বন্ধ না করারা অনুরোধ জানিয়েছেন অনেক যাত্রীরা।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কুরাতি খুদা মিলন বলেন, দেশের একমাত্র চার দেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। ব্যবসা, চিকিৎসা, ভ্রমণ এবং ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যাতায়াতের জন্য এই ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে থাকেন। দীর্ঘ তিন বছর দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরটিতে ভিসা বন্ধ থাকার পর চলতি বছরে মে মাসে ভিসা চালু করা হয়েছিল। আবার হঠাৎ করে কী কারণে আগস্ট থেকে ভিসা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে আবার থমকে গেছে ইমিগ্রেশনটি। আমরা চাইছি বন্দর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটন, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটিতে ভিসা প্রদানের মধ্য দিয়ে সব সময় সচল রাখা হোক।
বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, লিখিতভাবে ভিসা বন্ধ না থাকলেও নতুন ভিসায় কোনো পাসপোর্টধারী যাত্রীরা এ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট রুট ব্যবহার করতে পারছে না। যাদের আগের ভিসা রয়েছে তারাই যাতায়াত করছেন।
মন্তব্য করুন