কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এটিএম আজহারের আগের ফাঁসির রায়ের জন্য আপিল বিভাগের দুঃখ প্রকাশ 

এটিএম আজহারুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত
এটিএম আজহারুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে খালাস দিয়ে দেওয়া রায়ে আপিল বিভাগ বলেছে, দাখিলকৃত বস্তুগত প্রমাণ এবং আইনি যুক্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, তাকে দোষী সাব্যস্ত করা ছিল ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার মৌলিক নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে ন্যায়বিচারের প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় প্রদান করেন। বিচারপতিরা হলেন- মো. আশফাকুল ইসলাম, জুবায়ের রহমান চৌধুরী, মো. রেজাউল হক, ইমদাদুল হক, মো. আসাদুজ্জামান ও ফারাহ মাহবুব।

রায়ে বলা হয়, এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পারার ব্যর্থতা আদালত আজ স্বীকার করছে। এই ব্যর্থতা বিচারিক প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও যথাযথতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

আদালত বলেন, আপিল বিভাগ আরও দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করছে যে, পূর্ববর্তী রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট এবং রাষ্ট্রপক্ষের মামলার অন্তর্নিহিত প্রমাণের দুর্বলতাগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। ফলে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এটিএম আজহারুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্তকরণ এবং তার সাজা বহাল রাখা আর সম্ভব নয়।

আপিল বিভাগ আরও বলেন, আদালত বিচারিক দায়িত্বের গভীর বোধ নিয়ে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, তাদের পূর্ববর্তী রায়ে তারা এটিএম আজহারুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন ও তাকে দোষী প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। পূর্ববর্তী রায়টি দুঃখজনকভাবে এত গুরুতর প্রকৃতির একটি ফৌজদারি কার্যধারায় প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই এবং ন্যায্যতার সর্বোচ্চ মান পূরণ করতে পারেনি।

এই রায় দেশের উচ্চ আদালতের আত্মসমালোচনামূলক একটি নজির হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিচারিক মানদণ্ড, নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতার প্রশ্নে ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আজকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এটিএম আজহারুল ইসলামকে সব অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। আজকে থেকে, এখন থেকে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্সেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম একজন নির্দোষ ব্যক্তি। এই রায়ের মাধ্যমে আমরা মনে করি সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে। ইতোপূর্বে জামায়াতের এবং বিএনপির ছয় শীর্ষস্থানীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্ততপক্ষে পাঁচজন জেলে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন নির্যাতনের শামিল।

তিনি বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান, তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল বলে। আমরা এটাও মনে করি, এ রায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিজের অবসান হয়েছে। আমরা এটাও মনে করি- এই রায় ঘোষণার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের আদালতের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, আমরা মনে করি পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রকাশিত হওয়ার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অতীতের অনেক রায় সম্পর্কে এ রায়ে অনেক পর্যবেক্ষণ থাকবে। আমরা মনে করি সরকারের উচিত হবে- এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর একটা রিভিও বোর্ড গঠন করে অতীতের রায়গুলোকে পুনর্বিবেচনা করা, যেন মৃত্যু পরবর্তীতে হলেও যাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, অবিচার করা হয়েছে, তাদের পরিবার, তাদের দল এবং এ দেশের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পেতে পারে।

আদালতে জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে ছিলেন- আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক। ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াত নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, জামায়াতের ঢাকা উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, মাসুদ সাঈদী, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জন্মাষ্টমী : সাংবাদিকদের সাথে পূজা পরিষদের মতবিনিময় বৃহস্পতিবার

রাহুল গান্ধীকে হত্যার হুমকি

সাদা পাথর উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু

বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে উয়েফা সুপার কাপে

স্বর্ণ পাচারে জড়িত সেই কেবিন ক্রু রুদাবা সাসপেন্ড

ইতালি উপকূলে অভিবাসীবাহী নৌকা ডুবে ২৬ জনের মৃত্যু

অফিসে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে কী করবেন 

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালককে গুলির পর কুপিয়ে হত্যা

হাজার কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস 

চৌকি কোর্টে অভিযোগের হেল্পলাইন চালু

১০

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

১১

আ.লীগ পালিয়েছে ভারতে, আপনাদের পালাতে হবে পাকিস্তানে : টিপু

১২

গণপিটুনিতে নিহতের ঘটনায় দুই কর্মকর্তাসহ ৮ পুলিশ সদস্য বরখাস্ত

১৩

জামিন পেলেন বিএনপির ১৩ নেতাকর্মী

১৪

বাংলাদেশে নিজের বিচার নিয়ে টিউলিপের প্রতিক্রিয়া

১৫

সেনাপ্রধানের নামে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্ট, আইএসপিআরের সতর্কবার্তা

১৬

সাদা পাথর বাঁচাতে ৫ দফা সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

১৭

যুক্তরাষ্ট্রে বার্সা-ভিয়ারিয়ালের ম্যাচ নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের আপত্তি

১৮

টঙ্গীতে মানববন্ধনে হামলা, আহত ৫

১৯

গলায় চানাচুর আটকে শিশুর করুণ মৃত্যু

২০
X