স্বামীর বিরুদ্ধে দেনমোহরের মামলায় জাল তালকনামা দাখিল করার ঘটনায় বাদীর বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
সোমবার (৩০ জুন) ফেনীর সোনাগাজী পারিবারিক আদালতের বিচারক সহকারী জজ সবুজ হোসেন এ আদেশ দেন।
এর আগে, ২০২১ সালে প্রাক্তন স্বামী আবদুল গোফরান ও তার পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে স্ত্রী নুসরাত জাহান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন, বাদীর দাখিলকৃত তালাকনামা ও হলফনামায় উল্লেখিত তারিখগুলো ঘষামাজা করে জালিয়াতির মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয়েছে। স্ট্যাম্পের পেছনে তারিখ মুছে ফেলে নতুন তারিখ লেখা হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে তালাক সংক্রান্ত নথিপত্র জাল করা হয়েছে। এ কারণে আদালত ওই হলফনামা বাজেয়াপ্ত করেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও উঠে আসে, বাদী ২০২১ সালের ৮ মে তালাক প্রদানের দাবি করলেও তিনি একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং জালিয়াতি করে তালাকের হলফনামা তৈরি করায় তালাকের নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। তালাকের ৯০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই ২য় বিবাহ সম্পন্ন হয়। বাদী ইদ্দত পালন না করায় ইদ্দতকালীন খোরপোষ পাওয়ার অধিকার রাখেন না। আদালত রায়ে বলেন, বাদী তার অন্যান্য দাবি- যেমন হাওলাতের টাকা ও আসবাবপত্র প্রদান সংক্রান্ত বিষয়াদি- উপযুক্ত প্রমাণাদির অভাবে প্রমাণ করতে পারেননি।
বিচারক রায়ে বলেন, মামলার প্রেক্ষিতে বাদী দেনমোহর বাবদ পাঁচ লাখ টাকা পাওয়ার যোগ্য। আদালত প্রতিপক্ষ আবদুল গোফরানকে এই টাকা আদেশপ্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যর্থ হলে বাদী আদালতের মাধ্যমে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তবে তালাক সংক্রান্ত হলফনামা ও নোটিশে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় আদালত বাদী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৬৫ ও ৪৭১ ধারা অনুযায়ী জাল দলিল প্রস্তুত ও জাল দলিল খাঁটি হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে ফৌজদারি মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারিস মাহমুদ মজুমদার জানান, আমাদের আদালতের বিচারক ইতোমধ্যে নিজেই ওই আদেশ অনুযায়ী ফেনী সদর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছেন।
এদিকে মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক রেজিস্ট্রি কাবিননামার মাধ্যমে আবদুল গোফরানের সাথে বাদী নুসরাত জাহানের বিয়ে হয়। দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় সাত লাখ টাকা, যার মধ্যে দুই লাখ টাকা তাৎক্ষণিক পরিশোধ করা হয় এবং পাঁচ লাখ টাকা বকেয়া থেকে যায়।
বিয়ের সময় বাদীর পিতা দুই লাখ টাকার আসবাবপত্র দেন এবং বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী বিদেশ যাবে বলে হাওলাত হিসেবে দুই লাখ টাকা নেন। বাদী অভিযোগ করেন, বিবাদী স্বামী বিদেশে গিয়ে তার খোঁজখবর নেয়নি, বরং পরিবারের পক্ষ থেকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। এই পরিস্থিতিতে ২০২১ সালের ৮ মে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক তিনি স্বামীকে তালাক দেন এবং এরপর ইদ্দতকালীন খোরপোশ বাবদ মাসিক ১০ হাজার টাকা করে তিন মাসের ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। এছাড়া বাদী দেনমোহর, ইদ্দতকালীন খোরপোশ, আসবাবপত্র ও পূর্বে হাওলাত হিসেবে দেওয়া অর্থসহ মোট নয় লাখ ত্রিশ হাজার টাকা দাবি করেন।
অন্যদিকে স্বামী আদালতে লিখিত জবাব দাখিল করে দাবি করেন, বাদী প্রকৃত তালাকের আগে অন্য এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন এবং বিষয়টি স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে উভয়পক্ষ মেনে নিলেও বাদী মিথ্যা ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে আদালতে মামলা করেছেন। তারা অভিযোগ করেন, তালাকনামায় উল্লিখিত তারিখ জাল এবং নোটিশ ও হলফনামায় ঘষামাজা করে তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, বাদী ইদ্দতকাল যথাযথভাবে পালন করেননি এবং যে পরিমাণ টাকা ও আসবাবপত্র দাবি করা হয়েছে তা অসত্য। বরং বাদী নিজেই বিবাহের সময় উপহার ও স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি করেন।
এরপর আদালত মামলার নথি, উভয় পক্ষের জবানবন্দি ও দাখিলকৃত কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে এ রায় প্রদান করেন।
মন্তব্য করুন