কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যদের ভূমিকা নিয়ে ঢাবি শিবির সভাপতির স্ট্যাটাস

ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম। ছবি : সংগৃহীত
ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম। ছবি : সংগৃহীত

নানা আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে একের পর এক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পোস্ট করে যাচ্ছেন দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে আসা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টের মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের বিভিন্ন দিক তোলে ধরেন তিনি।

কালবেলার পাঠকদের জন্য সাদিক কায়েমের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো :

দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন এবং কর্তৃত্ববাদী সরকারের কারণে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ছিল ভিক্টিম। দল, মত, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে কমবেশি প্রত্যেক শ্রেণিপেশার মানুষ এ বাকশালি শাসনে নিপীড়িত-নির্যাতিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট কর্তৃক ভিক্টিম হওয়া থেকে বাদ যায়নি খোদ (জ্ঞাত/অজ্ঞাতসারে) ফ্যাসিবাদের ভিত্তি স্থাপনকারীরাও।

জুলাই বিপ্লব ছিল সর্বস্তরের সকল নিপীড়িতের চূড়ান্ত সম্মিলিত বিক্ষুব্ধ বিস্ফোরণ। এই গণবিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছেন আমাদের শহীদরা। খোদা প্রদত্ত জানকে কোরবানি করে তারা সাম্য ও ইনসানিয়াতভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জিম্মাদারি আমাদের হাতে অর্পণ করে গেছেন।

এই আন্দোলন শহীদ আবু সাঈদের রক্তের ওপর দাঁড়ানো আন্দোলন, শহীদ মীর মুগ্ধের স্মৃতির ওপর দাঁড়ানো আন্দোলন। যে রিকশাওয়ালা ভাই ক্রমাগত দুঃশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতে শহীদ হয়েছেন তার কোরবানির ওপর দাঁড়ানো আন্দোলন। সহস্রাধিক শহীদ আমাদের পথ দেখিয়েছেন এক নতুন মঞ্জিলে-মাকসুদ : Bangladesh 2.0

শিবির সভাপতি লেখেন, এই আন্দোলনে যেমন অবদান ছিল সমাজের উঁচুতলার মানুষের, আবার আন্দোলনের ভ্যানগার্ড ছিল সমাজের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীরাও। ইংলিশ মিডিয়ামের টেক স্যাভি কিড থেকে শুরু করে কওমি-আলিয়ার তালেবে এলেম, শাহবাগ-ধানমন্ডি-মিরপুর-উত্তরা-সাভার থেকে শুরু করে বাংলার স্টালিনগ্রাদ হয়ে ওঠা যাত্রাবাড়ী, শহর-নগর, গ্রাম-গ্রামান্তরে এই বিপ্লব ছিল আপনার, আমার, সবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা থেকে বিপ্লবের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছিল প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-কলেজে। এ আওয়াজ রুদ্ধপ্রচেষ্টা রুখে দিয়েছিল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়ে উঠেছিল গণমানুষের কণ্ঠস্বর। এই বিপ্লব ছিল শ্রমিক এবং দিনমজুরের। আন্দোলন ছিল সাহসী সাংবাদিক, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসী ভাইবোনদেরও। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রবাসীরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন দেশ ও জাতির মুক্তির স্লোগান তুলে।

সবাইকে উদ্দেশ করে তিনি লেখেন, যারা আমাদের পছন্দ করেন, অপছন্দ করেন, ঘৃণা করেন; যারা আমার সংগঠন ছাত্রশিবিরকে ভালোবাসেন, অবজ্ঞা করেন, ঘৃণা করেন- কার্যত সবার অবদানেই আমরা পেয়েছি ৩৬ জুলাইয়ের মহাবিজয়। ফতহে মক্কা, ফতহে বাঙ্গালা, ফতহে কুসতুনতিনিয়ার সিলসিলা ধরে আমরা পেয়েছি ফতহে গণভবন- যেদিন গণভবন সত্যিই গণের ভবনে পরিণত হয়।

প্রতিটা ইনসান রাস্তায় নেমে এসেছিল, 'আমার ভাই মরলো কেন?’ সওয়ালের জবাব চাইতে। এই প্রশ্নের প্রতিউত্তরে যখন তাদের ওপর হায়েনার মতো হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া হয়েছে, তখনই আমাদের শহীদরা দাঁড়িয়ে গেছেন লড়াইয়ের ভ্যানগার্ড হিসেবে।

এই আন্দোলনের সমস্ত কৃতিত্ব আমাদের শহীদ ও হাত-পা-চোখ হারানোসহ নানাভাবে আহত ভাই-বোনের। যাদেরকে বুলেটের গুলি কিংবা জুলুম কোনোকিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি। তারা একজন শহীদ হওয়ার পরে আরেকজন দাঁড়িয়ে গেছেন দুঃশাসন ও স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষাকে বুকে নিয়ে।

শত জুলুম এবং স্লো পয়জনিংয়ের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়া, জামায়াতে ইসলামীসহ দেড় যুগ ধরে তিলে তিলে ইনকিলাবের জমিন চাষ করা মজলুম সকল বিরোধীদল, ইলিয়াস আলী, মাইকেল চাকমা, ব্যারিস্টার আরমান ও জেনারেল আযমি থেকে শুরু করে ফাঁসি-গুম-ক্রসফায়ারে হারিয়ে যাওয়া আমাদের সকল সিপাহসালার ও সহযোদ্ধা। শাপলা-শাহবাগ দ্বন্দ্বকে পাশে রেখে শহুরে মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর সমর্থন, ভাইদের হেফাজতের ঢাল হিসাবে বোনদের বুনইয়ানুম মারসুস তথা সিসাঢালা প্রাচীর হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়া। ফ্যাসিস্টদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও সর্বপ্রকার ব্ল্যাকমেইলকে উপেক্ষা করে পাহাড়-সমতলের ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের সহযোদ্ধা হয়ে ওঠা। মাদ্রাসার তালেবে এলেম এবং আলেম-ওলামার অকাতরে জান-মালের কোরবানি, এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল ছাত্র সংগঠনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই ইনকিলাবের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে।

বিডিআর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে আয়নাঘর পর্যন্ত, শাপলা থেকে শুরু করে মোদিবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত, শেয়ারবাজারে নিঃস্ব মজলুম পরিবার থেকে শুরু করে সাংবাদিক সাগর-রুনির সন্তান মেঘ পর্যন্ত- ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন ছিল জুলাই ইনকেলাবের জ্বালানি। আর শহীদরা ছিলেন সীমাহীন উজ্জ্বল স্ফুলিঙ্গ।

শহীদ-গাজীর স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা যারা জিন্দা আছি তাদের সামনে এক সুদীর্ঘ পথ। আমাদের শহীদদের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটি সুখী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। আমরা কামিয়াব না হলে বিফল হয়ে যাবে '৪৭, '৭১ ও '২৪ এর সকল শহীদের রক্ত। আমাদের দৃষ্টিশক্তি হারানো ভাইদের দৃষ্টিশক্তি কোরবানি বিফলে চলে যাবে, যদি আমরা বৈষম্যহীন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ে তুলতে না পারি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের শহীদদের প্রত্যেককে শাহদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। তাদের রক্তের হক আদায় করে, আমাদের একটি সুখী-সমৃদ্ধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধাপূর্ণ এবং ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার তৌফিক দিন। আমিন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিজয় দিবসে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রদল নেতা তারিকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের নিরাপত্তা টিমের প্রধানের পরিচয়

ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ / মান্না ও ইসলামী ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ফয়সাল ভাড়া দেওয়া গাড়ির মালিক যা বললেন আদালতকে

জননিরাপত্তার অবনতি নিয়ে উদ্বেগ 

২০২৬ মৌসুম পর্যন্ত মেসির সাথে মায়ামিতেই থাকছেন সুয়ারেজ

মেসিকে ফেরানোই লক্ষ্য বার্সা সভাপতি পদপ্রার্থী মার্ক সিরিয়ার

ভূমিকম্পে কাঁপল সৌদি আরব

ওসমান হাদির শারীরিক সর্বশেষ অবস্থা জানালেন ডা. আহাদ

ভিক্ষা করায় বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো পাকিস্তানিকে ফেরত

১০

আ.লীগের সন্ত্রাসীদের দেখামাত্র ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ

১১

কলকাতা স্কোয়াডে কার কত পারিশ্রমিক, তালিকায় কোথায় মোস্তাফিজ? 

১২

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, সেমিতে প্রতিপক্ষ কে?

১৩

ইতালিতে ছিনতাইকারীদের গাড়িচাপায় প্রাণ গেল বাংলাদেশি যুবকের

১৪

দুষ্টু নাচে বিতর্কে নেহা

১৫

জামায়াতের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ৫৭ প্রার্থী

১৬

তারেক রহমানের ফ্লাইটে দেশে ফিরতে নেতাকর্মীদের হিড়িক, সব টিকিট বিক্রি

১৭

লন্ডন গেলেন জামায়াত আমির

১৮

গ্রামীণ ব্যাংকের সামনে ককটেল, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক

১৯

স্নিকো প্রযুক্তির ত্রুটিতে বেঁচে গেলেন ক্যারি

২০
X