বহুল আকাঙ্ক্ষিত ও প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর)। এই নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট দেবেন প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী। ভোটগ্রহণ হবে ক্যাম্পাসের নির্ধারিত আটটি কেন্দ্রে। ভোট গণনার জন্য থাকছে অত্যাধুনিক ১৪টি মেশিন।
অত্যাধুনিক মেশিনে এ ভোট গণনা করা হবে। ফলে রাতের প্রথম অংশেই ঘোষণা করা হবে ফলাফল। ফল ঘোষণা করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে।
ডাকসুতে এবার মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। ভিন্ন পরিবেশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবার শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে পারেন বলে ধারণা করছেন প্রার্থী ও নির্বাচনের পর্যবেক্ষকরা।
শিক্ষার্থীরা ওএমআর শিটে পছন্দের প্রার্থীর ব্যালটের পাশে থাকা ঘরে ক্রস চিহ্ন এঁকে ভোট দিতে পারবেন। বিকালে ভোটগ্রহণ শেষে শুরু হবে গণনা।
কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য পাঁচ পাতার ব্যালট পেপার থাকবে। আর হল সংসদের জন্য থাকবে এক পাতার ব্যালট। সব মিলিয়ে একজন ভোটারের ভোট গুনতে হবে ছয় পাতার ব্যালটে।
এত সংখ্যক ভোটার ও ব্যালট পেপারে এতগুলো পাতা। সব পাতার ভোট গণনা শেষ করে কীভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে।
এ নিয়ে ডাকসুর নির্বাচন কমিশন বলছে, আটটি ভোটকেন্দ্রে ১৪টি অত্যাধুনিক মেশিন থাকবে। ভোট গ্রহণ শেষে এসব মেশিনে নির্ভুলভাবে ভোট গণনা করা হবে।
ডাকসুর চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা অত্যাধুনিক মেশিনে ভোটগুলো গণনা করব। খুব বেশি সময় লাগবে না। কোনো সন্দেহ-সংশয় থাকলে একাধিকবারও গণনা করা যেতে পারে।
তার দেওয়া তথ্যমতে, ছয় পৃষ্ঠার অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) ফরমে ডাকসু ও হল সংসদের ভোট গ্রহণ হবে। কেন্দ্রীয় সংসদের ভোটের জন্য যে ব্যালট থাকবে, তাতে পৃষ্ঠা থাকবে পাঁচটি। আর হল সংসদের ওএমআর শিট হবে এক পৃষ্ঠার। ভোটারপ্রতি ব্যালট পেপারের পৃষ্ঠা থাকবে ছয়টি।
জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা যে মেশিন ব্যবহার করব, তার কোনোটির স্ক্যানিং স্পিড থাকবে ঘণ্টায় ৫০০০ পাতা, আবার কোনোটির স্ক্যানিং স্পিড ৮০০০ পাতা। ভোটারপ্রতি ছয় পাতার ব্যালট হিসাব করলে দেখা যাবে, যে মেশিনগুলোর স্পিড ঘণ্টায় ৫০০০ পাতা, সেগুলো দিয়ে ৮০০ থেকে ৮৫০ জন ভোটারের ব্যালট গণনা করা যাবে। আবার যে মেশিনে ঘণ্টায় ৮০০০ পাতার স্পিড, তা দিয়ে ঘণ্টায় ১৩০০-১৩৫০ ভোটারের ব্যালট গোনা হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, সর্বনিম্ন হিসাবটা ধরলেও আমরা ঘণ্টায় ১২ হাজার ভোটারের দেওয়া ভোট (৬ পৃষ্ঠার ব্যালট) গুনে ফেলতে পারব। যদি ৩০ হাজার ভোট পড়ে, তাহলে তো আমাদের লাগবে প্রায় তিন ঘণ্টা। যদি কোথাও রিপিট গণনা করি, তাহলে হয়তো আরও কিছু সময় লাগতে পারে। সে জন্য আমরা বলেছি, রাতের প্রথমাংশেই ফল ঘোষণার প্রস্তুতি আমাদের আছে। বাকিটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
তফসিল অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে। ক্যাম্পাসের ৮টি কেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনে একজন ভোটারকে মোট ৪১টি ভোট দিতে হবে। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮টি, হল সংসদে ১৩টি পদে।
ডাকসুতে মোট ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন ভোটারের মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯ জন এবং ছাত্র ২০ হাজার ৯১৫ জন। নির্বাচনে ২৮ পদের বিপরীতে লড়ছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ৪০৯ জন ও নারী প্রার্থী ৬২ জন।
এই নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ১৯ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ২৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ১৭ জন।
কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক ৯ জন।
ক্রীড়া সম্পাদক ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক ১১ জন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক ১৫ জন। এছাড়া ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ২১৭ জন।
মন্তব্য করুন