

রাজধানীর ভিক্টোরিয়াপার্ক এলাকায় শিবির সন্দেহে বিশ্বজিৎ কুমার দাসকে ছাত্রলীগ কর্তৃক নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদ এবং হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বচানে ইসলামি ছাত্রশিবির সমর্থিত অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা।
মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় গেটসংলগ্ন শাঁখারীবাজার মোড়ে নবনির্মিত ‘বিশ্বজিৎ চত্বর’ এ মানববন্ধন করেন তারা। এ সময় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা সহ বিশ্বজিৎ দাসের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, ২০১২ সালে শুধু ‘ট্যাগিং’-এর অভিযোগ তুলে প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষ, পুলিশ ও সাংবাদিকদের সামনেই বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই ফ্যাসিবাদী ঘটনার বিচার আজও হয়নি। মাত্র ২৫ বছর বয়সে পরিবারের হাল ধরতে তিনি দর্জির কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাকে ‘ছাত্রশিবির’ ট্যাগ দিয়ে সাংবাদিক, পুলিশ ও সাধারণ মানুষের সামনে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত থাকবে।
অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী মাসুদ রানা বলেন, ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসী ট্যাগিং অপকর্মকে প্রশ্রয় দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই কোনো ধরনের ট্যাগিং বা ফ্রেমিং করে আর কাউকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। যারা এই অপসংস্কৃতিকে রাজনীতি হিসেবে টিকিয়ে রাখতে চাইছে, তাদেরও বলছি নিজেদের পালানোর জায়গা আগেই খুঁজে রাখুন।
শাখা শিবিরের সেক্রেটারি ও অদম্য জবিয়ান ঐক্যের জিএস পদপ্রার্থী আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, বিশ্বজিৎকে হত্যার পর ছাত্রলীগের তৎকালীন ২১ জন নেতাকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি ওই ৮ জনের মধ্যেও দু’জনকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে এবং চারজনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবনে নামানো হয়েছে। এমনকি যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্য থেকেও দুইজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
শাখা শিবিরের সভাপতি ও অদম্য জবিয়ান ঐক্যের ভিপি পদপ্রার্থী মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আজকের দিনটি বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের আগের দিন। পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশে, আদালত প্রাঙ্গণের ঠিক সামনে দিবালোকে শুধু বিশ্বজিৎকে হত্যা করা হয়নি হত্যা করা হয়েছে এই ঢাকা শহরের মানবতাকেও। আমাদের স্বপ্ন ছিল জুলাই আন্দোলনের পর এমন একটি সমাজ গড়ে তুলব, যেখানে মানুষের বাক্স্বাধীনতা থাকবে, মানুষের স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার থাকবে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমরা দেখেছি ৫ আগস্টের পরেও মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে পাথর দিয়ে পৈশাচিক কায়দায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে দেখতে চাই না। আমরা এমন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখি, যেখানে প্রত্যেক মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
বিশ্বজিৎ এর বড় ভাই উত্তমকুমার দাস বলেন, আমার একটাই দাবি আজ তেরো বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো আমার ভাইয়ের বিচার হয়নি। আমার আর কোনো চাওয়া–পাওয়া নেই। শুধু চাই, এই সরকার যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের বিচারের ব্যবস্থা করে। যাতে অন্তত একটু হলেও শান্তি পাই।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে ককটেল বিস্ফোরণের পর ধাওয়া করে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে পথচারী বিশ্বজিৎ দাসকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা।
মন্তব্য করুন