৭৮তম কান উৎসবে ঝলমলে রাত্রির মাঝে ফ্ল্যাশলাইটের ঝলকানি আর ক্যামেরার ক্লিকে যখন গোটা বিশ্ব তাকিয়ে, ঠিক তখনই লালগালিচায় পদার্পণ করেন বলিউড অভিনেত্রী নিতানশী গোয়েল। তবে শুধু পোশাকই নয়,তার উপস্থিতি ছিল এক সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধার্ঘ্য এবং চিত্রকল্পে ভারতীয় সিনেমার নারীদের পক্ষ থেকে গৌরবময় এক প্রতিনিধিত্ব।
জেড বাই মনিকা অ্যান্ড কারিশমার চোখ ধাঁধানো শাড়িতে সজ্জিত নিতানশী যেন হয়ে ওঠেন এক রূপকথার চরিত্র। আর তার ব্যতিক্রমী হেয়ার অ্যাকসেসরিটি, তা যেন বলেই দিচ্ছিলএই মঞ্চে লেখা হচ্ছে এক নতুন ইতিহাস।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, অভিনেত্রীর এই লুক ছিল এক ধরনের শ্রদ্ধা নিবেদন, যা পুরোনো ভারতীয় সৌন্দর্যবোধকে আন্তর্জাতিক মঞ্চের জন্য নতুনভাবে রূপায়িত করা হয়েছে। নিতানশী পরেছিলেন একটি প্রি-ড্রেপড শাড়ি, যার রঙ ছিল কোমল আইভরি। যা যুবতীদের সৌন্দর্য ও ভারতের সমৃদ্ধ টেক্সটাইল ঐতিহ্যের প্রতিফলন তুলে ধরে। শাড়িটি ছিল ফ্লুইড সিলুয়েট, লম্বা ট্রেইল এবং সূক্ষ্ম কারুকাজে সজ্জিত। এর ওপর ছিল থ্রিডি ফুল, পেইসলি মোটিফ এবং বো টাইয়ের নকশা, যা ঐতিহ্যবাহী রেজিস্ট-ডাইং প্রযুক্তিতে নির্মিত।
তবে সবচেয়ে নজরকাড়া ছিল তার মাথায় পরা একটি কাস্টম পার্ল ক্রাউন, যা তৈরি করেছিলেন বি-অভিকা। এই মুকুটে ঝুলছিল মুক্তার লতা, যার সঙ্গে যুক্ত ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বেশ কিছু ছবির ফ্রেম। ফ্রেমগুলোতে ছিল ভারতীয় সিনেমার কিংবদন্তিদের সাদা-কালো ছবি, যেমন- মধুবালা, শ্রীদেবী, রেখা, হেমামালিনী, ওয়াহিদা রেহমান, বৈজয়ন্তীমালা এবং নতুন।
এই ভিজ্যুয়াল শ্রদ্ধার মাধ্যমে নিতানশী ভারতীয় সিনেমার অতীত ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক আলোকবর্তিকায় নিয়ে আসেন। শ্রে ও উর্জার স্টাইলিংয়ে সম্পূর্ণ লুকটি বো-আকৃতির কানের দুল দিয়ে পূর্ণ হয়, যা শাড়ির নকশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
ডিজাইনারদের ভাষায়, এই লুক ছিল নির্মলতা, সৌন্দর্য এবং ভারতীয় কারুশিল্পের মাধ্যমে গল্প বলার এক উদযাপন ।
কান চলচ্চিত্র উৎসব যেখানে ফ্যাশন কূটনীতি ও সাংস্কৃতিক কাহিনিচিত্রের মঞ্চ হিসেবে পরিচিত, সেখানে নিতানশীর পোশাক কেবল ভারতের পোশাকশৈলীর উৎকর্ষতা প্রদর্শন করেনি, বরং তুলে ধরেছে সেই সব কিংবদন্তি অভিনেত্রীদের, যারা ভারতীয় সিনেমার স্বর্ণযুগ গড়ে তুলেছিলেন। ২০২৫ সালে কান-এ অভিনেত্রীর এই উপস্থিতি স্পষ্ট করে দেয় ভারতীয় সেলিব্রিটিরা ক্রমেই এমন এক ধারা গড়ে তুলছেন, যেখানে ফ্যাশন শুধু বাহ্যিক নয়, বরং তা হয়ে উঠছে অর্থবহ সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধার প্রতীক।
মন্তব্য করুন