বিশ্বজুড়ে অগণিত ভক্ত-দর্শকের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ১১ জুলাই পর্দায় আসছে নতুন ‘সুপারম্যান’। বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য সুখবর হলো, আন্তর্জাতিক মুক্তির দিনেই ছবিটি মুক্তি পাবে স্টার সিনেপ্লেক্সে। বহুল কাঙ্ক্ষিত এই ছবির মুক্তি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে চলছে তুমুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। টিজার এবং ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই ছবিটি আলোচনার তুঙ্গে। এটিকে বছরের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সিনেমা বললেও খুব একটা ভুল হবে না। দেশের দর্শকরা জেনে আরও আনন্দিত হতে পারেন যে, ‘সুপারম্যান’-এর পাশাপাশি একই দিনে স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাচ্ছে মার্শাল আর্ট সুপারস্টার জ্যাকি চ্যানের নতুন ছবি ‘কারাতে কিড : লিজেন্ডস’। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এরইমধ্যে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটিও দর্শকমহলে দারুণ সাড়া জাগিয়েছে।
সুপারম্যান লুক অ্যাট দ্য স্কাই! ইজ ইট অ্যা বার্ড? ইজ ইট অ্যা প্লেইন? নো, ইটস সুপারম্যান’। মেট্রোপলিসের আকাশে, লাল-নীল কস্টিউমে সুপারম্যানকে উড়তে দেখে সবাই এভাবেই বিস্মিত হয়েছিল। সেই বিস্ময় এখনো ম্লান হয়ে যায়নি। শৈশবের একটা সময়ে আমরা অনেকেই হতে চেয়েছি সুপারম্যান। ১৯৩৮ সালে অ্যাকশন কমিকসের প্রথম ইস্যুর রঙিন পাতায় সুপারম্যানের প্রথম আবির্ভাবের পর থেকে কেবল কমিকস পড়ুয়াদের মনেই জায়গা করে নেয়নি বরং সুপারহিরো নামের ভিন্ন এক ধারার জন্ম দিয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে সুপারম্যান টিকে আছে আশা, সততা এবং শক্তির প্রতীক হিসেবে। তাইতো এখনো সমান জনপ্রিয় সবার কাছে। কমিকসের পাতায় আগমনের পর এই দীর্ঘ সময়ে সুপারম্যানের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। তবে তার ন্যায়পরায়ণতা এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিবর্তন হয়নি। ব্যাটম্যানের মত সেও কাউকে হত্যায় বিশ্বাসী না। সুপারম্যান চাইলেই তার ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবী শাসনের স্বপ্ন দেখতে পারত, সে পারত তার সব প্রতিদ্বন্দ্বীদের ধুলোয় মিশিয়ে দিতে। কিন্তু সুপারম্যান একটি ফার্মে দুজন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কিছু অসাধারণ শিক্ষা পেয়েছে। সে জেনেছে তার ক্ষমতাগুলো সুন্দর, এই সুন্দর ক্ষমতা দিয়ে সে পৃথিবীকে আরো সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারবে। সুপারম্যান তার ক্রিপ্টোনিয়ান বাবা-মা থেকে যা পেয়েছে তার মধ্যে সে এস-এর মতো দেখতে চিহ্নটিকে সবসময় তার বুকে ধারণ করে। এই চিহ্নটির অর্থ আশা। সে এই পৃথিবীর মানুষের কাছে আশার এক প্রতীক।
সুপারহিরোদের মধ্যে অন্যতম চরিত্রটির নাম নিঃসন্দেহে সুপারম্যান। সুপারহিরো বলতে ঠিক যা বোঝায়, সুপারম্যান যেন তার সবকিছুই। ভক্তদের তুমুল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আবারও বড় পর্দায় আসছেন এই সুপারহিরো। জেমস গান পরিচালিত ‘সুপারম্যান’ হতে চলেছে ডিসি ইউনিভার্সের প্রথম সিনেমা। এবার সুপারম্যান চরিত্রে দেখা যাবে মার্কিন অভিনেতা ডেভিড কোরেনসোয়েটকে। জেরি সিগেল ও জো শাস্টারের তৈরি এই জনপ্রিয় চরিত্রকে নতুনভাবে পর্দায় নিয়ে আসছেন জেমস গান। সুপারম্যানকে সবসময়ই দেখা যায় নানা সমস্যাকে মোকাবিলা করে পৃথিবী ও মানুষের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে। জানা গেল, এবারের ছবিটি শুধু অ্যাকশনের নয় বরং মানুষের মানবিকতা, অভিবাসন, রাজনীতি এবং সম্পর্কের গভীর নৈতিক দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবিও তুলে ধরবে। ডিসি স্টুডিওসের প্রধান এবং পরিচালক জেমস গান এমনটিই জানিয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব লন্ডনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘নতুন ‘সুপারম্যান’ শুধু একটি অ্যাকশনধর্মী সুপারহিরো মুভি নয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল আত্মা ও ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি হতে যাচ্ছে।’
জেমস গান বলেন, ‘আমার কাছে ‘সুপারম্যান’ আসলে আমেরিকার গল্প। একজন অভিবাসীর গল্প, যে অন্য কোনো স্থান থেকে এসে এখানে নিজের স্থান খুঁজে নিচ্ছে। কিন্তু মূলত এটি সেই গল্প, যা বলে ‘মানবিকতা একটি মূল্যবান গুণ’ এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটি হারিয়ে ফেলেছি।’
এই ছবির অনেক রাজনৈতিক দিক রয়েছে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অভিবাসন নিয়ে চলমান বিতর্ককে কেন্দ্র করে অনেকেই ছবির বার্তা ভিন্নভাবে নিতে পারেন বলেও স্বীকার করেন জেমস গান। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, তিনি কারও অনুভূতিতে আঘাত দিতে চান না। কেবল মানুষ ও মানবিকতাকে তুলে ধরতে চান। প্রেক্ষাপট রাজনৈতিক হয়ে উঠলেও এর গল্পে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নৈতিকতার বিষয়টিকে।
জেমস গান বলেন, ‘সুপারম্যান তখনই আসে, যখন মানুষ ভালো কিছুর আশা হারিয়ে ফেলে। আমি এমন এক মানুষের গল্প বলছি, যে সাধারণত ভালো। কিন্তু তাকে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে হয়েছে, কারণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কারণে সমাজে নীচতা বেড়ে গেছে। আমি সমাজ বদলে দেওয়ার জন্য সিনেমা বানাই না, তবে এটা দেখে যদি কারও চেতনা জাগ্রত হয়, তাহলে খুশি হবো।’
কারাতে কিড : লিজেন্ডস
বিশ্বজুড়ে কুংফু কারাতে আর জ্যাকি চ্যান ভক্তের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। মার্শাল আর্ট অ্যাকশন সিনেমার সুপারস্টার জ্যাকি চ্যান আবারও পর্দায় এসেছেন ভক্তদের আকাঙ্খা পূরণে। এবারের সিনেমা ‘কারাতে কিড : লিজেন্ডস’। এটি কারাতে কিড ফ্র্যাঞ্চাইজির একটি নতুন কিস্তি যেখানে জ্যাকি চ্যান মিস্টার হান এবং রাফ মাচ্চিও ড্যানিয়েল লারসোর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
‘কারাতে কিড : লিজেন্ডস’ মূলত ২০১০ সালের ‘দ্য কারাতে কিড’ সিনেমার একটি সিক্যুয়েল এবং একইসঙ্গে ‘কোবরা কাই’ টেলিভিশন সিরিজের একটি ধারাবাহিক। এতে দেখা যাবে, লি নামের এক তরুণ ছেলে তার মায়ের সাথে বেইজিং থেকে নিউইয়র্কে আসে এবং সেখানে তার মার্শাল আর্টের যাত্রা শুরু হয়। জ্যাকি চ্যান এখানে মিস্টার হানের চরিত্রে অভিনয় করছেন, যিনি লি-কে প্রশিক্ষণ দেবেন এবং তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলবেন। এই ছবিতে জ্যাকি চ্যান তার নিজের স্টান্টগুলো নিজেই করছেন, যা ৭১ বছর বয়সেও তার ফিটনেস এবং অ্যাকশন দক্ষতা প্রমাণ করে। চলচ্চিত্রটি পুরোনো কারাতে কিড ফ্র্যাঞ্চাইজির একটি নতুন দিক উন্মোচন করবে এবং পুরোনো ও নতুন প্রজন্মের মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করবে। দীর্ঘ বছর পর, ড্যানিয়েল লারসো এবং জনি লরেন্স আবারও মুখোমুখি হন, তবে এবার কোনো প্রতিযোগিতার জন্য নয়, একটি নতুন হুমকি মোকাবিলায়। কোবরা কাই’র পুরনো শিষ্যদের একজন, কিম তায় সাং নামে দক্ষিণ কোরিয়ার এক মার্শাল আর্ট মাস্টার একটি অন্ধকার মার্শাল আর্ট অ্যাকাডেমি খুলেছে যা সারা বিশ্বের মার্শাল আর্টকে কর্পোরেটভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এদিকে ড্যানিয়েলের কন্যা সামান্থা এবং জনির ছেলে রবি নিজেদের মধ্যে পারিবারিক ও অতীত সংঘাত ভুলে একটি নতুন প্রজন্মের দল গঠন করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় এক নতুন চরিত্র লি হান নামে এক কোরিয়ান বংশোদ্ভূত তরুণ, যে তার হারানো বাবার সন্ধানে এসেছে এবং নিজেই মার্শাল আর্টে একজন প্রতিভাবান। তাদের লক্ষ্য কিম তায় সাং-এর একাডেমিকে থামানো এবং সত্যিকারের মার্শাল আর্ট চেতনা বাঁচিয়ে রাখা।
এই ছবিতে জ্যাকি চ্যান তার ২০১০ সালের ‘দ্য কারাতে কিড’ সিনেমার মি. হ্যান চরিত্রেই ফিরে এসেছেন। মি. হ্যান একজন সম্মানিত কুংফু মাস্টার ও লি ফং-এর গুরু, যিনি তার অতীতের ব্যর্থতা ও ভয়কে জয় করতে সাহায্য করেন এবং ড্যানিয়েল লারসোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে লি-কে কারাতে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। মুক্তির পর থেকে এখনো পর্যন্ত ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় ৪৬ মিলিয়ন ডলার এবং অন্যান্য অঞ্চলে ৪৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যার ফলে বিশ্বব্যাপী মোট আয় হয়েছে ৯২ মিলিয়ন ডলার।
মন্তব্য করুন