

ঘুমের ভঙ্গি নিয়ে মানুষের পছন্দ আলাদা। কেউ গুটিসুটি হয়ে ঘুমাতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন, কেউ পাশ ফিরে সোজা হয়ে ঘুমান। আবার অনেকেরই প্রিয় ঘুমের ভঙ্গি হলো উপুড় হয়ে ঘুমানো। এই ভঙ্গিতেই দ্রুত ঘুম চলে আসে অনেকের। তবে প্রশ্ন হলো, এই অভ্যাস কি শরীরের জন্য আদৌ উপকারী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় উপুড় হয়ে ঘুমানো শরীরকে একটি অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে ধরে রাখে, যার প্রভাব পড়ে মেরুদণ্ড থেকে শুরু করে শ্বাসপ্রশ্বাস ও হজম প্রক্রিয়া পর্যন্ত। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভারতের বেঙ্গালুরুর অ্যাস্টার সিএমআই হাসপাতালের লিড কনসালট্যান্ট (ইন্টারভেনশনাল পালমোনোলজি) ডা. সুনীল কুমার।
প্রথম ধাক্কা খায় ঘাড়, মেরুদণ্ড ও শরীরের ভঙ্গি
টানা ৩০ দিন প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে উপুড় হয়ে ঘুমালে স্বল্পমেয়াদে ঘাড়ে ব্যথা, কাঁধে অস্বস্তি ও পিঠে শক্তভাব দেখা দিতে পারে। ডা. সুনীল কুমারের ভাষায়, দীর্ঘ সময় একদিকে ঘাড় ঘোরানো অবস্থায় থাকায় মেরুদণ্ড সোজা থাকে না। এর ফলে কোমরের নিচের অংশে চাপ পড়তে পারে এবং ঝিনঝিনে অনুভূতিও হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে এই অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী ঘাড়ের ব্যথা, কোমরে অতিরিক্ত চাপ, খারাপ ভঙ্গিতে চলাফেরা, পেশির ভারসাম্যহীনতা এমনকি বুকের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এতে দিনের বেলায় কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে থাকার প্রবণতাও দেখা দেয়।
শ্বাসপ্রশ্বাস, হজম ও রক্ত সঞ্চালনে প্রভাব
উপুড় হয়ে ঘুমালে বুক ও পেটের ওপর সরাসরি চাপ পড়ে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসকে অগভীর করে তুলতে পারে। ডা. সুনীল জানান, দীর্ঘ সময় এভাবে ঘুমালে গভীর শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায় এবং শরীরে অক্সিজেন প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে পেটের ওপর চাপ পড়ায় অ্যাসিডিটি বা অম্বল বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
এ ছাড়া শরীরের ওজনের চাপে হাত বা পায়ে থাকা স্নায়ু ও রক্তনালি চেপে যেতে পারে, ফলে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। যদিও কারও কারও ক্ষেত্রে এই ভঙ্গিতে নাক ডাকার প্রবণতা কমতে পারে, তবে ঘাড়ের অস্বাভাবিক চাপ স্লিপ অ্যাপনিয়া বাড়িয়ে দিতে পারে কিংবা দীর্ঘমেয়াদি অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
স্নায়ু চাপে পড়া ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ঝুঁকি
টানা ৩০ দিন উপুড় হয়ে ঘুমালে স্নায়ু চাপে পড়ার ঝুঁকিও বাড়ে। বিশেষজ্ঞের মতে, ঘাড় একদিকে ঘোরানো এবং কোমরের অংশ অতিরিক্ত বাঁকা অবস্থায় থাকার ফলে স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফল হিসেবে হাত-পায়ে ঝিনঝিনে ভাব, দীর্ঘস্থায়ী শক্তভাব, জয়েন্টে জ্বালা এবং দিনের বেলায় চলাফেরার সময়ও অস্বস্তি থাকতে পারে।
কীভাবে নিরাপদে অভ্যাস বদলাবেন
যারা উপুড় হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস বদলাতে চান, তাদের জন্য কিছু সহজ ও বাস্তবসম্মত পরামর্শ দিয়েছেন ডা. সুনীল কুমার। নিয়মিত এগুলো অনুসরণ করলে ধীরে ধীরে শরীর নতুন ও স্বাস্থ্যকর ঘুমের ভঙ্গিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে—
১. ঘুমানোর সময় হাঁটুর নিচে সাপোর্টিভ বালিশ ব্যবহার করুন
২. শরীরের পাশে শক্ত বালিশ রাখুন, যাতে উপুড় হয়ে গড়াতে না পারেন
৩. মাঝারি শক্ত ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন, যা মেরুদণ্ডকে সমর্থন দেবে
৪. ঘাড়ের চাপ কমাতে পাতলা বালিশ ব্যবহার করুন বা প্রয়োজনে বালিশ ছাড়াই ঘুমান
৫. আরাম ও ভঙ্গি ঠিক করতে বডি পিলো ব্যবহার করতে পারেন
৬. কোমরের নিচে গুটানো তোয়ালে রেখে হালকা সাপোর্ট নিন
৭. ধীরে ধীরে পাশ ফিরে ঘুমানোর অভ্যাস করুন এবং হাঁটুর মাঝে বালিশ রাখুন
বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক ঘুমের ভঙ্গি শুধু ভালো ঘুমই নয়, দীর্ঘমেয়াদে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
মন্তব্য করুন