

হালকা স্ট্রেচ থেকে শুরু করে মনকে শান্ত রাখার ছোট ছোট রুটিনের এমন কিছু অভ্যাস আছে যা আপনার দিনের শুরুটা আরও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে।
ছোট ছোট অভ্যাসই একসময় বড় পরিবর্তন আনে। আপনি সকালে দিনটা কীভাবে শুরু করছেন, তার ওপরই নির্ভর করে পরের পুরো দিনের শক্তি, মনোযোগ, স্ট্রেস কমানো, এমনকি হজম আর মেরুদণ্ডের স্বাস্থ্যের মতো বিষয়ও। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন, তারা প্রতিদিন কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর অভ্যাস মেনে চলেন, যা তাদের শরীর-মনকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং এগুলোর অনেকটাই করতে কয়েক মিনিটের বেশি লাগে না।
পানি খাওয়া, একটু রোদে দাঁড়ানো, বিছানায় শুয়ে হালকা স্ট্রেচ - এসব বিজ্ঞানসমর্থিত রুটিন ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমায় এবং সাথে সাথে ভালোও লাগে। ‘এই ছোট জিনিসগুলোই সুস্থতার ধারাবাহিকতা তৈরি করে।’ বলেন সুইজারল্যান্ডের লংজেভিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আন্দ্রেয়াস বার্নহার্ডট।
চলুন আজ আপনাদের জানাবো ডাক্তারদের দেওয়া সকালবেলার ৯টি অভ্যাস, যেগুলো আপনি খুব সহজেই নিজের রুটিনে যুক্ত করতে পারেন।
ডা. বার্নহার্ডট প্রতিদিন পানি দিয়ে দিন শুরু করতে বলেন। তিনি বলেন, এটাই আমার প্রথম কাজ হওয়া উচিত। পানি শরীরকে জাগিয়ে তোলে, মেটাবলিজম বাড়ায় এবং রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। রাতভর পানি না খাওয়ার পর সকালে পানি শরীরকে সক্রিয় হতে সাহায্য করে।
মেরুদণ্ড বিশেষজ্ঞ ডা. তাহের সাইফুল্লাহ পরামর্শ দেন শুয়ে থেকেই কোমল কিছু স্ট্রেচ করতে। যেমন হাঁটু বুকের কাছে টেনে আনা। তিনি জানান, এতে মেরুদণ্ড নমনীয় হয় এবং আঘাতের ঝুঁকি কমে।
দিনটা শুরু করুন কৃতজ্ঞতার অনুভূতি দিয়ে। নিউ ইয়র্কের কনসিয়ার্জ চিকিৎসক ডা. ফিলিস এনসিয়া-কুমি বলেন, ঘুম থেকে উঠে তিনটি জিনিস ভাবুন যেগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ, বা ডায়েরিতে এক লাইনে লিখে ফেলুন।
তিনি জানান, এটি আপনাকে আপনার জীবনের ভালো দিকগুলো দেখতে সাহায্য করে। যেগুলো আপনার নেই বা যেগুলো নিয়ে আপনি চাপের মধ্যে আছেন সেগুলো থেকে সকাল সকাল দূরে রাখুন।
হিউস্টনের প্রাইমারি কেয়ার চিকিৎসক ডা. সুপার্না ছিব্বার বলেন, সম্পূর্ণ শস্য, ফাইবার, প্রোটিন আর ভালো চর্বিযুক্ত একটি পুষ্টিকর নাস্তা টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হাই ব্লাড প্রেসার, এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
অমলেট, গ্রীক ইয়োগার্ট, অ্যাভোকাডো টোস্ট - এগুলো ভালো উদাহরণ। তিনি আরও বলেন, ‘প্রোটিন শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম ঠিক রাখে এবং কর্টিসল স্পাইক নিয়ন্ত্রণ করে।’
ডা. বার্নহার্ডট ফোন ধরার আগে কয়েকটি গভীর শ্বাস নেন। এতে মন শান্ত থাকে এবং দিনের চাপ শুরু হওয়ার আগেই মানসিক স্থিতি তৈরি হয়। ডা. ছিব্বারও বলেন, ‘আমি সকালে প্রথমেই ফোন দেখি না—ইমেইল বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আটকে পড়তে চাই না।’
নিউ ইয়র্কের চিকিৎসক ডা. নেসোচি ওকেকে-ইগবোকওয়ে বলেন, ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত রোদে দাঁড়ালে সার্কাডিয়ান রিদম ঠিক থাকে। তিনি আরও জানান, রোদে থাকা সেরোটোনিন বাড়ায়, যা মুড ভালো করতে সাহায্য করে।
ডা. ছিব্বার জানান, সংক্ষিপ্ত মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এমনকি বিষণ্নতা কমাতে পারে। তিনি বলেন, ‘দিনটা আমি কৃতজ্ঞতা আর ইতিবাচক অনুভূতি দিয়ে শুরু করি—এটা আমাকে নতুন দিনের জন্য প্রস্তুত করে।’
দিনের অগ্রাধিকারগুলো লিখে ফেলুন, অথবা শান্তভাবে বসে ভাবুন আজ কী করবেন। এতে মনোযোগ বাড়ে এবং সারাদিন আপনি বেশি সংগঠিত থাকতে পারেন।
ডা. ওকেকে-ইগবোকওয়ে বলেন, আপনার কাজের পরিকল্পনা সকালে ঠিক করলে উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়ে যায়।
সকালের কুঁজো হয়ে বসার অভ্যাস ছাড়ুন। ডা. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘পা মাটিতে রেখে, কাঁধ ঢিলা রেখে, পেট শক্ত করে বসুন। এতে পিঠের সুরক্ষা হয়।’
সকালবেলার অভ্যাসগুলো খুব ছোট মনে হলেও, এগুলো আপনার শরীর, মন এবং দৈনন্দিন জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। পানি পান, স্ট্রেচ করা, রোদে দাঁড়ানো বা কয়েক মিনিট কৃতজ্ঞতার অনুশীলন - এসবই ধীরে ধীরে আপনাকে আরও শক্তিশালী, শান্ত এবং মনোযোগী করে তুলবে। ভালো খবর হলো, এই অভ্যাসগুলো শুরু করতে আপনাকে কোনো বড় পরিবর্তন আনতে হবে না, শুধু একটু সচেতনতা আর নিয়মিত চর্চাই যথেষ্ট।
আজ থেকেই যেকোনো ১টি বা ২টি অভ্যাস চেষ্টা করে দেখুন, দেখবেন আপনার সকাল আর আপনার জীবন, দুটোই কতটা বদলে যেতে পারে।
সূত্র : Good Housekeeping
মন্তব্য করুন