বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করতে আগামী সপ্তাহে ঢাকায় আসছে জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশন বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন। সেই কমিশনকে সরকার সবধরনের সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
এই তদন্ত গ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ করার বিষয়ে যা যা করার দরকার সে বিষয়ে সরকার অবশ্যই সহযোগিতা করবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব যেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত হয়। যেটি সমস্ত পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এখন সিচুয়েশন এমন যে কোনো কিছু করতে গেলেই এক ধরনের সমালোচনা আসতে পারে। কাজেই আমরা চাইব তদন্তটা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবেই হোক। এক্ষেত্রে তাদের যা যা সহায়তা করার দরকার আমর সেটি করব।
তিনি বলেন, তারা স্বাধীনভাবেই তদন্ত করুক। তারা যদি এখানে তদন্ত করতে চান তাদের নিরাপত্তার বিষয়টাও আমাদের দেখতে হবে। তারা যতই স্বাধীনভাবে করুন না কেন সেখানে আমাদের ইনভলবমেন্ট থাকতেই হবে। কারণ এই সরকারও চায় একটা স্বচ্ছ তদন্ত হোক এবং তার ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে শাস্তি দেওয়া হোক। কাউকে ঢালাওভাবে হয়রানি করা বা সামরিক ট্রায়ালের চিন্তা সরকারের নেই। আমরা পুরোপুরি আইন অনুযায়ী কাজটা করতে চাই।
জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, জাপানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। তাদের সঙ্গে গতানুগতিক আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। জাপান সম্বন্ধে বাংলাদেশে সাধারণত একটা ভালো মনোভাব আছে এবং সেটা তারাও জানে। তাদের এইড কোয়ালিটিও সবচেয়ে ভালোর একটি, টাকাটা আসলে সেটা আর যায় না। অনেকের ক্ষেত্রে আসে এবং যায়। কিন্তু জাপানিদের সুবিধা হলো, যখন আসে থেকে যায় এখানে।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে জাপানের সহায়তা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক খুব ভালো, সবসময়। কাজে আপনারা সহায়তা করুন।
তিনি আরও বলেন, আমি তাকে বলেছি ছোটখাটো এক হাজার লোক নিয়ে যাওয়া, এগুলোতে কোনো কাজ হবে না। কারণ, নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে ফ্লাইটে ওঠা পর্যন্ত এর মধ্যে এক হাজার বাচ্চা জন্ম দিয়ে গেল। কাজেই, যেটা করতে হবে, আসলে টেকসই একটা রিটার্নের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি তাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নও তুলি নাই। সেটা আরও বিস্তৃত ইস্যু।
তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয় দেখতে হবে এবং তারা যেন অর্থনৈতিক জীবনজীবিকা পেতে পারে- এই দুব্যাপারে তারা যেন আমাদের সহায়তা করে। পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন আমাদের এ ব্যাপারে সহায়তা করে।
আর একটা বিষয় আমি বলেছি, এখানে পুনর্বাসনের বিষয়টি আলাপ আলোচনার মতোও নয়।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা যথেষ্ট করেছি, আমরা আর কোনো রোহিঙ্গাকে নিতে পারব না। পৃথিবীতে আরও অনেক দেশ আছে, এমনকি মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তওয়ালা দেশও অনেক আছে, দরকার হলে তারা নিক।
অর্থনৈতিক সহায়তার ক্ষেত্রে জাপানের সাথেও একই রকম কথাবার্তা হয়েছে জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, জাপানেরতো অনেক ঋণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে চলমানও আছে। বরং তারা আমাদের সহায়তা চেয়েছেন, যেগুলো প্রোগ্রাম চলমান আছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, যেহেতু রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আছে, আমাদের আমাদের যা অবস্থান, আমরাতো যুদ্ধ করতে যাব না কারও সাথে, পারবও না। সেজন্য আমাদেরকে দেখতে হবে, এই নিষেধাজ্ঞা রেজিমের মধ্য দিয়ে আমরা যতটুকু সহায়তা করতে পারি বা সম্পর্ক রক্ষা করতে পারি, এটার সর্বোচ্চটা আমরা করতে চাই। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিরাট সহায়তা দিয়েছে। ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো যদি তিনটা ভেটো না দিত আমাদের পক্ষে। কাজে সেই কৃতজ্ঞতা আমাদের আছে। তাদের একজন নাবিকের কবর আছে এখানে। সেটাও আমি বলেছি যে তোমাদের অবদান নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। আমরা সবসময় শ্রদ্ধাও করি, রুশ মানুষদের আমরা বন্ধু মনে করি। তবে, আমাদেরকে নিরাপদ পথে চলতে হবে।
রূপপুরের ব্যাপারে কথা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এটা চলমান রাখার বিষয়ে আমরা যেন সহায়তা করি। আমরা বলেছি, অবশ্যই, বড় বিনিয়োগতো ইতোমধ্যে হয়েই গেছে। এটার ফলাফল যদি আমরা না পাই, শেষ না হলেতো ফলাফল পাওয়া যাবে না। সেটার জন্য আমরা সহায়তা করব এটা বলেছি।
মন্তব্য করুন