কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৪:৪০ পিএম
আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৫:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জাতিসংঘের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। ছবি : সংগৃহীত
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূসকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিশ্বব্যপী। চলমান এই ইস্যুতে সোমবার প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিয়েছিল ১০০ জন নোবেলজয়ীসহ ১৮৩ বিশ্বনেতা। তার একদিন পরই একই বিষয়ে মন্তব্য করল জাতিসংঘ।

সোমবার (২৮ আগস্ট) স্থানীয় সময়, জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং ড. মুহম্মদ ইউনূসকে বিচারিক হয়রানির অভিযোগ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক।

তিনি বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বলেন, যেমনটা আমরা আগেই বলেছি, আমি মনে করি সবাই বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়।

তিনি আরও বলেন, তারা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেও (বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি) আহ্বান জানিয়েছেন।

অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকায় এই সংকটময় পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের মহাসচিবের অবস্থান কী?

জবাবে জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, আমরা আগেই বলেছি, আমরা (বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন) দেখতে চাই এবং আমি মনে করি, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন সবাই দেখতে চায়। আর আমি প্রফেসর ইউনূসকে হয়রানির বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আমি তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা সম্পর্কে অবগত নই।

পরে ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ সরকার দেশের বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য প্রচারে বাধা দিতে দেশের আইনকে ব্যবহার করছে। দেশের আদালত প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার সাম্প্রতিক সব ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে একজন পিএইচডি ছাত্র সরকারের সমালোচনা করায় বাংলাদেশে তার মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জবাবে ডুজারিক বলেন, আমি বিশেষ এই ঘটনার বিষয়ে জানি না। তবে আমি আপনাকে আবারও যা বলতে পারি, তা হচ্ছে- আমরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। এর আগে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিরোধী মতের প্রতি সম্মান থাকা জরুরি বলে মন্তব্য করেছিলেন শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ক্লেমেন্ট ভউল। গত ৩১ জুলাই এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সহিংসতা ও গ্রেপ্তারের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ অবস্থায় সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সে সময় তিনি বলেন, ‘আমি কর্তৃপক্ষকে তাদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি, তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকার নিশ্চিত করবে এবং অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য বিরোধী মতকে সম্মান করা গুরুত্বপূর্ণ।’

এদিকে গতকাল সোমবার (২৮ আগস্ট) নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত ও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

এর আগে গত মার্চ মাসে, ৪০ জন বিশ্বনেতা একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন যাতে প্রধানমন্ত্রীকে তার সবচেয়ে দক্ষ এবং প্রশংসিত নাগরিকদের একজনের বিরুদ্ধে এই বিবেকহীন প্রচারণা বন্ধ করতে বলা হয়। আগামী ৩১ আগস্ট পুনরায় ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক কাজ শুরু হওয়ার কারণে ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্ব নেতা একটি নতুন চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।

এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ জন বিশ্বনেতা। ওই খোলা চিঠির ধারাবাহিকতায় এবার ১৬০ জন বিশ্বনেতা ফের চিঠি পাঠালেন।

চিঠির শুরুতে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ সম্বোধন করে লেখা হয়েছে- আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা তার প্রশংসা করি।

কিন্তু, সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনে প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো- নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন, সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর আগে ৪০ জন বিশ্বনেতা তার নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আপনার কাছে যে আবেদন করেছিলেন এই চিঠিটি তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলারই চেষ্টা।

আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।

চিঠির শেষে বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান একটি সমীচীন, নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সংগত পদ্ধতিতে নিশ্চিত করবেন। এর পাশাপাশি আসছে দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান (প্রদর্শন) নিশ্চিত করবেন। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা হয় তা ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখার জন্য আমরা বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের শিবিরে যোগ দেব’।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মতলব সেতুর জয়েন্টে ফাটল, আতঙ্কে লাখো মানুষ

প্রথমবার একযোগে তিন দেশে এইচআইভির টিকাদান শুরু

দুপুর পর্যন্ত যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

এলপি গ্যাসের দাম বাড়বে কি না জানা যাবে আজ

রাশিয়া-ইউক্রেন সমঝোতার ‘গতি বাড়ছে’

চাকরির সুযোগ দিচ্ছে এসএমসি, ৪২ বছরেও আবেদন

মোটরসাইকেল-অটোরিকশা সংঘর্ষে ২ বন্ধু নিহত

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না, জানালেন সড়ক উপদেষ্টা

সিরিয়ায় চাপ কমাতে ইসরায়েলকে থামতে বললেন ট্রাম্প

১০

পরোপকারী সঞ্জীবের এমন মৃত্যু কেউ মানতে পারছে না

১১

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১২

২ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৩

ভারতের অনুমতি মিলল দুদিন পর, ভুটানের পথে ট্রানশিপমেন্ট

১৪

মোংলা বন্দরের ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন

১৫

বরিশালে ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশ মঙ্গলবার

১৬

টঙ্গীতে জোড় ইজতেমায় আরও এক মুসল্লির মৃত্যু

১৭

দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি : বাবুল

১৮

পরবর্তী সরকারের প্রতি আসিফ নজরুলের আহ্বান

১৯

পাসপোর্ট অফিস থেকে রোহিঙ্গা যুবক আটক

২০
X