কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অন্তর্বর্তী সরকারের ১২ অর্জনের কথা জানালেন প্রেস সচিব

শফিকুল আলম। ছবি : সংগৃহীত
শফিকুল আলম। ছবি : সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। শুক্রবার (৮ আগস্ট) এ সরকারের এক বছরপূর্তি হতে যাচ্ছে। বিগত এক বছরে সরকারের ১২টি অর্জনের কথা উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) প্রেস সচিবের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ তথ্য জানান তিনি। ফেসবুকে পোস্টে দেওয়া ১২টি অর্জনের মধ্যে রয়েছে—

১. শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা

জুলাই অভ্যুত্থানের পরে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, বিশৃঙ্খলা এবং প্রতিশোধের প্রবণতা রোধ করেছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব একটি স্থিতিশীল শক্তি প্রদান করেছে, যা জাতিকে সহিংসতার পরিবর্তে এক করেছে ও নতুন করে গণতান্ত্রিক পথে পরিচালিত করেছে।

২. অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন

একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে— খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে প্রায় অর্ধেকে হ্রাস পেয়েছে, সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি ৮ দশমিক ৪৮ (৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন), ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেকর্ড রেমিট্যান্স, রপ্তানি ৯ শতাংশ বেড়েছে এবং টাকার মান বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ডলারের বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে। ব্যাংকগুলো স্থিতিশীল হয়েছে।

৩. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ লাভ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল বাণিজ্য শুল্ক আলোচনা শেষ হয়েছে, বড় আকারের বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষিত করেছে (টেক্সটাইলে হান্ডা গ্রুপের ২৫০ মিলিয়ন ডলারসহ ২৫ হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করেছে) এবং গত সরকারের সময়ের তুলনায় এফডিআই প্রবাহ দ্বিগুণ হয়েছে। চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আসছেন।

৪. গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জুলাই সনদ

সংস্কার কমিশন গঠন করে, ৩০টির বেশি দলের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করে এবং ঐতিহাসিক জুলাই সনদকে চূড়ান্ত করে, ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদের যেকোনো প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহি এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে। জুলাই সনদ আমাদের ক্ষমতা কাঠামোতে বর্ধিত চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সসহ একটি নতুন গণতান্ত্রিক যুগের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

৫. জুলাই গণহত্যার জন্য ন্যায়বিচার

জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ বিচার চলছে, অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং আইনের শাসনকে শক্তিশালী করা। ৪টি বড় ট্রায়াল শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে।

৬. নির্বাচনী রোডম্যাপ ও সংস্কার

প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো ভোটার এবং নারীদের অন্তর্ভুক্ত করে অবাধ, সুষ্ঠু এবং উৎসব নির্বাচনের জন্য ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্বাচনকে গণতন্ত্রের জাতীয় উৎসবে পরিণত করার লক্ষ্যে নাগরিকদের প্রতিক্রিয়ার জন্য ডিজিটাল পরামর্শ প্ল্যাটফর্ম চালু করা। জাতীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রায় ৮ লাখ পুলিশ, অনিয়মিত আনসার ও সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

৭. প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি সংস্কার

ক. সংস্কার-চালিত নিয়োগের মাধ্যমে স্বাধীন বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করা হয়েছে।

খ. পুলিশ সংস্কার : মানবাধিকার সেল, বডিক্যাম, স্বচ্ছ জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ এবং ইউএন-স্ট্যান্ডার্ড ‘বিক্ষোভ প্রোটোকল’।

গ. আইনি সংস্কার : সিপিসি এবং সিআরপিসিতে ব্যাপক পরিবর্তন, নতুন অধ্যাদেশে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারকে জানাতে হবে, আইনজীবী প্রবেশাধিকার, চিকিৎসা সুরক্ষা এবং অনলাইনে জিডি ফাইলিংয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

৮. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও ইন্টারনেটের অধিকার

দমনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করেছে (সরকার), সব সাংবাদিকের মামলা প্রত্যাহার করেছে, সমালোচনার স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে এবং ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম।

৯. পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে একক দেশের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে ভারসাম্যপূর্ণ, বহুমেরু পদ্ধতির দিকে পুনর্বিন্যাস করা। বাণিজ্য, বিনিয়োগ, চিকিৎসা সহায়তা এবং সংকট মোকাবিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যদের সঙ্গে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করা, বাংলাদেশকে একটি সক্রিয়, সম্মানিত আঞ্চলিক ভূমিকায় রেখেছে । সার্কের পুনরুজ্জীবন এবং আসিয়ানের সদস্য পদ লাভের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

১০. প্রবাসী ও শ্রম অধিকার

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা পুনরায় চালু করা এবং মালয়েশিয়ার মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা প্রবর্তন। উপসাগরীয় দেশগুলোতে অনিবন্ধিত শ্রমিকদের নিয়মিতকরণ। জাপানে এক লাখ তরুণ এবং ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও সার্বিয়ায় আরও কর্মী পাঠানোর পরিকল্পনা চালু করেছে, যা প্রবাসীদের জন্য সুযোগ প্রশস্ত করেছে।

১১. শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের সহায়তা

জুলাই অভ্যুত্থানের সব শহীদ ও আহতদের তালিকা সতর্কতার সঙ্গে করা হয়েছে। ৭৭৫ জন শহীদ যোদ্ধা পরিবারকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র ও ভাতা প্রদান এবং ১৩ হাজার ৮০০ জন আহত যোদ্ধাকে ১৫৩ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করা হয়। গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়।

১২. সামুদ্রিক এবং অবকাঠামো উন্নয়ন

বঙ্গোপসাগরকে ‘জলভিত্তিক অর্থনীতির’ মূল জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি (দৈনিক ২২৫টির অধিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং), উপকূলীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা সম্প্রসারণ এবং বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে গভীর সমুদ্রের মৎস্য ও শিল্প প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তিন ঘণ্টা ছিলেন দলীয় কার্যালয়ে / রিজভীর নেতৃত্বে তারেক রহমানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানাল বিএনপি

বিএইউএস-নিকডু’র উদ্যোগে লাইভ অপারেটিভ ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি কর্মশালা

বিএনপির রাজনীতি হবে জনগণের সেবা ও জবাবদিহিমূলক : রবিউল আলম

স্থগিত হলো প্রাথমিকের আরও এক নিয়োগ পরীক্ষা

‘এ নির্বাচন করা আমার জন্য নয়, তোমাদের সবার জন্য’

কনকনে শীতের রাতে রাস্তায় ভাইয়ের উষ্ণতা হয়ে উঠল বড় বোন

আমি কোনো অন্যায় করতে পারবো না, জুনায়েদ সাকিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা

১০ ভরি স্বর্ণসহ যত সম্পদ জামায়াত আমিরের

রাতে এভারকেয়ারে গেলেন তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা

তুলির আসনে বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা

১০

১৪ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু

১১

অধিনায়ক পাল্টালেও হার এড়াতে পারল না নোয়াখালী

১২

জকসু নির্বাচন / নিজ কেন্দ্র ছাড়া অন্য কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না প্রার্থীরা : নির্বাচন কমিশন

১৩

শাহবাগে পিস্তলসহ আটক যুবক যমুনা এলাকায় মেজর পরিচয় দিয়েও আটক হয়েছিলেন

১৪

পথচারীদের শীত নিবারণে গাছের গুড়ি জ্বালালেন স্থানীয়রা

১৫

কুয়াশা-তাপমাত্রা নিয়ে ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস

১৬

পলাতক আ.লীগ নেতার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে ধরা

১৭

থার্টি ফার্স্টে ‘নির্বিঘ্ন নগর’ রাখতে কড়া নিয়ন্ত্রণে সিএমপি

১৮

চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন জামায়াত প্রার্থী শামসুজ্জামান হেলালী

১৯

ধর্ম অবমাননার অজুহাত তুলে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা জঘন্যতম কাজ : ধর্ম উপদেষ্টা

২০
X