বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) আয়োজন ‘মধু মেলা-২০২৫’ ও বাংলাদেশের মৌচাষ উন্নয়নে বিসিকের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ করণীয় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (৩১ আগস্ট) সকাল ৯টায় ঢাকার তেজগাঁওয়ের বিসিক প্রধান কার্যালয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে সেমিনার ও মেলার উদ্বোধন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিকের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি ড. মো. মোখলেস উর রহমান মধুর উপকারিতা ও গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেলার নাম শুনে থাকি যার আয়োজন করা হয় গ্রামগঞ্জে বা অন্যান্য জায়গায়। তবে মধু মেলার ধারণা একেবারেই নতুন, এর জন্য বিসিককে ধন্যবাদ। আজকের সেমিনারে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেকেই এসেছেন, তাদের প্রতি আমার একটি অনুরোধ, মধুকে আপনারা পাঠ্য বিষয়াবলিতে সংযোজন করবেন। ছোটবেলা থেকে এই পণ্য এবং তার গুণাবলি সম্পর্কে জানলে আমাদের অনেক উপকার হবে। বিসিককে অনুরোধ করব মধু নিয়ে এমন আয়োজন আবদ্ধ ঘরের মধ্যে না রেখে বাইরের উন্মুক্ত পরিবেশে আয়োজন করতে।’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিল্প সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, আমাদের চিনির বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক মধু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ভেজাল মধু ও চিনি মিশ্রিত মধু কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন, অধ্যাপক, কীটতত্ত্ব বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বলেন, মধু প্রাচীনকাল থেকে মানুষের খাদ্য ও ঔষধি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে সুন্দরবন, মধুপুর গড়, শেরপুর, টাঙ্গাইল, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌচাষের মাধ্যমে মধু উৎপাদন হয়। মৌবক্স ব্যবহার, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তায় বর্তমানে মধু একটি সম্ভাবনাময় শিল্পে পরিণত হয়েছে। এটি শুধু পুষ্টিকর খাদ্য নয়, বরং কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
মৌচাষ উদ্যোক্তা ন্যাচারোর প্রতিষ্ঠাতা মো. আল আমিন বলেন, ‘মধুর কোয়ালিটি ঠিক রাখতে এবং মৌয়ালদের জীবন উন্নত করতে যথাযথ পারিশ্রামিক নির্ধারণ করতে হবে।’
মৌচাষিদের পক্ষ থেকে আফজাল হোসেন বলেন, ‘মধুর উন্নয়নে ফুড গ্রেইডেড কনটেইনার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং ভেজাল মধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়াও মৌচাষিদের সাহায্য করার জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থার দাবি করেন তিনি।’
মৌচাষ উদ্যোক্তা শিশির কুমার সাহা মৌমাছিদের স্বাস্থ্য রক্ষা ও জাত উন্নত করতে মৌচাষিদের উচ্চ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিসিকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘মধু উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিসিক উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, মৌবক্স সরবরাহের পাশাপাশি মধু পরিশোধনের জন্য প্লান্ট নির্মাণ, উৎপাদিত মধু আন্তর্জাতিক মানে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিসিক প্রচার-প্রচারণা চালাবে, যাতে দেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।’
বিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, দেশে বর্তমানে মধুর মোট উৎপাদন ৭ হাজার ৫৪৬ মেট্রিক টন। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মৌচাষিদের ৩০টি স্টল রয়েছে। পাঁচ দিনব্যাপী চলা মেলাটি আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ১০টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
মন্তব্য করুন