চার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন শুরু হচ্ছে রোববার (৩ মার্চ)। সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এবারের সম্মেলনে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৬টি প্রস্তাব পেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সম্মেলন উপলক্ষে শনিবার ছুটির দিনে সংবাদ সম্মেলন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বিভাগের অফিসাররা। আগামী বুধবার সম্মেলন শেষ হবে।
শনিবার (২ মার্চ) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। এতে সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ডিসি সম্মেলনের বাজেট কত? এবারের সম্মেলন কততম? এবং ডেপুটি কমিশনারের (ডিসি) বাংলা ‘জেলা প্রশাসক’ হলো কীভাবে? কিন্তু একটি প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি। এ সময় অন্য অফিসারদের সহযোগিতা কামনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তারাও কেউ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব বলেন, জেলা প্রশাসক শব্দটি অনেক আগে থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে তার পাশে উপস্থিত অন্য অফিসাররা এ বিষয়ে জানে কিনা জিজ্ঞেস করলে তারাও নেতিবাচকভাবে মাথা নাড়েন।
প্রশ্নের উত্তরে একপর্যায়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি যারা বাংলা করেছেন তাদের কাছে জেনে নিতে পারেন।
তিনি বলেন, সম্মেলনের বাজেটের বিষয়ে এই মুহূর্তে জানাতে পারছি না। তবে সর্বনিম্ন খরচে আমরা সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা করি।
কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করলেও এবার কততম সম্মেলন হচ্ছে সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বরং এ তিনটি প্রশ্নকে তিনি খুব বেশি প্রয়োজনীয় মনে করেননি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ের শাপলা হলে সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলন উদ্বোধনের পর করবী হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন ডিসিরা। তবে গত বছরের মতো এবারও সম্মেলনের মূল কার্য-অধিবেশনগুলো হবে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এবার সম্মেলনে মোট ৩০টি অধিবেশন হবে। এরমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য অধিবেশন ২৫টি। এছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে একটি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, নির্দেশনা গ্রহণ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে দুটি অধিবেশন হবে। কার্য অধিবেশনগুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগের মন্ত্রী/উপদেষ্টা/প্রতিমন্ত্রী/সিনিয়র সচিব/সচিবরা উপস্থিত থাকবেন। এবার সম্মেলনে মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অংশ নেবে।
অন্যান্য বছর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একটি সেশন থাকলেও এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেশনটি হচ্ছে না। কারণ তিনি এ সময় বিদেশে অবস্থান করবেন।
জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৬টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলোতে জনসেবা বাড়ানো, জনদুর্ভোগ কমানো, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনের বিকাশ, আইনকানুন বা বিধিমালা সংশোধন, জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। বেশিসংখ্যক প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সংক্রান্ত। এ সংক্রান্ত মোট প্রস্তাব পাওয়া গেছে ২২টি। তবে প্রস্তাবগুলোর কি কি তা জানাননি তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রকাশিত সম্মেলনের কর্মসূচিতে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের মতো সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, মতবিনিময় এবং নৈশভোজের আয়োজন থাকছে। এ ছাড়া সম্মেলনের শেষ দিন সুপ্রিম কোর্ট ভবনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ডিসিরা। প্রধান বিচারপতি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে। এবার সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে ডিসিদের দেখা হচ্ছে না। এ ছাড়া সম্মেলনের শেষ দিন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ সভায় ডিসিরাও উপস্থিত থাকবেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সভার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন কর্মকর্তারা।
সম্মেলনে প্রধান প্রধান আলোচ্য বিষয়:
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম জোরদারকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কম সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছরের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ৬২ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়নের এ হার সন্তোষজনক কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা মনে করি বাস্তবায়নের হার খুবই সন্তোষজনক।
মন্তব্য করুন