কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০১:০৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ড. ইউনূস প্রসঙ্গ

খ্যাতি বা অপরাজনীতির ঊর্ধ্বে আইন চলুক নিজস্ব গতিতে

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে ৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত মতামত প্রকাশ করা হলো।

আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হওয়া সে হিসেবে ইতিবাচক। দোষী কেউ যেন খ্যাতির প্রভাবে ছাড় না পান। সে সঙ্গে পাঠকরা চান এ প্রক্রিয়া যেন কাউকে হয়রানির উদ্দেশ্যে না হয়। পক্ষে-বিপক্ষে নিজেদের ভাবনা তুলে ধরে পাঠকরা লেখেন,

আবু বকর সিদ্দিক : আইন সবার জন্য সমান। আমার দৃষ্টিতে, বাংলার মাটিতে যে কয়জন মেধাবী পুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন, তার মধ্যে ড. ইউনূস একজন। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদালতের কাছে ন্যায্যতা প্রত্যাশা করি।

বিএম হানিফ হোসাইন : ড. মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত হওয়ায় তার নামে কোনো মামলা করা যাবে না, এমন কোনো বিধান নেই। তার বিরুদ্ধে তার কর্মচারীরা, শ্রমিকরা মামলা করেছেন এবং তিনি কর ফাঁকিও দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে দুদক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে। আমি এতে দোষের কিছু দেখছি না। আর তার কোম্পানির শ্রমিকরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বিচার চাওয়ার অধিকার আছে। তবে একটি দল তার বিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা করছে।

বাকী বিল্লাহ : ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর একটি উক্তি রয়েছে, ‘যে দেশে গুণের সমাদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না।’ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই উক্তি শতভাগ যথার্থ বলা যায়। দুদক বহু আগেই তার নিরপেক্ষতা নষ্ট করেছে। কত শত রাঘববোয়াল দুর্নীতি করে দুদকের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তার কোনো হিসাব নেই। কাজেই দুদক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আজকে একটি গোষ্ঠী তাকে সুদখোর বলে ধর্মীয় ফতোয়া দিচ্ছে। এই দেশে এমন কোনো ব্যক্তি আছেন কি, যিনি সুদের সঙ্গে বা সুদে পাওয়া জিনিসের সুবিধা ভোগ করছেন না! রাস্তাঘাট-ব্রিজসহ দেশের এমন কোনো অবকাঠামো আছে কি যেখানে সুদের সম্পৃক্ততা নেই! মূলত, গ্রামীণব্যাংক বা সুদ কোনো ফ্যাক্টর নয়। এ দেশে জন্মগ্রহণ করাটাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসদের বড় ভুল৷ কাজেই দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করবে, পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করবে, জেল-জরিমানা হবে, এসব কিছুতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

আবদুল হাকিম : ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের গর্ব। সারা বিশ্ব তাকে সম্মান করে। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিহিংসার শিকার তিনি। শুধু তাই নয় বিরোধী দল-মতের সবাইকে আওয়ামী লীগের হামলা-মামলা, প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়েছে। এটি সারা বিশ্ববাসীর নজরেও এসেছে।

নুর আহমেদ সিদ্দিকী : ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। একজন নোবেলবিজয়ী হিসেবে তিনি সম্মানের পাত্র। অর্থপাচার ও অর্থআত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। এবার তিনি দুদকে যান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার মতো সম্মানিত ব্যক্তিকে কেন হয়রানি করতে হবে? তার চেয়ে বড় অপরাধ করেও অনেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। আইন সবার জন্য সমান- এ কথা সংবিধানে থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। যদি থাকত তাহলে দেশে এত এত অপরাধ সংঘটিত হতো না। ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেও পার পেয়ে যান আর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেঁসে যান। কথা হচ্ছে, যিনি অপরাধ করবে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হোক সেটাই কাম্য। কেউ রাজনৈতিক আশ্রয়ে পার পেয়ে যাবে আর কেউ ভিন্ন মত, আদর্শ বা দলের হয়ে ফেঁসে যাবে তা যেন না হয়। অপরাধীর কোনো ধর্ম, আদর্শ বা দল নেই। অপরাধী মাত্রই অপরাধী।

এসএম সাখাওয়াত : যখন পুরো পৃথিবী তাকে সম্মান জানাচ্ছে তখন এ দেশের কিছু গোষ্ঠী তার সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি আমাদের দেশের সম্পদ, যাকে নিয়ে গর্ব করা উচিত। অথচ তার সন্মান নিয়ে আমরা টানাহেঁচড়া শুরু করছি। এই হয়রানির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

মো. তৈয়ব উদ্দীন : বর্তমানে দেশে আইনের শাসন নির্বাসনে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। শুধু নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নন, বিরোধী মতের লাখো মানুষ বাড়ি থেকে আদালত আবার আদালত থেকে বাড়ি বিনা কারণে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে প্যারেড করতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও ঘৃণিত। রাসেল আহম্মেদ : এটা হয়রানি ছাড়া কিছুই না। কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে এই হয়রানির খেসারত দিতে হচ্ছে বা হবে।

শফিকুল ইসলাম : গরিবের রক্ত নীরবে চুষে মুখোশ পরা ভদ্রলোক সেজেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

এইচএম হুমায়ুন কবির : ড. ইউনূস অপরাধ করে আদালতের রায়ে মুচলেকা দিয়ে কিছু দিন আগেই সাড়ে ১২শ কোটি টাকা কর পরিশোধ করেছেন। যখন কর ফাঁকির মামলা হয়েছিল তখনও একই কথাটাই বলেছিলেন তিনি। তিনি সাদা চামড়ার দালালি করেন।

মাসুদ খান : আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। কিন্তু আপনি একটি নির্দিষ্ট দলের না হলে বা পদলেহনে অভ্যস্ত না হলে সমাজের উঁচু জায়গায় স্থান নিতে পারবেন না। দুদককে আমরা ১৫ বছর দেখছি সে অন্ধের চশমা পরে শুধু বিরোধী পক্ষকেই দমনে ব্যস্ত। নির্বাচন সামনে এলেই তার আসল চরিত্র ফুটে ওঠে। বাকি চার বছর ছয় মাস তাকে এত লাফালাফি করতে দেখবেন না। ড. ইউনূস বিরল সম্মান আমাদের দেশকে দিয়েছেন অথচ শুধু রাজনৈতিক কারণে আজকে তাকে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আমেরিকার ওপর জিদ ঢালতে গিয়ে ইউনূস সরকারের বলির পাঠা। তাকে বলির পাঠা বানানোর আরেকটি বড় কারণ হলো তিনি যেন তত্ত্বাবধায়ক প্রধান না হতে পারেন। সে জন্যই তাকে মামলায় দোষী সাব্যস্ত করার একটা পাঁয়তারা চলছে। তবে সরকারকে এর চরম মূল্য দিতে হবে।

সেকান্দার আবদুল মালেক : জনগণ ন্যায়বিচার প্রতাশা করে। ড. ইউনূসের সঙ্গে যেন কোনো অন্যায় না হয়। জনগণ নজর রাখছে। মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম : তাকে যদি অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়, তা হবে এ জাতির জন্য অভিশাপ। যে কেউ চাইলে পৃথিবীর কাছে তোমাকে সম্মানিত করতে পারবে না। তুমি মাথা উঁচু করে কাউকে নিজেদের অর্জন বলতে পারবে না। কী আছে আমাদের? কিছু ধান্দাবাজ আমাদের প্রতিনিয়ত পেছনে নিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের ভাবতে হবে।

রোমা ইতালি : যারা কোটি কোটি টাকা পাচার করছে তাদের কিছু করতে পারছে না। হয়রানি করছে নির্দোষ লোককে। এর খেসারতও একদিন দিতে হবে।

জিএমকে মিজান খান : তারা (ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান) না কি বিভিন্ন কলকারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করবে। সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে তারা টাকা ব্যয় করবে বা করে। প্রশ্ন হচ্ছে, যে আইনের ওপর গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠিত তার বাস্তবতা কতটুকু? হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনে মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা দেওয়া কি সামাজিক কাজ? বা এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন? কতটা কলকারখানার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বা বেকারত্ব দূর করেছেন? উল্টো প্রান্তিক গরিবদের উন্নয়নের নামে সুদের বোঝা মাথায় উঠিয়ে দিয়েছেন। রাজনীতির নামে অন্ধকল্যাণে বসবাস করা আমপাবলিক আমরা। ড. ইউনূসের বিচার দাবি করছি।

টিটন ইসলাম : আমি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। ধরে নিলাম, বাংলাদেশের যত এনজিও আছে তারা সুদ খায়। কিন্তু আমি যদি ঋণ না নেই তাহলে তারা সুদ কোথা থেকে খাবে। সমাজে কিছু মানুষ আছেন, তারা খুব অসহায়। এ মানুষগুলো হয়তো উপায় না পেয়ে তাদের কাছ থেকে একসঙ্গে কিছু টাকা নিয়ে কোনো কাজ করেন। তা হয়তো সাপ্তাহিক বা মাসিকভাবে পরিশোধ করতে হয়। আমরা যারা বড় কথা বলি তাদের কাছে প্রশ্ন, কয়জনকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। যদি প্রতিটি সমাজের ধনীরা গরিবদের খেয়াল রাখতেন তবে ওই এনজিওগুলোর জন্ম হতো না। কয়জন আছেন যে, দেশের টাকা চুরি করে বিদেশে গাড়ি-বাড়ি করার প্রতিবাদ করেন। আমরা জাতি হিসেবে অনেক নিচু। অন্যের সমালোচনায় ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করি।

গ্রন্থনা : আব্দুল্লাহ আল মাছুম

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

র‍্যাব পরিচয়ে ডাকাতির সময় গ্রেপ্তার ৫

স্ত্রীকে মারধরে নিষেধ করায় বড় ভাইকে পিটিয়ে মারল ছোট ভাই

ভারতের পাকিস্তানে হামলা, গম্ভীর-শচীন-ধাওয়ানরা উচ্ছ্বসিত

ভারতের হামলায় পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬

পাকিস্তানের যে ৯ স্থানে হামলা চালায় ভারত

জাহাঙ্গীর পাটোয়ারীকে বহিষ্কার করল বিএনপি

পাকিস্তানে ভারতের হামলায় রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

সংঘর্ষে ছাদ উড়ে যাওয়া সেই বাসচালক গ্রেপ্তার

বর্ণাঢ্য আয়োজনে আইইবি’র ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

কোরবানি ঈদের আগের দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস, প্রজ্ঞাপন জারি

১০

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মাঝে আইপিএল নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাল বিসিসিআই

১১

জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সবাইকে কাজ করতে হবে : আলী রীয়াজ

১২

খালেদা জিয়ার জন্য বানানো কারাগারে থাকবেন আ.লীগ নেতারা

১৩

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে না জড়িয়েও বড় ক্ষতির মুখে ফ্রান্স

১৪

পাকিস্তানে থাকা নাহিদ-রিশাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত বিসিবি

১৫

‘কোনো যুদ্ধবিমান সীমান্ত লঙ্ঘন করেনি’ দাবি পাক আইএসপিআরের

১৬

সোমারের অদৃশ্য প্রাচীরেই আটকে গেল বার্সা আক্রমণ

১৭

রাজশাহীতে আম সংগ্রহের তারিখ ঘোষণা

১৮

জামিনে এসে বাদীর ওপর হত্যা মামলার আসামির হামলা

১৯

ভারতীয় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে জরুরি তলব পাকিস্তানের

২০
X