দৈনিক কালবেলার অনলাইন সংস্করণে ৯ অক্টোবর (সোমবার) ‘যেনতেন নির্বাচন করলে টিকে থাকা কষ্ট হবে’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে কালবেলার ফেসবুক পেজে (Kalbela Online) পাঠকের মতামত থেকে বাছাইকৃত ২০টি মতামত প্রকাশ করা হলো।
বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্ন আগামী নির্বাচন কেমন হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারে তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাথে ইতোমধ্যে সংলাপ করছে। আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করেছে তারা।
বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন বিষয়ক পর্যবেক্ষক দল মূলত বাংলাদেশের প্রি-অ্যাসেসমেন্ট করতে এসেছেন। তাদের মূল ফোকাস হলো- সুষ্ঠু, স্বাধীন, অংশগ্রহণমূলক এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে পাঠকরা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। পাঠক নাসরুল্লাহ্ জারিফ সাদমান লিখেছেন, ‘ভোট জনগণের অধিকার। এই অধিকার খর্ব করেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল 'আওয়ামী লীগ। স্বাধীন দেশে নিজের ভোট জনগণ দিতে পারছে না। আমরা সাধারণ মানুষেরা চাই সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হোক। জনগণ যাকে চায় তাকে ক্ষমতায় বসাবে। সুষ্ঠু নির্বাচন না দিলে দেশে হতাহতের আশঙ্কা বাড়তে পারে। এই আশঙ্কা যদি বাস্তবে রূপ নেয় তাহলে কারোর ক্ষেত্রেই এটা ভালো হবে না। নিজের অবস্থান ধরে রাখতে হলেও অন্তত সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করাই বর্তমান সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করি।’
আগামী নির্বাচন নিয়ে বি এম হানিফ হোসাইন লিখেছেন, ‘যেনতেন নির্বাচন নয় নির্বাচন ভালোই হবে। কোনো দল নির্বাচনে ইচ্ছে করে অংশগ্রহণ না করলে তাকে খারাপ কি বলা যায়! আমার মনে হয় টিকে থাকার বিষয় শেখ হাসিনাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নাই। একে একে পনেরো বছর ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নাই। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। আর বিজয় শেখ হাসিনার হবে- ইনশাআল্লাহ। দেশের জনগণ শান্তির পক্ষে উন্নয়নের পক্ষে।’
সাইফুল ইসলাম শাকিল লিখেছেন, ‘যেনতেন নির্বাচন করে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তাহলে নাম মাত্র গণতান্ত্রিক সরকার হবে। মূলত কার্যক্রম করবে একনায়কতান্ত্রিক সরকারের মতো।’
বর্তমান রাজনীতির পরিস্থিতি তুলে ধরে মিজান খান দুর্জয় লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ পরিস্থিতি ঘুরিয়ে নিতে চাচ্ছে, যেমনটা খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে নির্বাচনী মূল ইস্যু বানিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হবে যার ৯০ শতাংশ রাজনৈতিক মোকাবিলা তারা করতে পারছে না। অতএব টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব।’
গতবারের দুটি জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বেল্লাল হোসাইন লিখেছেন, ‘১৪, ১৮ মতো ২০২৪ সালে তলে তলে নির্বাচন করে সরকার আর পার পাবে না। দেশের সাধারণ মানুষের সাথে আন্তর্জাতিক বিশ্ব এখন এক তাল মিলিয়েছে। অতএব দেশের সাধারণ জনগণের পাশে আন্তর্জাতিক বিশ্বের একটি অংশ মানুষ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বপক্ষে ঐক্যমত পোষণ করে।’
শাহাদাৎ হোসাইন লিখেছেন, ‘দেশের জনগণের প্রচণ্ড আক্ষেপ এবং বিদেশিদের নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে যেনতেন নির্বাচন দিয়ে এই সরকার আর টিকতে পারবে না।’
মো. শাহিন আলম লিখেছেন, ‘আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক। আমরা চাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার। আমাদের অধিকার হনন করার অধিকার কারো নেই।’
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে সাইদুর রহমান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানটি ন্যাক্কারজনকভাবে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে! এই সংবিধানের দোহাই দিয়ে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য ভয়ানক সর্বনাশ ডেকে আনবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’
শেখ মোহসীন নিলু লিখেছেন, ‘যেনতেন নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা আকড়ে থাকতে চেষ্টা করবে। কারণ সরকারের ক্ষমতা হাতছাড়া করার সুযোগ নাই। কিন্ত আগামী টার্মে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইলে বহির্বিশ্বের নানামুখি নিষেধাজ্ঞায় পতন অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে।’
কবীর আহমেদ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। সব সরকারই ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টা করে। ১৪/১৮ সালের নির্বাচন শুধুমাত্র জনগণের সাথে তামাশা ছাড়া কিছুই না।’
মো. স্বাধীন মালিক লিখেছেন, ‘যেন তেন নির্বাচন করলে সরকারের টিকে থাকা কষ্ট হবে 'কতটুকু কষ্ট হবে সরকারের তা হয়তো এখনো বলা যাচ্ছে না। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে বেশি। নির্বাচনকালীন সময় সহিংসতা গুম, খুন, বেড়ে যাবে। একদিকে সরকার গ্রহণযোগ্যতা পাবে না, অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানির পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসবে।’
মো. আব্দুল হামিদ লিখেছেন, ‘যেকোনো দেশে জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত না হলে, সে সরকার সে দেশের জনগণকে কেয়ার করে না। যেমন চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এগুলো তার প্রমাণ। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারও সেরকম একটি দেশ হতে যাচ্ছে উন্নয়নের কথা বলে। আমেরিকা বিশ্বে কী কী করে বেড়িয়েছে তা আমাদের মনে রাখতে হবে। খুব বেশি না ইরাকের কথা বলি। মিস ইনফরমেশন ডিজইনফরমেশনের কথা তুলে ইরাক নামক দেশটিকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, অবশ্য এখন আমেরিকা সেটার থেকে বের হয়ে স্যাংশন নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটছে।’
মো. তুষার লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার পরে এখন পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন সঠিক হয়নি, তাই নির্রদলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। যেমন গত ১৪, ১৮ সালের নির্বাচনে আমার ভোট দিতে পারিনি কারণ, ভোট দিতে গিয়ে দেখি আমার ভোট হয়ে গেছে।’
সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে মো. আবু সায়িদ লিখেছেন, ‘সারা পৃথিবীতে নির্বাচন হয় দলীয় সরকারের অধীনে। কেয়ারটেকার সরকার কোথাও নাই। ঐসব দেশে নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন হয়। তাছাড়া কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাকে যারা বিতর্কিত করেছে তারা এখন পাঁয়তারা করছে ওটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কী আজব ব্যাপার! আরও ব্যাপার হলো ২০০৬ সালের কেয়ারটেকার সরকার গঠন কী চমৎকার ছিল!’
আহমেদ কিয়াম লিখেছেন, ‘এবার যদি ইলেকশন সুষ্ঠু না হয় জনগণ যদি ভোট দিতে না পারে তাহলে বাংলাদেশে আর কখনোই গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। আওয়ামী লীগ শক্তভাবে সব বাধা পেরিয়ে যেতে পারলে দেশে একটা প্রতিষ্ঠিত স্বৈরশাসক রাজত্ব করবে। দেশের পাচারকৃত অর্থের কোনো হদিস মিলে না। দেশটাকে একটা প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতির দেশ তৈরি করা হয়ে গেছে অলরেডি। কারো কোনো বিচার নেই। যারা ক্ষমতায় থাকবে তারাই লুটপাট করবে। দেশের মানুষের অত্যাচার বেড়ে যাবে সরকারি দলের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষ বাজারে গেলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে। ক্ষমতা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে অতীতের সকল দুর্নীতি ঢাকা পড়ে যাবে। অতীতের হারাম ইনকাম সব হালাল হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতি অলরেডি ধ্বংস হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের স্বার্থে খুবই প্রয়োজন।’
গ্রন্থনা : উজ্জ্বল হোসেন
মন্তব্য করুন