শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:২৮ পিএম
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দ্য ডিপ্লোম্যাটের নিবন্ধ

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অবস্থান বদলাচ্ছে ভারত?

দ্য ডিপ্লোম্যাটের লোগো। ছবি : সংগৃহীত
দ্য ডিপ্লোম্যাটের লোগো। ছবি : সংগৃহীত

২০২৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের কূটনৈতিক তৎপরতা বেশ লক্ষণীয়। গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছে ভারত সরকার। এর মধ্যে বিএনপি ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে বৈঠক করেছে আর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দল বৈঠক করতে দিল্লি সফর করেছে। এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে এই ধরনের বৈঠকের ঘটনা প্রথম দেখা গেছে। বাংলাদেশের সরকার ও আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান নিয়ে দ্য ডিপ্লোম্যাটে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের অবস্থান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে সেটির একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে এই নিবন্ধে। কালবেলার পাঠকদের জন্য নিবন্ধটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো…

আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চলতি বছর বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছে। গত মার্চে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে দেখা করা ছাড়াও জাতীয় পার্টির একটি প্রতিনিধি দল আগস্টের শুরুর দিকে ভারত সফর করে। এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশের বিরোধী দলের মধ্যে এই ধরনের কর্মকাণ্ড প্রথম দেখা গেছে।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে ভারত যদি নিয়ম রক্ষার খাতিরেও বৈঠক করে থাকে, তারপরও এটিকে একটি পরিবর্তন হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য বলেছে, ‘নয়াদিল্লির প্রতি বিএনপির নীতিতে কোনো স্পষ্ট পরিবর্তনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখতে পাচ্ছে না ভারত।’

আরেকটি বিষয় হলো—গত জুলাইয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন অনুসন্ধান মিশন ভারতবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একটি সংলাপ শুরু করলেও প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষেত্রে ভারতকে সংযত থাকতে দেখা গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সংশ্লিষ্ট সম্পর্কিত কোনো বিবৃতি দেয়নি।

মজার বিষয় হলো—ভারতীয় রাজ্যগুলোর অনেক আঞ্চলিক পত্রিকায় জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকের সমালোচনা করে নিবন্ধ প্রকাশ করা হলেও ভারতের নেতৃস্থানীয় জাতীয় গণমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এটা অনুমান করা ভুল হবে না যে, ইইউ—জামায়াত মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে মন্তব্য না করে বরং নীরবে সয়ে যাচ্ছে ভারত!

এসব উদাহরণগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভারত ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নে অনেক বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করছে। তবে নানা বিষয় থেকে আওয়ামী লীগ হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মোদির মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন তোলাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। শেখ হাসিনা ভারতের বিরোধী দল জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন। ভারত সফরে গেলে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে তিনি দেখাও করেন।

গত ৩ আগস্ট ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সহিংসতামুক্ত এবং যথাযথ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করতে ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো নির্বাচনের বিষয়ে বৃহত্তর ঐকমত্য তৈরির জন্য যে বৈঠক করেছে সেখানেও তার প্রতিফলন দেখা গেছে।

বলা যায়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের সময় ভারত যে নীতি গ্রহণ করেছিল, এবার তাতে অনেকটা পরিবর্তন আসতে পারে। সে সময় নির্বাচন নিয়ে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবে বড় পার্থক্য ছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতাসহ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে মোদির দ্রুত অভিনন্দন জানানোর বিষয়টিকে অনেকখানি হালকা করে দিয়েছিল। ফলে আওয়ামী লীগও আন্তর্জাতিক ধাক্কা থেকে বেঁচে গিয়েছিল।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, মোদি-হাসিনার বন্ধুত্বের কারণেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত প্রতিবেশী দেশে এমন একটি সরকার খুঁজে পেয়েছে যা সন্ত্রাসবিরোধী, ভারতবিরোধী নয় এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, আবার দুশ্চিন্তারও কারণ হতে পারে। সম্প্রতি ভারতের মণিপুর রাজ্যে চলমান সংঘাতের পটভূমিতে মেইতেই সম্প্রদায় বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ পরিস্থিতিতে বলা যায়, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার ভারতকে যেসব সুবিধা দিয়েছে, তা নিরঙ্কুশ নয়।

এই অবস্থায় এসে মনে করা হচ্ছে, ২০১৮ সালের তুলনায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের আচরণে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তবে এটা সঠিক, এটা শুধু ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্যই নয়, পরবর্তী নির্বাচনগুলোর জন্যও বটে।

নিবন্ধটির লেখক অর্কপ্রভো হাজরা ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে যোগাযোগ এবং কৌশল নির্ধারণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে রংপুর অচল করে দিতে বাধ্য হবো’

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : লায়ন ফারুক

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

বৃহত্তর মিরপুরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দেশ বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই : টুকু

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / বস্তিবাসী ও শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি মেনে নিন

মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

রাজধানীতে ১৭ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাগপা ছাত্রলীগের বৈঠক

হাত-মুখ বেঁধে শিশুকে ধর্ষণ, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

এনসিটিবির নামে ‘নকল’ ছাপাখানা, আটক ৫ 

১০

পচা চাল ক্রয়, বাচ্চু মিয়াকে বাধ্যতামূলক অবসর

১১

শহিদুল আলমসহ নৌবহর থেকে আটক ব্যক্তিদের কারাগারে বন্দি

১২

পা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আইসক্রিম বিক্রেতা রফিকুল

১৩

গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা তারেক রহমানের অঙ্গীকার : সাঈদ

১৪

চাকসু নির্বাচনের প্রচারে এগিয়ে ছাত্রদলের প্যানেল

১৫

জনপ্রশাসনের এপিডি এরফানুল হককে বদলি

১৬

কর্ণফুলীর তীরে নতুন আশা

১৭

চাকসু নির্বাচনে আরও তিন প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

১৮

সিলেট বিমানবন্দরে বিদ্যুৎস্পর্শে যুবকের মৃত্যু, থানায় মামলা

১৯

বৃষ্টি আর কতদিন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

২০
X