শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২
কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০৪ পিএম
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
শাহবাগে সংহতি সমাবেশ

জাপার রাজনীতি নিষিদ্ধ চায় ২৯ দল

রাজধানীর শাহবাগে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে তিন দাবিতে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে দলগুলোর নেতারা। ছবি : কালবেলা
রাজধানীর শাহবাগে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে তিন দাবিতে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে দলগুলোর নেতারা। ছবি : কালবেলা

জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে অবিলম্বে তাদের নিবন্ধন বাতিল এবং দেশে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ প্রায় ২৯টি রাজনৈতিক দল।

বিএনপি বলেছে, জাতীয় পার্টির (জাপা) কাঁধে ভর করে পতিত আওয়ামী লীগ আবার রাজনীতিতে ফেরার স্বপ্ন দেখছে। তাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, যাতে ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসতে না পারে। শুক্রবার (০৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে গণঅধিকার পরিষদের উদ্যোগে তিন দাবিতে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে দলগুলোর নেতারা এসব কথা বলেন।

তিন দাবি হলো- গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় জড়িতদের শাস্তি; আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ব্যর্থতার দায়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। এই সংহতি সমাবেশে প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।

সংহতি সমাবেশে আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল বলেন, সম্প্রতি অনেকেই অনেক স্বপ্ন দেখছে। আমরা লক্ষ্য করছি, অনেকেই ভাবছেন জাতীয় পার্টি দিয়ে আবার এসে পড়বে। অনেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখতে কিন্তু বাধা নেই। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা চ্যাপ্টার ক্লোজড। এই চ্যাপ্টার আর খোলার সুযোগ নেই। জনগণের ধাওয়ায় পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার আর ফিরে আসার কোনো রকম নজির নেই।

তিনি বলেন, স্বৈরাচার তো পালিয়ে গেছে, এখন তো স্বৈরাচার নেই। তাহলে নুরুল হক নুরকে রক্তাক্ত করেছে কারা? আমরা বারবার বলেছি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনের স্তরে স্তরে হাসিনার আন্ডা-বাচ্চা রয়ে গেছে। সরকারকে বলেছি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ব্যবস্থা কিছু কিছু হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়নি। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা হয়েছে, এলোপ্যাথি চিকিৎসা হয়নি।

সমাবেশে উপস্থিত রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, এখানে আমরা যারা আছি, বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টি করি। আমাদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার পার্থক্য আছে, আদর্শগত পার্থক্যও আছে, আমরা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলি- এটি সত্য। এটি তো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু একটি জায়গায় আমরা কিন্তু সবাই এক, সেটি হলো- ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। এ ক্ষেত্রে আমরা সবাই এক; এক শরীর এক মন, এক রক্ত এক জায়গা। ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে আর আমরা ফিরতে দেব না। ফ্যাসিস্টদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সোহেল বলেন, একটি কথা মনে রাখবেন, ওই স্বপ্নের (ফিরে আসার) বাস্তবায়ন যদি বাংলাদেশে করতে আসেন বা রাস্তায় নামেন, আমরা কিন্তু আর হাত গুটিয়ে বসে থাকবো না।

নুরের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, এই হামলা শুধু নুর বা গণঅধিকার পরিষদের ওপর হামলা ছিল না, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও জুলাই বিপ্লবের ওপর হামলা। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদকে যারা শক্তি যুগিয়েছে সেই জাতীয় পার্টির বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের প্রতি ওয়াদা করছি, আমরা আজকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ আছি- ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আগামীতেও ঐক্যবদ্ধ থাকব, ইনশাআল্লাহ।

দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, এই সংহতির সমাবেশে মনের ও মুখের কথাই প্রকৃত, এটা জানাতে পারি। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগ যেভাবে পালাতে বাধ্য হয়েছে, ১৪ দলের সাথে তাদের দোসররাও পালাতে বাধ্য হবে। সেজন্য অবশ্যই এখানে মুখের কথার সাথে আমাদের মনের কথার মিল থাকতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ভেবেছিলাম-৫ আগস্ট বিপ্লবপরবর্তী ইন্ডিয়ার দোসরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ব, কিন্তু আমরা কী দেখতে পাই? মর্মান্তিক একটি অবস্থা। নুরের ওপরে হামলার পেছনে একটি গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে, এই ষড়যন্ত্র করেছে শেখ হাসিনার দোসররা। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের পতন হয়েছে, কিন্তু ফ্যাসিবাদের পতন হয়নি। এই ফ্যাসিবাদ, আওয়ামী লীগ যাতে আর কোনোদিন বাংলাদেশ আসতে না পারে, সেজন্য আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ বলেন, জুলাই গণআন্দোলনে আমরা সফল হয়েছি। এর একমাত্র কারণ ছিল ঐক্যবদ্ধ ছিলাম আমরা। কিন্তু এখন আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির পায়তারা চলছে। জাতীয় পার্টি পতিত আওয়ামী লীগের ’১৪, ’১৮ এবং ’২৪ এর ডামি নির্বাচনের সহযোগী ছিল। তারা কোনভাবেই এদেশে আর রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। তাদেরকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে দিল্লি সরকার শুধু আওয়ামী লীগকে প্রশয় দেয়নি, সেইসাথে জাতীয় পার্টির মাধ্যমে এ দেশে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কথা পরিষ্কার, এ দেশ থেকে জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলকে চিরতরে নিষিদ্ধ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, আওয়ামী লীগ অপরাধ করেছে, জাতীয় পার্টিও একই অপরাধ করেছে। সুতরাং এদেরকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতকে আর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। বাংলাদেশের রাজনীতি কোথায় যাবে, আমাদের দেশ কোথায় যাবে, সেই সিদ্ধান্ত নিব আমরা।

নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার বলেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দল নিষিদ্ধ ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। এটাই দেশবাসীর চাওয়া।

সংহতি সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- জেএসডির কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভুঁইয়া, জমিয়তের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, এনডিএমের মোহাম্মদ মোমিনুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মোহাম্মাদ মুনতাসির আলী, এনডিপির একাংশের কারী আবু তাহের, অপরাংশের আবদুল্লাহ আল হারুন সোহেল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) খোকন চন্দ্র দাস, জনতার অধিকার পার্টির তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, পিএনপির ফিরোজ মাহমুদ লিটন, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোর্শেদ মামুন প্রমুখ। সমাবেশে এনপিপির যুগ্ম মহাসচিব মো. ফরিদ উদ্দিনসহ গণঅধিকার পরিষদ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সংহতি সমাবেশের পরপরই মঞ্চ থেকে ঘোষণা হয়- তারা মিছিল নিয়ে বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে যাবেন। এরই মধ্যেই কিছু নেতাকর্মী শাহবাগের মোড়ে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো এলাকা। সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। তারা জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় সিনিয়র নেতারা তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। এ ঘটনার ২০ মিনিট পর পুলিশ সদস্যরা পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মুন্সীগঞ্জে মদ্যপানে ৪ জনের মৃত্যু

উচ্ছেদ আতঙ্কে মালপাহাড়িয়ারা

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যা বললেন অপু বিশ্বাস

গাজীপুরে বাসচাপায় নওগাঁর ডিবির ওসি নিহত

রিজানের সেঞ্চুরি, সামিউনের ঘূর্ণিতে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিলো যুবারা

‌‘মন্ত্রী-সচিব হাঁপ ছেড়ে বাঁচল, সারওয়ার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাল’

জিয়ার সৈনিকের লাশ পড়ে ছিল শীতলক্ষ্যা-বুড়িগঙ্গায় : রিজভী

আগামী নির্বাচনে ইসলামী রাজনৈতিক শক্তিকে মানুষ ভোট দেবে : ডা. তাহের

নতুন জার্সি স্পনসরশিপ বিসিসিআইয়ের জন্য আশীর্বাদ!

ইউনূস কার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন : এমএম আকাশ

১০

হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিল খানকা

১১

ফের মাস্টার্সের সুযোগ চান সাবেক সমন্বয়কসহ ৬ নেতা

১২

হানিফ ফ্লাইওভারে বাস-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত ২

১৩

বই পড়ে পুরস্কার পেল ৬ হাজার শিক্ষার্থী

১৪

বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ঘিরে উত্তাল কক্সবাজার

১৫

মালয়েশিয়ায় ভ্রমণকারীদের নিয়ে ইমিগ্রেশনের নতুন ঘোষণা

১৬

বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন ছাড়া জাতির সামনে বিকল্প কিছু নেই : আজাদ

১৭

মুন্সীগঞ্জে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৮ 

১৮

শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামবিরোধী এজেন্ডা মেনে নেওয়া হবে না : হেফাজত

১৯

নুরাল পাগলের দরবারে হামলা-অগ্নিসংযোগ, নিহত ১

২০
X