বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আমাদের সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার পতিত সরকারের ছেঁড়া জুতা পায়ে দিয়ে চলার চেষ্টা করছে। তাদের কারও কারও মধ্যে ছোট ছোট হাসিনা হয়ে ওঠার কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে তরুণ-যুবারা দ্রোহের যে আগুন জ্বেলে দিয়েছিল, গত ১৪ মাস ধরে সরকার তাতে কেবল পানি ঢেলে চলেছে। তরুণ-যুবারা ধারাবাহিকভাবে প্রতারিত হয়ে আসছে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিপ্লবী যুব সংহতির আহবানে জাতীয় যুব কনভেনশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাইফুল হক এসব কথা বলেন। সারা দেশ থেকে আট শতাধিক যুব প্রতিনিধি দিনব্যাপী এই কনভেনশনে অংশগ্রহণ করেন।
সাইফুল হক বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যুবারা অধিকার প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিল, গত এক বছরে তা হতাশায় পর্যবসিত হয়েছে। গত এক বছরে সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনার অনেকখানি খেয়ে ফেলেছে।
তিনি ক্ষোভের সঙ্গে উল্লেখ করেন, অনেকেই তরুণদের ব্যবহার করেন, কিন্তু তাদের অধিকার দিতে চান না। নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেই তারা যুবশক্তিকে মবসন্ত্রাসসহ নানা অপকাজে ব্যবহার করে আসছে। তিনি এই অবস্থার পরিবর্তনে তরুণ যুবশক্তিকে রাজপথে জেগে থাকার আহ্বান জানান।
সাইফুল হক আশা প্রকাশ করেন, তরুণ-যুবারা কোনোভাবেই তাদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আত্মাকে নষ্ট হতে দেবে না। তিনি সরকারকে তাদের জানা-অজানা এজেন্ডা গুটিয়ে এনে বিচার ও সংস্কারের প্রক্রিয়ায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানেই যাবতীয় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার আহ্বান জানান।
সাইফুল হক সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়লে দেশ অভূতপূর্ব বিপদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান বলেন, তরুণ যুবশক্তিই আমাদের প্রাণ। যুগে যুগে তারাই দ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে এসেছে। আমাদের গণঅভ্যুত্থানে তারাই ছিল আমাদের ভরসার জায়গা। গণঅভ্যুত্থান যাতে ব্যর্থ না হয়, তার জন্য যুবশক্তিকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বৈষম্য বিলোপ করতে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের সাফল্য ব্যর্থ হয়ে যাবে। তিনি তরুণ-যুবকদের কর্ম সংস্থানসহ মানবিক জীবনের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানান।
বিশিষ্ট নৃ-বিজ্ঞানী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোশরেকা অদিতি হক বলেন, ইতিহাসে অনেক বিপ্লব, অভ্যুত্থান তার বিপ্লবী সন্তানদের খেয়ে ফেলেছে। আমরাও এই বিপদের মধ্যে আছি। বিপ্লবের নামে আমাদের গৌরবের অর্জনকে অস্বীকার করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। দেশকে পিছনে টানার অপচেষ্টা চলছে। যুবশক্তিকে এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখতে হবে। নিজেদের অধিকার আর মুক্তির জন্য যুব জাগরণ ঘটাতে হবে।
যুব কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক বাবর চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব মীর রেজাউল আলমের সঞ্চালনায় যুব কনভেনশনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য নারীনেত্রী বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, কৃষক নেতা আনছার আলী দুলাল, শ্রমিক নেতা মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, সাইফুল ইসলাম।
কনভেনশনের দ্বিতীয় অধিবেশনে যুব অধিকার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় যুব কনভেনশনের ঘোষণা দাবিনামা গ্রহণ করা হয়।
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর যুব কনভেনশনের র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে র্যালিটি হাইকোর্ট, তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন, বিজয়নগর হয়ে আবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এসে সমাপ্ত হয়। এর আগে সকালে সমবেতকণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কনভেনশন শুরু হয়। কনভেনশনে শোক প্রস্তাব পেশ করেন যুবনেতা রাশেদুল ইসলাম রাসেল।
মন্তব্য করুন