আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সারা দেশে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে খেলাফত মজলিস। সে সঙ্গে আইনি ভিত্তি দিয়ে জুলাই সনদ প্রণয়ন ও তার আলোকে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৬ দফা দাবিতে ২৪ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
শনিবার (০৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর রমনাস্থ ইন্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
শুরুতেই তিনি ইসরাইলী গণহত্যার শিকার গাজাবাসীর বিরুদ্ধে আরোপিত অবরোধ ভাঙ্গতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার কর্মীদের গাজাগামী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র নৌবহরে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা ও কয়েকশ মানবাধিকার কর্মীকে অপহরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সেসঙ্গে অন্যায়ভাবে আটক মানবাধিকার কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে অবিলম্বে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ২৪-এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সহস্রাধিক শহীদের আত্মদান ও হাজারো ছাত্র-জনতার ত্যাগের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জনগণের প্রত্যাশা ছিলো খুনি ফ্যাসিবাদী হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এ জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ করাই হচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব। পতিত ফ্যাসিবাদী হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার শুরু হলেও তা কাঙ্ক্ষিত পরিসর ও গতি পায়নি। আমরা বারবার ফ্যাসিবাদের সব দোসরদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি।
আহমদ আবদুল কাদের বলেন, এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরাও আগামী মাহে রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন চাই। এ লক্ষ্যে ৩০০ আসনে আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে খেলাফত মজলিসের ২৫৬ সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আজকে আমরা এমপি প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি বিষয়ে মতবিনিময় করছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন তা এখনো প্রস্তুত হয়নি। প্রশাসনিক সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন রয়েছে তার কোনো সমাধান হয়নি। দেশের স্থিতিশীলতা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। বিশেষ করে নির্বাচনের পূর্বে সংস্কারের যে দাবি ছিল তার কিছুই হয়নি। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কার সংক্রান্ত জুলাই সনদ-২০২৫ চূড়ান্ত করেছে। কিন্তু জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর বাস্তবায়ন নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। দেশ-জাতির স্বার্থে অবিলম্বে এ অনিশ্চয়তা দূর করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে, যা জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ হিসেবে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছে। অনেকে চাইছেন গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে। কিন্তু যারাই নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসবেন তারা এসব বিষয় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে কিনা সে বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতার কারণে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। অতি দ্রুত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণা করে তা কার্যকর করতে আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর ভিত্তিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণার আগেই নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে।
ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিয়ে যেমন সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে যথাসময়ে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য ইতোমধ্যেই খেলাফত মজলিস জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করাসহ ৬ দফা দাবিতে ৩ দফা কর্মসূচি পালন করেছে। জনগণ এসব কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে।
কিন্তু আমাদের এ প্রধান দাবিসহ ৬ দফা দাবি পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ কোনো পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় আমরা নিম্নোক্ত নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করছি : ১. ৫-৯ অক্টোবর গণসংযোগ ২. ১০ অক্টোবর ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে গণমিছিল ৩. ১২ অক্টোবর সারা দেশে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এ ছাড়া আগামী ১৫-৩০ অক্টোবর খেলাফত মজলিস সারা দেশে সংসদীয় আসন ভিত্তিক পক্ষকালব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ঘোষিত শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দল-মত নির্বিশেষে দেশবাসীকে উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসাইন, জাহাঙ্গীর হোসাইন, আব্দুল জলিল, মুনতাসির আলী, সিরাজুল মামুন, ড. মুস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, প্রকৌশলী আব্দুল হাফিজ খসরুসহ এমপি প্রার্থী ও অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন