

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্ভূত সংকট সমাধানের দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্রের মঞ্চের নেতারা।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মঞ্চের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাড. হাসনাত কাইয়ূম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জেএসডির সিনিয়র সহ সভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব আবু ইউসূফ সেলিম প্রমুখ।
নেতারা বলেন, জুলাই সনদ এবং সনদের আইনি ভিত্তি হিসেবে গণভোটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায় রয়েছে বলে মনে করে গণতন্ত্র মঞ্চ। এই অচলাবস্থার মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টির দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দিয়ে সরকার দায়মুক্তির চেষ্টা করছে। গণতন্ত্র মঞ্চ মনে করে, গণভোটের তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের। অথচ তারা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে এই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সৃষ্ট সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। একইসাথে জুলাই সনদ প্রণয়নের ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ সমূহকে যেভাবে লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত সনদ এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার মধ্যে নীতিগত পার্থক্য রয়েছে।
তারা আরও বলেন, এই বিষয়গুলো উদ্ভূত পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। যদিও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে ইতঃপূর্বে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, তারা কোনো বিষয় চাপিয়ে দেবে না বরং ফ্যাসিলিটেটরের (সহায়তাকারী) ভূমিকা পালন করবে; অথচ জুলাই সনদ স্বাক্ষরপরবর্তী সময়ে তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। সর্বশেষ গতকাল (সোমবার) সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য তৈরির জন্য সাতদিনের সময় বেঁধে দিয়ে জানানো হয়েছে এই সময়ের পর সরকার তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। এটা একদিকে যেমন প্রতারণার শামিল, অন্যদিকে সরকারের স্বৈরাচারী মানসিকতার প্রকাশ।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও মোটাদাগে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, সরকারের ভুল পদক্ষেপ এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা সেই ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ’২৪ এর অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং একইসাথে সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তারা বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ মনে করে- এই পরিস্থিতিতে সরকারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। একইসাথে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা থেকে সরে এসে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসন করে সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অনুসরণ করতে হবে। পাশাপাশি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মনে রাখতে হবে, ঘোষিত সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করা না গেলে দেশ ভয়াবহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।
মন্তব্য করুন