

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। ট্রাম্প প্রশাসন কারাকাসের ওপর চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি ভেনেজুয়েলার সীমান্তে মার্কিন সামরিক উপস্থিতিও জোরদার করছে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা এমন সময় এলো, যখন ভেনেজুয়েলার উপকূলে নৌযানে মার্কিন সামরিক হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া একটি ভেনেজুয়েলান তেলবাহী ট্যাঙ্কার জব্দ করা হয়েছে এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত বন্দরগুলোতে যাতায়াতকারী সব জাহাজের ওপর কার্যত নৌ অবরোধ আরোপ করা হয়েছে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেন, মাদুরো ও তার অপরাধী সহযোগীরা আমাদের গোলার্ধের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। ট্রাম্প প্রশাসন তার অবৈধ স্বৈরতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাবে।
নতুন এই নিষেধাজ্ঞায় সাত ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত, যারা মাদুরোর ভাতিজা মালপিকা ফ্লোরেস এবং পানামার ব্যবসায়ী রামোন কারেতেরোর পরিবারের সদস্য বা সহযোগী। এর আগে, গত ১১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি ছয়টি ভেনেজুয়েলা-নিবন্ধিত তেল ট্যাঙ্কার ও শিপিং কোম্পানিকেও লক্ষ্যবস্তু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ অভিযোগ রয়েছে, ফ্লোরেস ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তার ভূমিকা কীভাবে সরাসরি মাদুরোর শাসনকে টিকিয়ে রাখছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, মাদক পাচার দমনের লক্ষ্যেই তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু হামলা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শামিল। একই সঙ্গে সমালোচকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের আসল নজর ভেনেজুয়েলার বিশাল তেলসম্পদের দিকে, যা বিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুতের অন্যতম।
এদিকে, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিষয়ক কর্মকর্তা স্টিফেন মিলার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করেছেন, ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ। তার এই মন্তব্য নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, বিশেষ করে তেল খাতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করেছে এবং মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়িয়েছে। মাদুরো পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘শাসন পরিবর্তনের’ লক্ষ্যে একটি স্থায়ী যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে এবং ভেনেজুয়েলার তেল দখলই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভেনেজুয়েলার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। ২০১৭ সালে প্রথম আরোপিত এসব নিষেধাজ্ঞা সম্প্রতি ২০২৭ সাল পর্যন্ত নবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্পদ জব্দের ব্যবস্থাও রয়েছে।
মন্তব্য করুন