আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘আসন ভাগ-বাটোয়ারা’ এবং ‘আমি-ডামির’ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, প্রহসনের ভোট জমছে না দেখে দিশাহারা হয়ে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী এবং তার ডামি নির্বাচন কমিশনসহ পুরো আওয়ামীচক্র-রাষ্ট্রযন্ত্র। এখন তারা ভোটারদের হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করেছেন। এমনকি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ওএমএস, কৃষকের মাঝে সার এবং বীজ বিতরণ বন্ধের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এভাবে গোটা দেশকে অভাবনীয় নরকপুরি ও জেলখানা বানানো হয়েছে। কারাগারে বন্দিদের তিলে তিলে নির্যাতন করে হত্যা করা হচ্ছে।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক বিশ্বের চোখে ধুলো দিতে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি দেখানোর জন্য অসহায় ভোটারদের বাধ্য করতে এক অভিনব অমানবিক নির্যাতনের পন্থা প্রয়োগ করছে সরকার। গণভবনের নির্দেশেই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় কার্ডের মাধ্যমে সুবিধা ভোগী প্রায় দুই কোটি মানুষকে টার্গেট করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের অনুগত প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপকারভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংশ্লিষ্ট কার্ড জমা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, একদিকে নৌকার প্রার্থী ও তাদের প্রচারকরা হুমকি দিচ্ছেন ভোটকেন্দ্রে না গেলে বাড়ি ছাড়া করা হবে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনাররা জেল-জরিমানার হুমকি দিচ্ছেন। কেউ ভোট প্রতিহত করার চেষ্টা করলে সাত বছরের জেল হবে। অর্থদণ্ড হবে। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য লিফলেট বিতরণ করলে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমানের হুমকি-হুংকার দেখে মনে হচ্ছে তিনি অস্তিত্ব ভুলে আওয়ামী সেবাদাসত্ব করছেন। প্রতিদিন গণভবন থেকে আসা ফরমান ঘোষণা করছেন। দেড় দশক ধরে জগদ্দল পাথরের মতো বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসা দৈত্যের পতন এবং একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ১৮ কোটি জনগণকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গলির গুণ্ডাদের মতো শাসাচ্ছেন। বিএনপিকে শায়েস্তা করার হুমকি ও পুলিশকে লেলিয়ে দিচ্ছেন। সরকারের মতো বাংলাদেশের নাগরিকদেরও গোলাম ভাবা শুরু করেছে!
রিজভী আরও বলেন, ইসি আনিছুরের জেনে রাখা উচিত- ‘বাংলাদেশের সংবিধানে ভোট দেওয়াও যেমন মানুষের অধিকার, তেমনি ভোট না দেওয়াও মানুষের মৌলিক অধিকার। ভোট দেওয়ার জন্য কাউকে বাধ্য করা যাবে না।’ কিন্তু প্রতিটি জনপদে নৌকা এবং ডামিরা ভোট দিতে না গেলে জনগণকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে নীরব এই আনিছুররা। ৭ জানুয়ারি যারা ভোটকেন্দ্রে যাবে না তাদের গায়েবি নাশকতার মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। অথচ অবৈধ নির্বাচনকে না বলার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। আপনি বাধা দেওয়ার কে? ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের জোর করে নিয়ে যাওয়া যে অপরাধ তা আপনি জানেন না?
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছর জনগণ ভোট দিতে পারেনি তার কি প্রতিকারে কোন আইন করেছেন ? যারা ১৫ বছর ভোট দিতে দেয়নি তাদেরকে কত বছর জেল দিবেন সেই ঘোষণা জনগণ শুনতে চায়। যারা মৃত মানুষের ভোট দিয়েছে, ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩ ভোট দিয়েছে তাদের কত বছরের জেল দিয়েছেন? আপনাদের নির্দেশের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে জনগণের মৌলিক অধিকারের দাবিতে লিফলেট বিতরণকালে শত শত নেতাকর্মীকে আটক করে নির্যাতন করছে পুলিশ।
বিএনপির এই নেতা বলেন, অনেক জায়গায় লিফলেট নিয়ে পড়ার অপরাধে গ্রেফতার করা হচ্ছে। মানিকগঞ্জে বিএনপির লিফলেট পড়ার কারণে ডলি প্লাজা মার্কেটের এক পোশাক ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে প্রায় এক ঘণ্টা দোকানপাট বন্ধ রাখেন তৈরি পোশাক-ব্যবসায়ীরা। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী, দলদাস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এখন নির্বাচন কমিশন নব্য নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
তিনি ইসির উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনাদের মতো দুই দিনের দলদাসদের রক্তচক্ষু দেখার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। এই একদলীয় ভোট জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। যত ভয়ভীতি-কেরামতি যাই করেন ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার পাবেন না। এই ফলাফল ঘোষণার নির্বাচনের বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশ আজ ঐক্যবদ্ধ।
রিজভী আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের মোট গ্রেপ্তার ১৯৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ৮টি, মোট আসামি ৭৮৫ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট আহত ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী এবং মৃত্যু একজন।
মন্তব্য করুন
আর্কাইভ 
| ০৬ অক্টোবর ২০২৫ 
