বিএনপি জনগণের শক্তির ওপর ভর করেই দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণঅধিকার পরিষদের (নুর) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। এ সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ পর্যায়ে বলেও মন্তব্য করে তিনি।
ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরকে বিএনপি কীভাবে দেখছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কারও ওপর নির্ভর করে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনবে, এমনটা আমরা মনে করি না। বাংলাদেশের জনগণ নিজের শক্তিতে, নিজের পায়ের ওপর ভর করেই ’৭০ সালের পূর্বেও আন্দোলন করেছে, ’৭০-এ আন্দোলন করেছে, ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। পরে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার জন্য আমরা যে আন্দোলন করেছি তা জনগণের শক্তির ওপর ভর করেই করেছি। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা খুব বেশি একটা কথা বলতে চাই না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। বাংলাদেশে একটা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে বর্তমান অবৈধ সরকার, যারা বিনা ম্যান্ডেটে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা বিরোধীদলগুলো দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম করে আসছি। আমরা যুগপৎ আন্দোলন করে আসছি। এর মধ্যে তারা দমনের চরম পর্যায়ে গিয়ে নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় এসেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রথমে ৩১ দফা এবং পরে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে একদফা তুলে ধরেছিলাম। এর মূল কথা ছিল- একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। সেই লক্ষ্যে বিগত কয়েক বছর ধরে যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় আন্দোলন করে আসছি। আজকে তারই ধারবাহিকতায় গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আলোচনা ছিল।
তিনি বলেন, আমরা চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা যায়, কীভাবে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, সেই সঙ্গে কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য আমরা প্রাথমিক আলোচনা করেছি। একটি বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি- সেটা হচ্ছে, যে কোনো পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে তরুণ এবং যুবসমাজ, ছাত্রসমাজ। সেই ক্ষেত্রে আমাদের গণঅধিকার পরিষদে যারা আছেন তারা সবাই তরুণ। বিগত আন্দোলনে তাদের জোরাল ভূমিকা ছিল। আশা করব- আগামীর গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তাদের ভূমিকা অক্ষুণ্ন থাকবে। একই সঙ্গে জনগণকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তারা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবেন।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে ভয়াবহ পর্যায়ে আছে। খাদের কিনারা গেছে, এটা পড়ে যাবে।
গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, আমরা আন্দোলনের অতীতের বিষয়বস্তু পর্যবেক্ষণ করেছি। সেখানে জনগণের সমর্থন ছিল, উপস্থিতি ছিল। কিন্তু সরকার আইন-আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধী দল নির্মূল করার অপচেষ্টা করছে- সেটি নিয়ে আমরা সবাই সতর্ক আছি। এই শাসনের অবসান ঘটিয়ে আগামীর রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে না তোলা পর্যন্ত ৬৩ রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলন চলবে।
অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের নুর ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন, কেন্দ্রীয় নেতা আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, নূরে এরশাদ সিদ্দিকী, হাসান আল মামুন, মাহফুজুর রহমান খান, রবিউল হাসান, তোফাজ্জল হোসেন, খালিদ হাসান ছিলেন।
পরে সেখানে গণতান্ত্রিক বামঐক্যের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকে জোট শরিক সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আবুল কালাম আজাদ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির হারুন আল রশিদ খান, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির ডা. সামছুল আলম ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের হারুন চৌধুরী এবং বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন