বিয়ে মানুষকে শালীন, পবিত্র ও পরিপূর্ণ জীবনযাপনের পথে নিয়ে যায়। মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই বিয়ের বিধান চলে আসছে। ইসলামে বিয়েকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় একটি ইবাদত হিসেবে বলা হয়েছে। যে ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে এবং বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তার জন্য দেরি না করে বিয়ে করা ইমানি দায়িত্ব।
নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘হে যুবসমাজ, তোমাদের মধ্যে যার বিয়ের সামর্থ্য আছে, তার বিয়ে করা উচিত। কেননা বিয়ে চোখকে নিচু রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা যৌবনের খায়েশ কমিয়ে দেয়।’ (বোখারি : ৫০৬৫, মুসলিম : ১৪০০)
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বিয়ে করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো তারিখ, দিন বা মাস ঠিক করে দেওয়া হয়নি; বরং সামর্থ্য হলে দেরি না করে বিয়ে করে নেওয়াই উত্তম।
বিয়ের কথা সামনে এলেই আমাদের সমাজে অনেককে বলতে শোনা যায় যে, ‘বিবাহিত ব্যক্তির নামাজ অবিবাহিত ব্যক্তির চেয়ে ৭০ গুণ উত্তম।’ অনেক ওয়াজ মাহফিলেও কিছু কিছু বক্তা এমনটা বলে থাকেন। তাই প্রশ্ন জাগে, বিবাহিত ব্যক্তির নামাজ অবিবাহিত ব্যক্তির চেয়ে আসলেই কি ৭০ গুণ উত্তম? চলুন তাহলে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আলেমদের বক্তব্য জেনে নিই—
ফুক্বাহায়ে কেরাম বলছেন, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদতের জন্য। আর ইবাদতের শ্রেষ্ঠতম রূপ হলো নামাজ। নামাজ শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘নামাজ হলো দ্বীনের স্তম্ভ।’ অর্থাৎ, নামাজ ছাড়া ধর্মের ভিত্তি গড়ে ওঠে না।
তবে যারা বলেন, ‘বিবাহিত ব্যক্তির ২ রাকাত নামাজ অবিবাহিত ব্যক্তির ৭০ রাকাত নামাজের চেয়েও উত্তম’— তাদের এই কথাটি ভুল। হাদিসে এরকম কোনো বার্তা নেই।
জনপ্রিয় ইসলামি স্কলার মুফতি রেজাউল করীম আবরার বলেন, সমাজে একটি বহুল প্রচলিত কথা আছে যে, ‘কেউ যদি বিবাহিত হয় তবে তার দুই রাকাত নামাজ অবিবাহিত ব্যক্তির সত্তর রাকাত নামাজের চেয়েও উত্তম’— এই কথাটি চরম আপত্তিকর। হাদিসে এর কোনো ভিত্তি নেই। এটি সম্পূর্ণ জাল হাদিস (বিশুদ্ধ নয়)।
তিনি বলেন, ‘হাদিসে বিয়ের অনেক ফজিলতের কথা বলেছেন রাসুল (সা.)। কিন্তু কোনো জিনিসের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে কখনোই কোনো জাল বর্ণনা দিয়ে দলিল দেওয়া যাবে না।’
মুফতি আবরার আরও বলেন, ‘উল্লিখত হাদিসটি সম্পর্কে ইমাম উকাইলি (রাহি.) বলেছেন, এটি আপত্তিকর (জুয়াফা উল কাবির)।’
‘এছাড়া ইমাম ইবনুল জাওজ (কিতাবুল মওজুয়াত), ইমাম তাহের পাটনি (তাজকেরাতুল মওজুয়াত) এবং ইমাম আল্লামা শাওকানিসহ সব উলামায়ে কেরাম (আল ফাওয়াইদুল মজমুয়াত) হাদিসটিকে জাল হাদিস বলে আখ্যায়িত করেছেন। কাজেই বিয়ে করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলেও জাল হাদিস দ্বারা এর ফজিলত ব্যাখ্যা করা যাবে না।’
মন্তব্য করুন