

সন্তান জন্মগ্রহণের পর শুকরিয়াস্বরূপ যে পশু যবাই করা হয়, তাকে আকিকা বলে। আর আকিকা করা মুস্তাহাব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সন্তানের জন্য আকিকা করতে হয়। সুতরাং তোমরা তার (সন্তান) পক্ষ থেকে জবাই করো এবং এবং তার অশুচি (চুল, নখ ইত্যাদি) দূর করে দাও। (বোখারি : ২/৮২২)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, যার সন্তান ভূমিষ্ট হয় সে যদি শিশুটির পক্ষ থেকে আকিকা করা পছন্দ করে, তাহলে যেন তাই করে। (সুনানে নাসায়ি : ২/১৬৭)
আকিকা কখন করবেন?
জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১ তম দিনে করা ভালো। কেননা হাদিস শরিফে এই তিন দিনের উল্লেখ আছে। এ তিন দিনেও করা না হলে পরে যে কোনো দিন আকিকা করা যেতে পারে।
হজরত আমর ইবনে শুআইব-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবজাতকের সপ্তম দিনে আকিকা করা, নাম রাখা ও তার জঞ্জাল দূর করার (অর্থাৎ মাথার চুল কাটা) নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা : ১২/৩২৬)
হজরত বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আকিকার পশু সপ্তম বা চৌদ্দতম বা একুশতম দিনে যবাই করা হবে। (আলমুজামুল আওসাত : ৫/৪৫৭)
আকিকায় কয়টি পশু জবাই করবেন?
আকিকার ক্ষেত্রে পুত্রসন্তান হলে দুটি আর কন্যাসন্তান হলে একটি ছাগল/ভেড়া/দুম্বা জবাই করা উত্তম। তবে পুত্রসন্তানের ক্ষেত্রে একটি জবাই করলেও আকিকার হক আদায় হয়ে যাবে। এ ছাড়া উট, মহিষ, গরু ইত্যাদি দ্বারাও আকিকা করা যায়।
হজরত উম্মে কুরজ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, পুত্রসন্তানের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর কন্যাসন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল জবাই করবে। (জামে তিরমিজি : ১/১৮৩)
হজরত ইবনে আববাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর পক্ষ থেকে একটি একটি ভেড়া আকিকা করেছেন। (আবু দাউদ : ২/৩৯২)
আকিকা না দিলে কি সন্তানের ওপর বিপদ-আপদ লেগে থাকে?
আকিকার ক্ষেত্রে অনেকেই বলে থাকেন যে, কেউ যদি সন্তানের আকিকা না দেন তাহলে সন্তানের ক্ষতি হয়। বিশেষ করে সন্তানের ওপর বিপদ-আপদ লেগেই থাকে। আসলেই কি এমন হয়? শরিয়তে এই কথার কোনো ভিত্তি আছে?
এ বিষয়ে ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ তার ইউটিউব আলোচনায় বলেন, ‘‘আকিকা না দিলে শিশুর বিপদ কাটে না— এমন কথা কোরআন-হাদিসের কোথাও নাই। হাঁ, ‘বিভিন্ন হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, বাচ্চা আকিকার ওপরে অনেকটা নির্ভর থাকে।’
এই হাদিসের ব্যাখায় মুহাদ্দিসিনে কেরাম বলেন, আকিকা দিলে শিশুরা শয়তানের ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকে। কিন্তু আকিকা না দিলে এই ক্ষতি তাকে স্পর্শ করার সম্ভাবনা থাকে। হ্যাঁ কেউ যদি সামর্থ্য না থাকায় আকিকা না দিয়ে সন্তানের ভালোর জন্য অন্য কোনো আমল করেন, তাহলেও আল্লাহ তায়ালা তাকে নিরাপদ রাখতে পারেন। তাই আকিকা না দিলে সন্তানের বিপদ কাটে না, এই কথা বলা যাবে না।’
আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড ‘আল-লাজনাতুদ্দায়িমাহ লিল-ইফতার বক্তব্য হলো, ‘‘যদি বাস্তবেই আপনি গরিব হন, তাহলে আপনার জন্য আপনার সন্তানদের পক্ষ থেকে আকিকা না করাতে কোনো অসুবিধা নেই। সন্তানদের কোনো ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ। কেননা, আল্লাহ বলেছেন, لا يكلف الله نفساً إلا وسعها ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না।’ তবে যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজের নির্দেশ দিই, তখন সাধ্যানুপাতে তা করবে; আর যখন কোনো কোনো বিষয়ে নিষেধ করি, তখন তা থেকে বেঁচে থাকবে।’ সুতরাং যখন আপনার অবস্থা ভালো হবে তখন আকিকা করে নেবেন।’’ (ফতোয়া লাজনাতুদ্দায়িমাহ : ১১/৪৩৬,৪৩৭)
অতএব, অভিভাবকের উচিত, সন্তানের পক্ষ থেকে আকিকা দেওয়ার দৃঢ় নিয়ত করা এবং চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি এই আশা রাখতে হবে যে, আল্লাহ তায়ালা যেহেতু সন্তান দিয়েছেন, চাইলে তিনি আর্থিক সংকটও দূর করে সন্তানের আকিকার ব্যবস্থা করে দেবেন।
মন্তব্য করুন