ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আশার বার্তা দিতে পারল না চীন
গত মাসেই দুই বছর পেরিয়ে তিন বছরে গড়িয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ। এত দিন পার হলেও এই যুদ্ধ শেষের দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে শান্তি আলোচনায় মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মতপার্থক্য রয়ে গেছে বলেই জানালেন ইউক্রেনের নিযুক্ত চীনের বিশেষ দূত লি হুই। খবর আলজাজিরার। ইউরোপের এই সংকট সমাধানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখে আসার চেষ্টা করছে চীন। ইতিমধ্যে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে ১২ দফার একটি প্রস্তাব দিয়েছে বেইজিং। পাশাপাশি দুপক্ষের সঙ্গে অনেকবার আলোচনা করেছে তারা। তবে এই যুদ্ধে চীন নিজেদের নিরপেক্ষ দাবি করলেও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করায় পশ্চিমাদের সমালোচনায় পড়েছে দেশটি। এমনকি ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরু করার পরও মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে বেইজিং। সবশেষ ইউরোপ সফর শেষে বেইজিংয়ে গণমাধ্যম ও কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে লি বলেন, সংকট সমাধানে কিয়েভ ও মস্কো এখানো অনেক দূরে আছে। তবে দুপক্ষই এটা স্বীকার করে যে আলোচনাই এই সংকট সমাধানের সেরা উপায়। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত তারা সবাই একমত হয়েছে যে এই যুদ্ধ বন্দুকের পরিবর্তে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আবার সব পক্ষই বর্তমান পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি বিষয়টির কথাও মানে। পরিস্থিতি শান্ত করতে তারা সবাই চীনা আহ্বানের সঙ্গে একমত। এই সংকটে চীন আরও গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে বলেই তাদের প্রত্যাশা।
২২ মার্চ, ২০২৪

যেভাবে শেষ হতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধ
ইউক্রেনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সার্বিকভাবে সাহায্য করলেও এখনো রাশিয়াকে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করা যায়নি। বরং ইউক্রেনের আরও অনেক এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে। রাশিয়ার এ অভিযানের দুই বছর পূর্ণ হবে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি। এর ঠিক কয়েকদিন আগে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্কের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত আভদিভকার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে মস্কো কি ধীরে ধীরে তার লক্ষের দিকে এগুচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ যুদ্ধ সহজে শেষ হচ্ছে না। দীর্ঘ যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে এটি। তবে যে কোনো যুদ্ধের মতো এটিও এক দিন শেষ হবে। তাদের মতে চার উপায়ে এ যুদ্ধ শেষ হতে পারে। গ্রন্থনা : ওয়াহেদুজ্জামান সরকার দীর্ঘ যুদ্ধে পরিণত রাশিয়ার কাছে সর্বশেষ ইউক্রেনের আভদিভকা শহরের পতনের পর এ যুদ্ধ আরও দীর্ঘ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে নিয়েছে যে, ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহের গতি ধীর হয়ে যাওয়ায় ময়দানে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে কিয়েভ, যার কারণে আভদিভকা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে রাশিয়া। এ অবস্থায় ইউক্রেনকে ছয় হাজার কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পশ্চিমা দেশগুলোও হয়তো ইউক্রেনকে অস্ত্র-গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করবে। হয়তো এমনটা চলবে বেশ কয়েক বছর ধরে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সহযোগিতার কারণে ইউক্রেন আবার চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থায় হয়তো রুশ বাহিনী তাদের নেতৃত্বের অদক্ষতা, যুদ্ধের সরঞ্জাম আনা-নেওয়ার সমস্যা, নিম্ন মনোবল—এরকম নানা কারণে কিছুটা দমে যেতে পারে। এমনও হতে পারে যে ইউক্রেনিয়ানদের কড়া প্রতিরোধের কারণে রুশদের পক্ষে কিয়েভের মতো শহরগুলো দখল করতে বেশি সময় লেগে যেতে পারে। এর ফলে যেটা হতে পারে তা হলো—দীর্ঘ সময় ধরে শহরগুলো ঘেরাও হয়ে থাকা। ১৯৯০-এর দশকে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রজনি শহর দখলের জন্য রাশিয়ার দীর্ঘ ও রক্তাক্ত যুদ্ধে শহরটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। ইউক্রেনেও হয়তো তেমন কিছু হতে পারে। তা ছাড়া রাশিয়ার বাহিনী যদি ইউক্রেনের শহরগুলোতে কিছু উপস্থিতি অর্জন করতে সক্ষম হয়ও, তাহলেও তাদের হয়তো এসব শহরের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হিমশিম খেতে হবে। হয়তো এমনও হতে পারে যে, ইউক্রেনের মতো একটি বড় দেশকে কবজায় রাখার মতো যথেষ্ট সংখ্যক সৈন্য রাশিয়া পাঠাতে পারল না। তখন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী কার্যত একটি বিদ্রোহী বাহিনীতে পরিণত হবে—তাদের মনোবল থাকবে চাঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীও তাদের সাহায্য করবে। এভাবে চলতে পারে কয়েক বছর। তারপর এক সময় মস্কোতে কোনো নতুন নেতৃত্ব আসবে এবং শেষ পর্যন্ত রুশ সৈন্যরা ইউক্রেন ত্যাগ করবে—ঠিক যেমনটা আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে হয়েছিল। ইউরোপজুড়ে যুদ্ধ এমনটাও হতে পারে যে, এ যুদ্ধ ইউক্রেনের সীমান্ত পার হয়ে বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো রাশিয়ার সাবেক সোভিয়েত সাম্রাজ্যের আরও কিছু অংশ পুনর্দখল করার চেষ্টা করতে পারেন। তিনি হয়তো মলদোভা এবং জর্জিয়ায় রুশ সৈন্য পাঠাতে পারেন, যারা ন্যাটোর অংশ নয়। অথবা নিতান্তই ভুল হিসাব-নিকাশের কারণেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রেসিডেন্ট পুতিন হয়তো ভাবতে পারেন যে, পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করছে, এটা এক ধরনের আগ্রাসন এবং এর পাল্টা জবাব দিতে হবে। ফলে তিনি হয়তো লিথুয়ানিয়ার মতো বাল্টিক দেশগুলোতে যারা ন্যাটো জোটের সদস্য, সেসব দেশে সৈন্য পাঠানোর হুমকি দিতে পারেন। এর আরও একটা লক্ষ্য হতে পারে, রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ ছিটমহলের সঙ্গে একটা স্থল করিডোর প্রতিষ্ঠা করা। তবে এর পরিণতি হতে পারে অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং তার ফলে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। ন্যাটো সামরিক জোটের সনদের ৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, এই জোটের সদস্য যে কোনো একটি দেশের ওপর আক্রমণের মানে হচ্ছে সবার ওপর আক্রমণ। কিন্তু পুতিন হয়তো এ ঝুঁকিও নিয়ে ফেলতে পারেন—যদি তার মনে হয় যে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এটাই তার একমাত্র উপায়। যদি এমন হয় যে, ইউক্রেনে তিনি পরাজয়ের সম্মুখীন, তাহলে তিনি উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারেন। পুতিন তার পারমাণবিক অস্ত্রকে উচ্চতর সতর্কাবস্থায় রাখার আদেশ দিয়েছেন। বেশিরভাগ বিশ্লেষকই অবশ্য একমত এর অর্থ এই নয় যে তিনি এ অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু এটা মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, রাশিয়ার নীতিতে এখন কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে। কূটনৈতিক সমাধান যুদ্ধ বন্ধে এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা না গেলেও এ রাস্তা যে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে সেটাও নয়। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেছেন, এখন অস্ত্রের ভাষায় কথা হচ্ছে ঠিকই; কিন্তু আলোচনার পথ সবসময়ই খোলা রাখতে হবে। বিস্ময়কর হলেও এটা সত্য যে, রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা বেলারুস সীমান্তে বৈঠকও করেন। এতে হয়তো তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি, কিন্তু বৈঠকের প্রস্তাবে পুতিনের রাজি হওয়ায় এটা বোঝা যায় যে, তিনি আলোচনার মাধ্যমে একটা যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেননি। কূটনীতিকরা বলছেন, রুশ নেতার এটা বোঝা দরকার যে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলতে হলে তাকে বিনিময়ে কী করতে হবে, যাতে একটা মুখ-রক্ষা করার মতো চুক্তি করা যায়। যুদ্ধের ময়দানে হঠাৎ করে রাশিয়ার অবস্থা প্রতিকূল হয়ে পড়তে পারে, যা পুতিনকে বিচলিত করে তুলতে পারে। তিনি হয়তো ভাবতে শুরু করলেন যে, পরিস্থিতি এখন সামাল দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। তিনি ভাবতে পারেন যে, এই যুদ্ধ থামালে তা যতটুকু অপমানজনক হবে, তার চেয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াটা তার নেতৃত্বের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর হবে। তখন পুতিনকে এই সংকট থেকে বেরুনোর রাস্তা খুঁজতে হবে। যুদ্ধে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির কারণে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষও মনে করল যে, রাজনৈতিক আপস রফা করাটাই হবে উত্তম বিকল্প। তখন কূটনীতিকরা মাঠে নেমে একটা চুক্তি তৈরি করলেন। ধরা যাক; এমন হলো যে, ইউক্রেন ক্রিমিয়া ও দনবাসের কিছু অংশের ওপর রুশ সার্বভৌমত্ব মেনে নিল, বিনিময়ে পুতিন ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির অধিকারকে মেনে নিলেন। এখন হয়তো এটা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না; কিন্তু এই রক্তাক্ত সংঘাত থেকে এমন একটা সমাধান বেরিয়ে আসা অসম্ভব কিছু নয়। পুতিন ক্ষমতাচ্যুত ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন অভিযান শুরু করার সময় বলেছিলেন, ‘আমরা যে কোনো পরিণতির জন্য তৈরি।’ কিন্তু সে পরিণতি যদি এই হয় যে, পুতিনকেই ক্ষমতা হারাতে হলো? এখন হয়তো মনে হচ্ছে যে, ব্যাপারটা অচিন্তনীয়। কিন্তু এখন দুনিয়া বদলে গেছে, এরকম একটা সম্ভাবনার কথাও ভাবা হচ্ছে। লন্ডনের কিংস কলেজের ওয়ার স্টাডিজের অধ্যাপক স্যার লরেন্স ফ্রিডম্যান এক নিবন্ধে লিখেন, ‘এটা এখন খুবই সম্ভব যে কিয়েভ এবং মস্কো—যে কোনোখানেই ক্ষমতার পটপরিবর্তন হতে পারে।’ এ কথা বলার কারণ সম্ভবত এটাই যে পুতিন এক বিপর্যয়কর যুদ্ধে নেমেছেন। এতে হাজার হাজার রুশ সৈন্য মারা যেতে পারে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ডেকে আনতে পারে দুর্ভোগ। পুতিন জনসমর্থন হারাতে পারেন। হয়তো একটা গণবিপ্লবের হুমকিও সৃষ্টি হতে পারে। তিনি হয়তো বিরোধীদের দমনের জন্য রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু এটা তিক্ততা সৃষ্টি করতে পারে এবং রাশিয়ার সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এলিট শ্রেণি পুতিনের বিপক্ষে চলে যেতে পারে। পশ্চিমা বিশ্ব এটা স্পষ্ট করে দিতে পারে যে, যদি পুতিন বিদায় নেন এবং তার জায়গায় একজন অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থি নেতা আসেন, তাহলে রাশিয়ার ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে, স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্কও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে। হয়তো রাশিয়ায় একটা রক্তাক্ত প্রাসাদ অভ্যুত্থান ঘটে যেতে পারে। পুতিন উৎখাত হতে পারেন। এমন কিছু যে ঘটবে তা জোর দিয়ে বলা যায় না। কিন্তু পুতিনের কারণে যারা লাভবান হয়েছেন তারাই যদি মনে করেন যে, তিনি আর তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারছেন না, তাহলে সেরকম কিছু ঘটে যেতেই পারে।
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

রাশিয়ার ৩ বোমারু বিমান ভূপাতিত করার দাবি ইউক্রেনের
রাশিয়ার তিনটি বোমারু বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা এমন দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইউক্রেনের এমন দাবির বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি রুশ সামরিক বাহিনী। তবে রুশ যুদ্ধবিষয়ক ব্লগাররা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ব্যবহার করে এসব বোমারু বিমান ভূপাতিত করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। স্বাধীনভাবে এসব দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স। মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে এক পোস্টে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনীর কমান্ডার মাইকোলা ওলেশচুক বলেছেন, গতকাল শুক্রবার দুপুরে দক্ষিণ ফ্রন্টে তিনটি রাশিয়ান এসইউ-৩৪ বোমারু বিমান ভূপাতিত করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই ঘটনাকে বেশ পরিকল্পিত অভিযান বলে উল্লেখ করেছেন দেশটির বিমানবাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহানাত। নিয়মিত নৈশকালীন ভিডিও বক্তব্যে খেরসন অঞ্চলে এসব রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিত করায় ওডেসা অঞ্চলের বিমান বিধ্বংসী ইউনিটের প্রশংসা করেছেন জেলেনস্কি। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলার প্রথম দিনে খেরসন অঞ্চল দখল করে নেয় রাশিয়া। এরপর এই অঞ্চল পুনর্দখলের চেষ্টা করছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এই উদ্দেশ্যে গত নভেম্বরে খেরসনের ডিনিপ্রো নদীর পূর্ব তীরে অবস্থান নেয় জেলেনস্কি বাহিনী। রাশিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইউরেশিয়া ডেইলি জানিয়েছে, ইউক্রেনের দাবি বেশ প্রশংসনীয়। ডিনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীর থেকে কিয়েভ মার্কিন প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে থাকতে পারে।
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

ইউক্রেন যুদ্ধ শেষের সময় জানালেন রমজান কাদিরভ
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রায় দুই বছর ধরে চলছে। এই যুদ্ধ শেষের দৃশ্যমান কোনো নিদর্শন এখনো নেই। তবে এবার এই যুদ্ধ শেষের সম্ভাব্য সময় জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ। তিনি বলেছেন, আগামী বছরের বসন্ত বা গ্রীষ্মের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। গতকাল বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি। ইউক্রেন যুদ্ধে চেচনিয়ার সেনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাশিয়ার দক্ষিণের এই প্রজাতন্ত্রের প্রধান রমজান কাদিরভ যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রগতির প্রতি গভীর মনোযোগ রেখে চলেছেন। তিনি বলেন, জনশক্তি, অস্ত্র ও অর্থ অভাবে আগামী জুন বা জুলাইয়ের মধ্যে কিয়েভের সামরিক সক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যাবে। রমজান কাদিরভ বলেন, রাশিয়া চাইলে এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যেভাবে হামলা চালাচ্ছে সেভাবে হামলা করলে তিন মাসের মধ্যে ইউক্রেনকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে পারত। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের অবকাঠামো ও শহরগুলো যতটা সম্ভব অক্ষত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তা না হলে আমরা কিয়েভ দখল করে নিতাম। আমরা কিয়েভ থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দূরে ছিলাম। কিন্তু ইউক্রেনকে রাষ্ট্র হিসেবে ধ্বংস করার কোনো ইচ্ছে প্রেসিডেন্টের নেই। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। সেগুলো অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়েভের সঙ্গে কোনো শান্তি চুক্তি হবে না। তিনি বলেন, ইউক্রেনে বর্তমানে প্রায় ৬ লাখ ১৭ হাজার রুশ সেনা রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৪৪ হাজার মানুষকে রুশ পেশাদার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার জন্য ডাকা হয়েছিল। তবে বর্তমানে ইউক্রেনে আর রিজার্ভ সেনা পাঠানোর প্রয়োজন নেই।
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩

ইউক্রেন যুদ্ধ : বদলে গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি
রাশিয়ার আগ্রাসনে বদলে গেছে বিশ্বের সমীকরণ। নানাভাবে হিসেব কষছে শত্রু ও মিত্র দেশগুলো। ফলে নানা ক্ষেত্রে নানা প্রতিষ্ঠানও নিজেদের নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। একইভাবে বদলে গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ‘ইইউ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখান থেকে পেছনে ফেরার আর কোনো সুযোগ নেই। আমরা আমাদের পেছনের আলো নিভিয়ে দিয়েছি। ফলে আমাদের এখন একটি মাত্র পথই খোলা আছে।’ নিজেদের পরিবর্তন সম্পর্কে এভাবেই বলছিলেন ড্যানিশ রাজনীতিবীদ ও ইইউ কমিশনার মার্গারেট ভেস্টাগার। মূলত প্রতিষ্ঠানটি ইউক্রেন যুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্লক নিরাপত্তা ও জ্বালানির নীতিতে বড়দাগে পরিবর্তন এনেছে। গত মে মাসে এক সম্মেলনে ভেস্টাগার বলেন, ইউক্রেনে আগ্রাসনের ব্যাপারে আমরা সাথে সাথেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। তবে বর্তমানে আমরা সেই অবস্থায় নেই। যদিও ইউক্রেন বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত ইউরোপে আমাদের অন্যতম প্রাধান্য দেশটি। তারা যুদ্ধে জয়ী ও ইইউ সদস্য না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের সমর্থন দিয়ে যাবো।   ইইউ কমিশনারের এমন বক্তব্যের মাধ্যমেই স্পষ্টত যে প্রতিষ্ঠানটি তাদের নীতিতে বেশকিছু পরিবর্তন এনেছে। এসব পরিবর্তনের অন্যতম দিক হলো জ্বালানি ও নিরাপত্তা ব্লকের নিরাপত্তানীতিতে পরিবর্তন। বিকল্প জ্বালানির উৎসের খোঁজ   রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের ফলে দেশটির ওপর ইউরোপের জ্বালানি নির্ভরতার মাত্রা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷  ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে গিয়ে জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোকে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের বিকল্প উৎসের সন্ধান করতে হচ্ছে৷ কেননা এ আগ্রাসনের সময়ে জ্বালানি শক্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশকে ব্লাকমেইল করছে রাশিয়া। ইউরোপ তার চাহিদার ৪৫ শতাংশ গ্যাস দেশটি থেকে নিয়ে থাকে। ফলে একক দেশটির উপর নির্ভরতাকে বোকামি হিসেবে উল্লেখ করছে জার্মানি। অন্যদিকে রাশিয়া বলছে, তাদের উপর নির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত আত্নঘাতী।  যুদ্ধে রাশিয়া তেল গ্যাস সরবরাহকে অস্ত্র  হিসেবে ব্যবহার করছে বলে দাবি ইইউর। কেননা ২০২২ সালের জুনের পরে রাশিয়া থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে ৭৪৫ কিলোমিটারব্যাপী নর্ডস্ট্রিম-১ পাইপলাইনে কারিগরি ত্রুটির অভিযোগ করছে। এতে লাইনটিতে সরবরাহ ২০ শতাংশে নেমেসস এসেছিল। স্বাভাবিক অব্স্থায় এ লাইনটি দিয়ে ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ফলে ইইউ বিকল্প সোর্স থেকে ৫০ শতাংশ জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা নেয়। এজন্য তারা নরওয়ে থেকে নাইজেরিয়া একটি বিকল্প পাইপলাইন গড়ে তুলেছে। রাশিয়ার এমন সুবিধানীতির কারণে ইইউ ডিসেম্বর থেকে ক্রুড অয়েল ও ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিজেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।  জার্মানি ফ্রান্স নীতি জ্বালানির পর ইইউয়ের জার্মান ফ্রান্স অক্ষ প্রতিরক্ষা রাজনীতিতেও বড় পরিবর্তন এনেছে। কেননা জোটটির এ অক্ষ ইউক্রেনে আগ্রাসন ও ইউরোপীয়দের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে। জ্যাকিস ডেলরস ইনিস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট সিকোল গুনেসত্য বলেন, যুদ্ধে ইউরোপীয়দের মধ্যে জার্মানির চেয়ে বেশি কেউ আক্রান্ত হয়নি। ফলে দেশটির এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় শান্তিবাদ ও বাণিজ্যের পরিস্থিতি মেকাবলোয় গবীর বিপ্লবের প্রয়োজন। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎজ। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন হলো, ইউক্রেনকে সাহায্য করে যাওয়া। যতদিন দরকার আমরা সেটাই করে যাব। তার সাহায্যেরে এ নজির বাস্তবেও রয়েছে। তবে তিনি আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়া কোনো ধরণের অস্ত্র সহায়তা দেননি। দেশটি জার্মানি থেকে পাওয়া লেপার্ড ট্যাঙ্ক ক্রুজ মিসাইলসহ যা পেয়েছে তার সবটা যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতে। এছাড়া নেদারল্যান্ড ডেনমার্কও মার্কিন অনুমোদনের ভিত্তিতে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সহায়তা দিচ্ছে।  ইউক্রেনেকে সহায়ততার ব্যাপারে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বলেছেন, আমরা ইউক্রেনকে যথাসম্ভব সাহায্য করব। আমরা ইউক্রনকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক গাড়ি দিয়ে সাহায্য করছি। আগামী দিন ও সপ্তাহেও সেই সাহায্য করে যাব। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের এই পাল্টা আঘাত হানা আগামী বেশ কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস চালু থাকবে। আমরা ইউক্রেনের পাশে থাকব। তারা যাতে আরো এলাকা নিজেদের অধীনে নিয়ে আসতে পারে। ব্লক নিরাপত্তা  ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের ব্লকের নিরাপত্তায় বেশকিছু ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ইইউ জোটের সামরিক বিভাগের সাবেক প্রধান ভি-অ্যাডম হার্ভে ব্লেজেন আগ্রাসনের পর ৩৬ ঘন্টার মধ্যে সামরিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশটি আগে অর্থনৈতিক সহায়তা দিলেও এখন যুদ্ধের জন্য প্রাণঘাতী সরঞ্জামেও সহায়তা দিচ্ছে।  জোটটি ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে ২০২২ সালে ১২ বিলিয়ন ইউরো বেসামরিক সহায়তা এবং ২০২৩ সালে ১৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি সহায়তা দিয়েছে। এমনকি জোট ২০২৭ সাল পর্যন্ত ৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া ইইউ সম্প্রতি ইউক্রেনকে এক মিলিয়ন ইউরো মূল্যে দুটি টি-৭২ ট্যাংক দিয়েছে। এমনকি তারা আরও ৫ বিলিয়ন ইউরো সহায়তারও ঘোষণা দিয়েছে।  রাশিয়ায় ইইউর নিষেধাজ্ঞা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর অন্তত ১০বার দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ সময়ে মূলত রাশিয়া থেকে আমদানি ও রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।  ফলে সরাসরি সদস্যভুক্ত দেশে  রাশিয়ার পণ্য সরাসির পৌঁছাতে পারে না।   ইইউর বর্তমান নিষেধাজ্ঞা অনুসারে, রাশিয়াকে কোনো প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে পারবে না জোটভুক্ত দেশগুলো। এর ফলে দেশটিতে সেমি কন্ডাকটর, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল জিনিস পাঠানো যায় না। এছাড়া  ড্রোন, এনক্রিপশন টুলসও সেখানো পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
০১ জানুয়ারি, ১৯৭০

জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শুরু / এবার প্রাধান্য পাবে জলবায়ু ও ইউক্রেন যুদ্ধ
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তনকে মারাত্মক হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার শুরু হওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে এ আহ্বান জানান। এবারের অধিবেশনে জলবায়ু ও ইউক্রেন যুদ্ধ প্রাধান্য পেতে যাচ্ছে। তবে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের ওপর। অধিবেশনে ১৪০টির বেশি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। খবর আলজাজিরার। অধিবেশনের শুরুতে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একের পর এক নতুন রেকর্ড হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি আমাদের এ গ্রহকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। আমাদের একযোগে এ হুমকি মোকাবিলা করতে হবে। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এবার সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আস্থা ফেরানো ও বৈশ্বিক সংহতি পুনরুজ্জীবন: সবার শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও স্থিতির জন্য ২০৩০ সালের অ্যাজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যকে ত্বরান্বিত করা’। এ ছাড়া অধিবেশনের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ‘অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে’ মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন ও সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার আয়োজন করে থাকে। দিকনির্দেশনা-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণে প্রস্তাব ও ঘোষণা পাসের ক্ষমতা রাখে সংস্থাটি। জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, বর্তমানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আলোচনায় উঠছে না এমন আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো মোকাবিলার দায়িত্বও রয়েছে সাধারণ পরিষদের। সাধারণ পরিষদ জাতিসংঘের বিস্তৃত বার্ষিক বাজেট অনুমোদন করে এবং এর ছয়টি মূল কমিটির একটি বিশ্বজুড়ে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের তহবিলের বিষয়টি সরাসরি দেখভাল করে থাকে। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নেতারা অংশগ্রহণ করে থাকেন। ফলে এতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। গত বছরের আলোচনায় করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছিল। এ বছরের অধিবেশনেও ঘুরেফিরে এসব বিষয়ই প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বেশি জোর দেওয়া হবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের ওপর। আগস্টে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত থমাস গ্রিনফিল্ড সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশ প্রতিবেশী ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারে রাশিয়ার ওপর ‘তীব্র চাপ’ প্রয়োগ করবে বলে তিনি আশা করছেন। চীনকে ঘিরে উদ্বেগ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়া এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোও আলোচনায় স্থান পেতে পারে। বিশেষ করে কিছু পর্যবেক্ষক জাতিসংঘে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আফ্রিকার সাম্প্রতিক সামরিক অভ্যুত্থানগুলো বিশেষ করে নাইজারের বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি সুদান ও ইথিওপিয়ার সংঘাত নিয়েও আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানসহ ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মানবিক সংকটের বিষয়ও আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে।
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মেদভেদেভ বলেন / ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত
রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সংস্থা রাশিয়ান সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ মূলত রাশিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই। এ কারণে ইউক্রেনে যতদিন নিষ্ঠুর শক্তি ক্ষমতাসীন থাকবে, ততদিন এই যুদ্ধ চলবে। তাই এই যুদ্ধ বছরের পর বছর, এমনকি কয়েক দশক পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে। খবর আরটি। স্থানীয় সময় গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে মেদভেদেভ বলেন, রাশিয়ার অস্তিত্বের সঙ্গে এই যুদ্ধ সরাসরি সম্পর্কিত। আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই। যদি আমরা তাদের ষড়যন্ত্র ও নিষ্ঠুর পরিকল্পনা ধ্বংস করতে না পারি, তাহলে পশ্চিমারা ঐক্যবদ্ধভাবে রাশিয়াকে টুকরো টুকরো করবে। পশ্চিমা দেশগুলোর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, আমাদের ধ্বংস করা। আমরা কোনোভাবেই তাদের এই নিষ্ঠুর পরিকল্পনা সফল হতে দিতে পারি না। এ কারণে যতদিন ইউক্রেনের বর্তমান সরকার (সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক) ক্ষমতায় থাকবে ততদিন এই লড়াই চলবে। কৃষ্ণসাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে প্রতিশ্রুত সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দেওয়া এবং উপদ্বীপটি ফের নিজেদের দখলে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটো সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা-তদবিরের অভিযোগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী।
২১ আগস্ট, ২০২৩

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সৌদির শান্তি সম্মেলন শুরু
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি নীতিগত ‍সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সৌদি আরবের জেদ্দায় একটি শান্তি সম্মেলন শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার (৫ আগস্ট) জেদ্দায় এ সম্মেলন শুরু হয় বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। দুদিনের এই সম্মেলনে চীন, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, মেক্সিকো, চিলি, জাম্বিয়াসহ ৪০টি দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে এতে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। গত শুক্রবার সম্মেলনে যোগদান করবে এমন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এসব দেশের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে খাদ্য সংকটে পড়া বিভিন্ন দেশও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নিরাপত্তা ইস্যুতে। আফ্রিকা, এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ভর করছে এই শান্তি ফর্মুলা কত দ্রুত বাস্তবায়ন হচ্ছে তার ওপর।’ আরও পড়ুন : রাশিয়াকে ছাড়াই শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করছে সৌদি এক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলছে, এ সম্মেলনের সবচেয়ে বড় সাফল্য রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের যোগদান। যদিও গত জুনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন সম্মেলনে দেশটি যোগদানে বিরত ছিল। ইউক্রেন ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা প্রত্যাশা করছেন, রাশিয়া না থাকায় শান্তি প্রক্রিয়ায় ইউক্রেনের অনুকূলে আন্তর্জাতিক সমর্থন মিলবে। গত বুধবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, তিনি আশা করছেন সৌদির এই উদ্যোগ একটি শীর্ষ শান্তি সম্মেলনে পরিণত হবে। বিশ্ব নেতারা ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য নীতিমালা গ্রহণ করবে। আর এটা হবে তারই দেওয়া ১০ দফার ওপর ভিত্তি করে। গত বছর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের ছয় ভাগের এক ভাগ দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, নতুন বাস্তবতা কিয়েভ মেনে নিলেই শান্তি আলোচনা সম্ভব। তবে কিয়েভ বলছে, ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করার পরই তারা আলোচনার টেবিলে বসবে। সৌদির শান্তি সম্মেলন নিয়ে চলতি সপ্তাহের শুরুতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, এই সম্মেলনে কী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় এবং কোন কোন বিষয়ে আলোচনা হবে, তা আগে রাশিয়াকে বুঝতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ইতিবাচক মূল্যায়ন প্রয়োজন।
০৬ আগস্ট, ২০২৩

এবার ইউক্রেন যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে রাশিয়ায়
১৭ মাসে গড়ানো ভয়াবহ ইউক্রেন যুদ্ধ এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল কিয়েভের মাটিতেই। কিন্তু পাল্টা হামলার মাধ্যমে যুদ্ধটা এখন রাশিয়ায় ঢুকছে বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রোববার (৩০ জুলাই) পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক থেকে একটি ভিডিও বার্তায় এ দাবি করেন তিনি। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।  আরও পড়ুন : সুইডেনের সাঁজোয়া যান ধরে ফেলল রুশ বাহিনী ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধ এখন রাশিয়ায় ঢুকছে। দুই দেশের মধ্যে চলমান এ যুদ্ধে রুশ সীমান্তে হামলা ছিল অবশ্যম্ভাবী। এটি স্বাভাবিক ও ন্যায়সংগত। ইউক্রেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। আজ কথিত বিশেষ সামরিক অভিযানের ৫২২তম দিন। অথচ মস্কো ভেবেছিল, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটা শেষ হয়ে যাবে।  আরও পড়ুন : আফ্রিকার ৬ দেশে বিনামূল্যে গম দেবেন পুতিন এদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল রোববার ইউক্রেনের তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে তারা। দুটি ড্রোন অফিস ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে। এ হামলার কারণে মস্কোর কেন্দ্রস্থল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের ভনুকোভো বিমানবন্দর ঘণ্টাখানেকের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এদিন ভোরের দিকের ওই হামলার আগেও বেশ কয়েক দফায় রাশিয়ার ভেতরে হামলা হয়েছে। মস্কো সেসব হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করলেও তারা দায় স্বীকার করেনি।  আরও পড়ুন : লেবাননে ফিলিস্তিনি শিবিরে সংঘর্ষ, ফাতাহ কমান্ডারসহ নিহত ৬ এর আগে, যুদ্ধ বন্ধে আফ্রিকান নেতারা যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তা শান্তির ভিত্তি হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে কিয়েভের হামলার জেরে ওই উদ্যোগ বাস্তায়ন কঠিন হবে বলেও জানান তিনি। সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলনের পর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধ বন্ধে বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছেন আফ্রিকান নেতারা। এর মধ্যে রয়েছে- ইউক্রেনীয় ভূমি থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহার, বেলারুশ থেকে রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র অপসারণ, পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-আইসিসি’র গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করা এবং মস্কোর ওপর আরোপ করা সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার। এই বিষয়গুলো ছাড়া প্রস্তাবের বাকি অংশ প্রকাশ করা হয়নি। দুই দিনের রাশিয়া-আফ্রিকা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন গেল শুক্রবার সেন্ট পিটার্সবার্গে আফ্রিকান নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পুতিন। সেসময় আফ্রিকান নেতারা তাদের এই পরিকল্পনা নিয়ে মস্কোকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান।  এদিকে ইউক্রেন এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতির পক্ষে নয়, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার যুক্তি- এখন যুদ্ধবিরতির মানে দেশের প্রায় একপঞ্চমাংশের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়া এবং রুশ বাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত হতে সময় দেওয়া।  
৩১ জুলাই, ২০২৩

কৃষ্ণ সাগরে জাহাজ ঢুকলেই হামলার ইঙ্গিত
কৃষ্ণ সাগরের শস্যবাহী যেকোনো জাহাজ গেলেই হামলার ইঙ্গিত দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গে শস্যচুক্তি বাতিলের পর দেশটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।   বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কৃষ্ণ সাগরে চলাচলকারী জাহাজের জন্য নতুন এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।  এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার কিছু এলাকা নিরাপদ নয়। বৃহস্পতিবার থেকে ইউক্রেনের বন্দরগামী জাহাজগুলোকে অস্ত্রবাহী জাহাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। তাই তাদের জন্য সামরিক হুমকি রয়েছে।  রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোনো জাহাজ ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধরে নেওয়া হবে তারা ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভের পক্ষ নিয়েছে এবং সেটি অস্ত্র বহন করছে।  দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার কিছু অঞ্চল সাময়িকভাবে অনিরাপদ। মস্কোর  সময় ২০ জুলাই ২০২৩ থেকে ইউক্রেনগামী সামুদ্রিক জাহাজগুলোকে যুদ্ধের অস্ত্রবাহক হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।  প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুলাইয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের মাঝে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণ সাগরে বছরব্যাপী শস্য রপ্তানির চুক্তি হয়। তবে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় রাশিয়া আন্তর্জাতিক অংশী সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ওপর দেওয়া রফতানি বিধিনিষেধ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত এ করিডোরে শস্য রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। রাশিয়ার দাবি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দেওয়া শস্য ও সার রপ্তানিতে বিধিনিষেধ তুলে নিলেই করিডোর পুনরায় চালু করা হবে।  অন্যদিকে ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়া সহযোগিতা করুক আর না ই করুক তারা বিশ্বে শস্য রপ্তানি চালিয়ে যাবে। কেননা বিশ্বকে খাদ্য সংকটে ফেলার একক অধিকার কারও নেই। জাতিসংঘ বলছে, রাশিয়ার এমন পদক্ষেপ বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। 
২০ জুলাই, ২০২৩
X