ভারতের মাটিতে বিশ্ব ক্রিকেটের মহারণের নবম দিন আজ। হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় দৃষ্টিনন্দন হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম বা এইচপিসিএ স্টেডিয়ামে আফগান ও ইংলিশদের সাথে লড়াইয়ের পর টাইগারদের নতুন লড়াইয়ের মঞ্চ চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়াম। ভারতের দ্বিতীয় পুরোনো স্টেডিয়ামটি চিপক স্টেডিয়াম নামেও পরিচিত।
১৯১৬ সালে নির্মিত হওয়া স্টেডিয়ামটিতে এর মধ্যেই স্বাগতিক ভারতের প্রথম ম্যাচ দিয়ে উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের লড়াইটি এই বিশ্বকাপের পাঁচ লড়াইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। দুপুর ২.৩০ মিনিটে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের লড়াই শুরুর আগে জেনে নেওয়া যাক বঙ্গোপসাগরের কাছের এই স্টেডিয়াম সম্পর্কে।
চেন্নাই, তবে সাবেক নাম মাদ্রাজ। তামিলনাড়ুর রাজধানী শহর। জনসংখ্যায় ভারতের ষষ্ঠ জনবহুল শহর। চেন্নাইয়ের প্রধান খেলা ক্রিকেট। ১৮৬৪ সালে মাদ্রাজ ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ক্রিকেটের পরিচয় হয়। দাবার সঙ্গে চেন্নাইয়ের সম্পর্ক যথেষ্ঠ দৃঢ়। ভারতের ৩৪ গ্র্যান্ডমাস্টারের ১২ জনই এসেছে চেন্নাই থেকে। এ জন্য শহরটাকে ভারতের দাবার রাজধানী বলা হয়।
মুথিয়া আন্নামালাই বা এম. এ. চিদাম্বারাম স্টেডিয়াম ভারতের চেন্নাইয়ের তামিলনাড়ুতে অবস্থিত। যার আরেক নাম চেপাউক স্টেডিয়াম। বঙ্গোপসাগরের ধারে মেরিনা বিচ থেকে কয়েকশ মিটার দূরে চেপাউকে এর অবস্থান। স্টেডিয়ামের উত্তরের গা ঘেঁষে চলে গেছে ব্যাকিংহাম খাল।
১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টেডিয়ামটি সর্বপ্রথম পরিচিত ছিল মাদ্রাজ ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ড নামে। পরবর্তীতে এটি মুথিয়া আন্নামালাই চিদাম্বারাম চেত্তিয়ার নামে নামকরণ করা হয়। তিনি ছিলেন বিসিসিআই-এর প্রাক্তন সভাপতি এবং তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (টিএনসিএ) প্রধান। এই স্টেডিয়াম তামিলনাড়ু ক্রিকেট দল এবং আইপিএল দল চেন্নাই সুপার কিংসের হোম গ্রাউন্ড।
১৯৩৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এ স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এ মাঠটা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। কেননা টেস্ট ক্রিকেটে ভারত প্রথম জয় দেখেছিল এ মাঠে। ১৯৫২ সালে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল ভারতীয়রা।
আরো একটা কারণে এই স্টেডিয়াম ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। টেস্ট ক্রিকেটে এ পর্যন্ত মাত্র দুটো ম্যাচ টাই হয়েছে। দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ টাই হওয়া ম্যাচটি এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া।
চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হয় পাঁচ দিন আগে। সেখানেও ভারতের প্রতিপক্ষে ছিল অস্ট্রেলিয়া।
স্টেডিয়ামটির ব্যাপক সংস্কার ঘটে ২০১১ সালে। আগে পুরোনা ছাদ ও স্তম্ভের কারণে পুরো স্টেডিয়াম দেখা যেত না তবে সংস্কারের পর তা তারের দ্বারা একত্রে রাখা হালকা চতুর্ভুজ শঙ্কাযুক্ত ছাদ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে পুরো স্টেডিয়াম দেখতে এখন আর কোনো বাধা নেই। স্টেডিয়ামে বর্তমানে ৫০ হাজার দর্শক বসতে পারে। এই ভেন্যুতে এবারের বিশ্বকাপের মোট পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
চেন্নাইয়ের এই স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত মোট ৩৪টি ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হয়েছে যার মধ্যে আগে ব্যাটিং করে জয় ১৭টিতে এবং সমান জয় পরে ব্যাটিং করেও। প্রথমে ব্যাটিং করে এখানে গড় রান ২২৪ আর পরে ব্যাটিংয়ে সেটি নেমে দাড়ায় ২০৫।
মাঠটিতে স্পিনারদের আধিপত্য বেশি দেখা যায়। এই মাঠে সর্বেচ্চ ১০ উইকেট শিকারির নয়জনই স্পিনার। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের ম্যাচটিতেও দেখা গিয়েছে স্পিনারদের আধিপত্য।
মাঠটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড হলো ২৯২ এবং সবচেয়ে কম ১৭৩ রান করে এই মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফেরা গিয়েছে।
স্টেডিয়ামটি সংস্করণের পর এই মাঠে বাংলাদেশ কোন ম্যাচ না খেললেও বাংলাদেশের একটি ওয়ানডে খেলার রেকর্ড আছে এই মাঠে। ১৯৯৮ সালে কোকাকোলা ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়ার বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যদিও আকরাম খানের দলের ম্যাচটিতে পরাজয় বরণ করে নিতে হয়।
মন্তব্য করুন