

বিশ্বকাপ ফাইনাল শেষ হয় এক সন্ধ্যায়, কিন্তু তার রেশ অনেক সময় কাটে না মাসের পর মাস। গ্যালারির শব্দ থেমে গেলে, ট্রফি অন্যের হাতে উঠলে—সেই নীরবতার ভেতরই অনেক সময় ভেঙে পড়ে একজন অধিনায়ক। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর ঠিক সেই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই গেছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এমনকি একপর্যায়ে মনে হয়েছিল, ক্রিকেট আর তাঁর জন্য নয়।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক অকপটে স্বীকার করেছেন, বিশ্বকাপ ফাইনালের হতাশা তাঁকে মানসিক ও শারীরিকভাবে এমনভাবে নিঃশেষ করে দিয়েছিল যে তিনি অবসর নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন।
রোহিত বলেন, “আমরা সবাই হতাশ ছিলাম। কী ঘটে গেল, সেটা তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার জন্য বিষয়টা ছিল আরও কঠিন, কারণ ২০২২ সালে অধিনায়ক হওয়ার পর থেকেই পুরো বিশ্বকাপটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল।”
এই বক্তব্যে স্পষ্ট, এটি শুধু একটি টুর্নামেন্ট হারার হতাশা নয়। এটি ছিল দুই বছরের পরিকল্পনা, দায়িত্ব আর প্রত্যাশার একসাথে ভেঙে পড়া। রোহিত জানালেন, তিনি শুধু শেষ কয়েক মাস নয়, অধিনায়কত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন।
“আমার একটাই লক্ষ্য ছিল—বিশ্বকাপ জেতা। সেটা টি–টোয়েন্টি হোক বা ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। যখন সেটা হলো না, আমি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। শরীরে কোনো শক্তি অবশিষ্ট ছিল না। নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কয়েক মাস লেগেছে,” বলেন তিনি।
এই কয়েক মাসের কথা বলতে গিয়ে রোহিত এমন এক মানসিক শূন্যতার ছবি আঁকেন, যা সাধারণত ক্রিকেটারদের মুখে শোনা যায় না। তাঁর ভাষায়, এটি ছিল এক ধরনের ‘শাটডাউন’—যেখানে আগ্রহ, লক্ষ্য, এমনকি খেলাটির প্রতি টানও স্তব্ধ হয়ে যায়।
সবচেয়ে বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি আসে এরপর।
“এক পর্যায়ে সত্যিই মনে হয়েছিল, আমি আর ক্রিকেট খেলতে চাই না। এই খেলাটা আমার কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে নিয়েছে, আর আমার দেওয়ার মতো কিছু অবশিষ্ট নেই,” বলেন রোহিত।
তবে এখানেই গল্প শেষ হয়নি। সময়, আত্মসমালোচনা আর ধীরে ধীরে ফিরে আসার সিদ্ধান্তই তাঁকে আবার মাঠে ফিরিয়েছে। রোহিত জানান, নিজেকে বারবার মনে করিয়ে দিতে হয়েছে—এই খেলাটাই তিনি ভালোবাসেন, এত সহজে তা ছেড়ে দেওয়া যায় না।
“ধীরে ধীরে নিজেকে ফেরাতে হয়েছে। শক্তি জোগাড় করা, অনুশীলনে ফেরা, আবার মাঠে নামার ইচ্ছা তৈরি করা—সবকিছু একদিনে হয়নি। কিন্তু আমি জানতাম, সামনে আরও কিছু অপেক্ষা করছে,” বলেন তিনি।
সেই ‘আরও কিছু’-র ইঙ্গিত ছিল ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকে। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিতব্য সেই আসরই তাঁকে নতুন করে ফোকাস বদলাতে সাহায্য করেছে।
রোহিতের এই স্বীকারোক্তি ক্রিকেট বিশ্লেষণের বাইরে গিয়ে এক মানবিক বাস্তবতার কথা বলে—যেখানে সাফল্যের চূড়ায় থাকা একজন অধিনায়কও ভেঙে পড়তে পারেন, ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন, আবার সেখান থেকেই ধীরে ধীরে ফিরে আসতে পারেন।
মন্তব্য করুন