মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, কানাডা যদি তার প্রস্তাবিত ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে চায়, তবে তাদের ৬১ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। আর এই পরিমাণ ডলার দিতে না চাইলে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে যোগ দিতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথসোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘কানাডা আমাদের চমৎকার গোল্ডেন ডোম সিস্টেমে অংশ নিতে চায়। যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রিয় ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যায়, তাহলে এই অংশগ্রহণের খরচ হবে শূন্য ডলার।’
তিনি আরও দাবি করেন, ‘তারা এই প্রস্তাব বিবেচনা করছে!’
ট্রাম্পের এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়, যখন ব্রিটেনের রাজা চার্লস তৃতীয় কানাডার সংসদে বিরল এক ভাষণ দিয়েছেন। তিনি দেশটির সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন অবস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য রাখেন। বিশেষ করে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক দাবিকে তিনি ‘বিপজ্জনক ও অনিশ্চিত বিশ্ব পরিস্থিতি’ তৈরির প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করেন।
রাজা চার্লসের বক্তব্যের কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রাম্প কানাডার জন্য এমন একটি প্রস্তাব দেন, যা কার্যত যুক্তরাষ্ট্রে কানাডার একীভূতকরণের ইঙ্গিত বহন করে।
এই প্রেক্ষাপটে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (সিবিসি)-কে জানান, তারা যুক্তরাষ্ট্রনির্ভরতা কমাতে ১ জুলাইয়ের মধ্যে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা জোট ReArm Europe-এ যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
কানাডা এখনও ট্রাম্পের মন্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে কার্নি নিশ্চিত করেছেন যে এই প্রতিরক্ষা প্রকল্প নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা চলছে।
গোল্ডেন ডোম প্রকল্প : বাজেট ও বাস্তবায়ন
ট্রাম্প দাবি করেছেন, গোটা গোল্ডেন ডোম প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং এটি ২০২৯ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে—যা তার বর্তমান মেয়াদের শেষ সময়।
তবে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই বাজেট ও সময়সীমা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ট্রাম্পের ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’-এর মাধ্যমে সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা সদ্য রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত হাউসে পাশ হয়েছে এবং এখন সিনেটে ভোটের অপেক্ষায়।
এই বিলের আওতায় সামরিক ও সীমান্ত নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে, কিন্তু একই সঙ্গে মেডিকেইড ও খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির মতো দরিদ্র জনগণের সহায়তা কমানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোল্ডেন ডোম প্রকল্পটির অনুপ্রেরণা এসেছে ইসরায়েলের আয়রন ডোম থেকে, যার বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণেই যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকে। তবে ইসরায়েল একটি ছোট দেশ (প্রায় নিউ জার্সির সমান), আর পুরো যুক্তরাষ্ট্রকে ঢেকে রাখার মতো এক বিশাল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ বাস্তবিকভাবেই একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ।
উল্লেখ্য, আয়রন ডোম মূলত স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার জন্য তৈরি, যার সর্বোচ্চ পাল্লা প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের মুখ্য হুমকি হতে পারে দীর্ঘ-পাল্লার ব্যালিস্টিক ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র।
সূত্র : আল জাজিরা
মন্তব্য করুন