

বছরের অনেকটা সময় পানিতে ডুবে থাকা কিশোরগঞ্জের নিকলীর হাওরাঞ্চলের নদীনালা ও বিল-জলাশয়ে পাওয়া নানা প্রজাতির সুস্বাদু দেশি মাছের জন্য বিখ্যাত। আর মিঠাপানির দেশি মাছের শুঁটকি উৎপাদনেও নাম ছিল এই অঞ্চলের। তবে এ অঞ্জলের উৎপাদিত শুঁটকির সুদিন ফুরিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন উৎপাদন কমতে থাকায় সমস্যায় পড়েছেন এখানকার শুঁটকি উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িতরা। এরই মধ্যে এই পেশা ছেড়ে অনেকেই অন্য পথে পা বাড়িয়েছেন জীবিকার সন্ধানে।
বিগত কয়েক বছর ধরে অনাবৃষ্টি, দেরিতে হাওরে পানি আসা, পানি কম থাকা এবং নানা মানবসৃষ্ট অনিয়মে সেই নিকলীর সুস্বাদু মিঠাপানির মাছের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে হাজারো জেলে ও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের জীবিকা।
সরেজমিন দেখা গেছে, এ সংকটের পেছনে একদিকে যেমন প্রকৃতির বিরূপ আচরণ দায়ী, অন্যদিকে মানুষের সৃষ্ট অনিয়মও সমান ভূমিকা রাখছে। প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে রয়েছে নদীর নাব্য হ্রাস, অনাবৃষ্টি, দেরিতে পানি আসা এবং তীব্র গরমে খালবিলের পানি শুকিয়ে যাওয়া। অন্যদিকে, মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পোনা মাছ নিধন, কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার, অবৈধ কারেন্ট জাল ও বিষ দিয়ে মাছ শিকার, অপরিকল্পিত বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণ এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ডিমওয়ালা মাছ ধরা। এসব কর্মকাণ্ড মাছের প্রজনন ও বংশবিস্তারে বাধা সৃষ্টি করছে, যার ফলে রানী, বেধরা, পুঁটি, বাইম, টাকিসহ নানা প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে।
শুঁটকি এলাকা হিসেবে পরিচিত নিকলীর গুরই ইউনিয়নের কৈবতপাড়া গ্রামের জেলে ও জেলেনিদের মুখে হতাশা স্পষ্ট। ৬০ বছরের ভক্ত ও যুবক সুজিতের মতো অনেকেই জানান, নিয়মবহির্ভূতভাবে মাছ আহরণের কারণে মাছের প্রজননও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে কমেছে শুঁটকি উৎপাদন। কৈবতপাড়ায় চলতি মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত পানি না আসায় হাওরের মাছের পরিমাণ কমেছে। মাছের আকার ও পরিমাণ কমে যাওয়ায় শুঁটকি উৎপাদনও মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে।
স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুষ্ট মাছ না পাওয়ায় শুঁটকির মান নিচে নেমে গেছে, আর দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের সম্ভাবনা কমে গেছে। যেসব মাছ দিয়ে মানসম্মত শুঁটকি তৈরি হতো, সেগুলো এখন আর তেমন পাওয়া যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন