শেয়ারের স্বাভাবিক লেনদেনের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যসীমা উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছে শেয়ারবাজারে। গত দেড় বছরের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তবে ফ্লোরমুক্ত বাজারে এখনো দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাপট আগের মতোই রয়ে গেছে।
বিশেষ করে যেসব কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি অথবা নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়েছে অথবা দীর্ঘ সময়ে কারখানা বন্ধ রেখেছে এবং নানা অনিয়মের কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) তদন্ত চলছে। এমন কোম্পানির শেয়ারের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের গত ১৮ জানুয়ারি (ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের তারিখ) ২৬ টাকার শেয়ারটি গতকাল পর্যন্ত ৩১ টাকা বেড়ে ৪৭ দশমিক ৮ টাকায় অবস্থান করছে। যদিও এই লেনদেন দর এ সময় সর্বোচ্চ ৫৬ দশমিক ৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। একইভাবে দাপট দেখাচ্ছে বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসসহ আরও অনেক কোম্পানি।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ফ্লোর প্রাইসের কারণে এত দিন একটি চক্র জাঙ্ক বা দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে মেতে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে তারা মার্জিন লোন নিয়ে শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে তুলছে। সেই চক্রটি এখনো সক্রিয় রয়েছে। তাদের ফাঁদে পড়ে অতি উৎসাহী বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণে জড়িয়ে পড়ছেন। আর মাশুল হিসেবে দেউলিয়া কোম্পানির শেয়ার কিনে দরপতনে সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এ অবস্থায় বাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলতে থাকলে কারসাজি চক্র পর্যাক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। এ জন্য বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি জুয়াড়ি চক্রের কার্যক্রমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত বা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া মার্জিন লোন না নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছায়েদুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারকে বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিনের আলু-পটোলের বাজার বানিয়ে ফেলছেন। তারা চান সকালে বেচবেন, বিকেলে কিনবেন। প্রতিদিন লাভ চাচ্ছেন। এ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, মার্জিন লোনে শেয়ার ব্যবসা করা। বিনিয়োগকারীদের বলব, আপনারা মার্জিনের প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসুন। আপনি নিজের টাকায় বিনিয়োগ করুন। তাহলে বাজারেও প্রেশার হবে না, আপনাদের আতঙ্কিত হতে হবে না।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দুর্বল কোম্পানি নিয়ে কারসাজি চক্র শেয়ারবাজারে বেশি সক্রিয় ছিল ফ্লোর প্রাইসের সময়ে। বাজারে প্রতিবন্ধকতা থাকলে তারা খুশি হয়। ওই সময় কয়েকটি কোম্পানিতে লেনদেন থাকায় অনেক আনাড়ি বিনিয়োগকারী তাদের খপ্পরে পড়েছিল। চক্রটি এর আগেও ছিল। এখনো আছে। বর্তমান বাজারের টার্নওভারের তিনের একাংশ তাদের হাত থেকে আসে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার। যেসব কোম্পানির কার্যক্রম দুর্বল বা বন্ধ, তাদের বিষয়ে সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া দরাকার। এটি হলে বাজারের পরিবেশ আরও সুন্দর হবে।
বিএসইসি বলছে, এখন বাজার মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা বেশি। সে ক্ষেত্রে তাদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইন অমান্য করে বাজারে প্যানিক (আতঙ্ক) সৃষ্টি করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে।