উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত সিরাজগঞ্জ। এক সময় যমুনার ভাঙনে দিশেহারা ছিল এই জেলার মানুষ। তবে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছে এই জেলাসহ পুরো উত্তরবঙ্গের মানুষ। যেখানে কর্মসংস্থানের নতুন দ্বার খুলতে যাচ্ছে যমুনার বুকে।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পারে যমুনা নদীর তীরে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম শতভাগ সবুজ অর্থনৈতিক অঞ্চল। যমুনা নদীর কোলঘেঁষে প্রায় ১১শ একর জায়গায় গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বেসরকারি খাতে দেশের বৃহৎ ও গ্রিন ইকোনমিক জোন। যেখানে প্রাধান্য পাচ্ছে টেক্সটাইল এবং কৃষিজ পণ্য। এ ছাড়া শিল্পের মৌলিক কাঁচামাল উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর সুবিধা হচ্ছে, কাঁচামাল আমদানি প্রক্রিয়ায় মূল্যবান সময় নষ্ট হবে না। সাশ্রয় হবে বড় অঙ্কের আমদানি ব্যয়।
নির্মাণাধীন এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভূমি উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এরই মধ্যে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। অবশ্য ভূমি উন্নয়নই এখন কর্তৃপক্ষের মূল কাজ। চারদিকে চলছে সেই বিশাল কর্মযজ্ঞ। জানা গেছে, এরই মধ্যে দেশি-বিদেশি ২৩টি প্রতিষ্ঠান ভূমি বুঝে নিয়েছে। এই ইকোনমিক জোনে জায়গা পাবে প্রায় চার শতাধিক কোম্পানি। বড় জায়গা রাখা হয়েছে বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্যও। পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হলে এখানে কর্মসংস্থান হবে পাঁচ লাখ মানুষের। পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না করে সড়ক, নৌ, আকাশ এবং রেলপথে যোগাযোগের সুব্যবস্থা সম্পন্ন ইকোনমিক জোনটির গোটা কাঠামো সবুজ প্রযুক্তির কমপ্লায়েনস শর্ত পরিপালনের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এখানে শিল্প গড়তে প্লট বুকিং নিয়েছে এসকোয়্যার, এপেক্স, প্যারাগন, কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টসসহ ২৩টি কোম্পানি।
এদিকে চলতি বছরই উৎপাদনে যেতে চায় একটি প্রতিষ্ঠান। অ্যাক্টিভ কম্পোজিট নামের শিল্প প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের মধ্যে ফ্যাক্টরি গড়ে উৎপাদনে যেতে চায়। এ ছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টির মতো ফ্যাক্টরি চালু হয়ে রপ্তানিতে যাওয়ার আশা করছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। ২০৩০ সালের মধ্যে সব ফ্যাক্টরি চালু হবে বলে আশা তাদের।
জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের (জেডিআই) প্রকৌশল ও কারিগরি সহায়তায় গড়ে ওঠা বেসরকারি এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে মোট ৪০০টি প্লট হবে। প্লটগুলোতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে পর্যায়ক্রমে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সেইসঙ্গে এ অঞ্চলে কারখানা স্থাপন, পণ্য পরিবহন, শিল্পসংশ্লিষ্ট কর্মীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ সব স্তরেই সবুজ পরিবেশ বজায় রাখা হবে।
সার্বিক বিষয়ে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, বিদেশি উদ্যোক্তাদের পরিবেশ সহায়ক এবং কমপ্লায়েন্স উপযোগী কাঠামোর ব্যবস্থা রেখে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক বিদেশি উদ্যোক্তা একক কিংবা সিন্ডিকেট ব্যবস্থাপনায় শিল্পকারখানা গড়ে তোলার জন্য যোগাযোগ করছেন। বড় বড় দেশি প্রতিষ্ঠান তো আছেই।
মনোয়ার হোসেন বলেন, এখানে শ্রমঘন শিল্পকারখানাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যেখানে বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এক্ষেত্রে এগ্রো এবং টেক্সটাইলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যার পুরোটাই থাকবে সবুজ। এখানে কোনো ছাড় হবে না।
পুরো প্রকল্পটি সবুজ রাখতে মোট জমির ৬০ শতাংশ কারখানার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাকি জমিতে খেলার মাঠ, জলাধার, বন, বিনোদন কেন্দ্র, হাসপাতাল, কারিগরি ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি), রেইন আটার হার্ভেস্ট্রিং সিস্টেম, সোলার প্যানেল পার্কসহ নানা অবকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।