

কেউ পছন্দ করেন বরফ ঠান্ডা পানি, কেউ আবার লেবু মিশিয়ে গরম পানি। আবার অনেকেই যা-ই পাই, তাই খেয়ে নেন। কিন্তু পানি গরম বা ঠান্ডা হলে কি শরীরের ওপর কোনো ভালো বা খারাপ প্রভাব পড়ে? এক গ্লাস পানি নিয়ে বসুন, আর গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ড. ব্রায়ান উইনার কী বলছেন, তা দেখে নিন।
ঠান্ডা পানি বলতে কী বোঝায় চলুন জেনে নিই। এটা শুনতে সাধারণ মনে হলেও আসলে সবার ঠান্ডার অনুভূতি এক নয় - একজন যেখানে ঠান্ডায় কাঁপছেন, আরেকজন সেখানে গরম লাগছে। তাই ঠান্ডার একটা ধারণা জানা দরকার।
ড. উইনার বলেন, ফ্রিজ থেকে বের করা বরফ-ঠান্ডা পানি সাধারণত ৪১°F (৫°C) এর মতো। কলের ঠান্ডা পানি প্রায় ৬০°F (১৫.৫°C)। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি প্রায় ৭৮°F (২৫.৫°C)।
আপনি ভাবতে পারেন এ নিয়ে অনেক গবেষণা আছে, কিন্তু বাস্তবে তেমন নেই। ড. উইনার বলেন, ঠান্ডা পানি ভালো বা খারাপ - এ ব্যাপারে দৃঢ় বৈজ্ঞানিক তথ্য খুব কম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শরীরের হাইড্রেট থাকা জরুরি, এটাই মূল বিষয়। পানি কত ঠান্ডা বা গরম হলে কী প্রভাব পড়ে, সে নিয়ে গবেষণা সীমিত।’
তবে খেলোয়াড়দের নিয়ে হওয়া গবেষণায় দেখা গেছে, তারা সাধারণত ঠান্ডা কলের পানি বেশি পছন্দ করেন। এ ছাড়া ঠান্ডা কলের পানি শরীরকে দ্রুত ঠান্ডা করতেও সাহায্য করে।
ড. উইনার বলেন, ঘাম থেমে যায় শরীর পানি পুরোপুরি শোষণ করার আগেই। শরীরে একটি রিফ্লেক্স আছে যা পানির উপস্থিতি অনুভব করে - এ রিফ্লেক্স ঠান্ডা পানিতে বেশি সক্রিয় হয়।
ড. উইনার নিজেই এ ব্যাপারে বেশ জানেন। কয়েক বছর আগে তিনি আইসক্রিম বাদ দিয়ে ইতালিয়ান আইস খেতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করলেন এক সমস্যা - ক্যালোরির হিসাব! বরফ গলাতে শরীর অতিরিক্ত ক্যালোরি ব্যয় করে, যা হিসাব করা হয় না।
তিনি হিসাব করে দেখেন, প্রতি ১ আউন্স বরফ গলাতে শরীর প্রায় ৫ ক্যালোরি খরচ করে।
তাই সংক্ষেপে, হাইড্রেট থাকতে চাইলে ঠান্ডা কলের পানি ভালো। কয়েক ক্যালোরি বেশি পোড়াতে চাইলে বরফ বা ইতালিয়ান আইস খেতে পারেন।
আকালেশিয়া একটি বিরল অসুখ - যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখে ১ জন আক্রান্ত হন। এই অবস্থায় খাবার ও পানি পাকস্থলীতে নামতে সমস্যা হয়, কারণ খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর মাঝের যে পেশি (LES), তা ঠিকমতো খুলতে চায় না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে -
- গরম পানীয় বা গরম খাবার LES পেশিকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে।
- ঠান্ডা পানি আকালেশিয়ার উপসর্গ আরও খারাপ করতে পারে।
অনেকে বলেন গরম পানি খেলে হজম ভালো হয় বা সর্দি-কাশিতে আরাম মেলে। কিন্তু ড. উইনারের মতে, গরম বা উষ্ণ পানি পান করার উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা খুব কম।
তিনি বলেন, ‘গরম পানীয় মানুষের মনে আরাম দেয়, মনকে শান্ত করে। সর্দি লাগলে গরম ভাপ নাকে ঢুকে একটু আরাম দেয়, কিন্তু এটা হাইড্রেশনের ব্যাপার নয়। এটা ঠিক যেন মা গরম চিকেন স্যুপ দিচ্ছে, আরাম লাগে, কিন্তু চিকিৎসাগত দিক থেকে লাভ তেমন নেই।’
শেষ পর্যন্ত বিষয়টি মূলত ব্যক্তিগত পছন্দ। আপনার শরীর যেভাবে ভালো বোধ করে -গরম, ঠান্ডা বা স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি - সেভাবেই পান করুন।
সূত্র : ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক
মন্তব্য করুন