বিশ্ববেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউক্রেনের অসহায় আত্মসমর্পণ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউক্রেনের অসহায় আত্মসমর্পণ

অবশেষে খনিজসম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় ধরনের চুক্তির শর্তাবলির বিষয়ে রাজি হয়েছে ইউক্রেন। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, কোনো ধরনের চাপে তিনি নত হবেন না। তিনি দেশ বিক্রি করতে পারবেন না। তবে শেষ পর্যন্ত এ ধরনের চুক্তিতে ইউক্রেন রাজি হওয়ায় দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। খবর বিবিসির।

কিয়েভে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘বেশ কিছু ভালো সংশোধনী নিয়ে আমরা একমত হয়েছি এবং এটিকে একটি ইতিবাচক ফল হিসেবেই দেখছি।’ তবে এর বিস্তারিত কিছু তিনি জানাননি। যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর যে অধিকার দাবি করেছিল, সেটি থেকে সরে এসেছে। তবে একই সঙ্গে ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দিচ্ছে না তারা, যা দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে এসে এ সপ্তাহেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। এর আগে দুই সপ্তাহ ধরে তারা একে অপরকে উদ্দেশ্য করে নানা মন্তব্য করেছিলেন। সমঝোতায় উপনীত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত না করেই ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেন, চুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অধিকার পাবে। তিনি বলেন, ‘তারা খুব সাহসী। তবে যুক্তরাষ্ট্র, এর অর্থ ও সামরিক উপকরণ ছাড়া যুদ্ধ অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যেত।’

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপকরণ ইউক্রেনে সরবরাহ অব্যাহত থাকবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হওয়া পর্যন্ত.... আমাদের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো দরকার, না হয় এটা চলতে থাকবে।’ ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন যে, শান্তি চুক্তির পর ইউক্রেনে কোনো এক ধরনের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের দরকার হবে, কিন্তু সেটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।

গত সপ্তাহেই ট্রাম্প জেলেনস্কিকে একজন ‘স্বৈরশাসক’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন এবং যুদ্ধ শুরুর জন্য অনেকটা ইউক্রেনকেই দোষ দিয়েছেন। এর আগে ইউক্রেনের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজসম্পদের যে দাবি যুক্তরাষ্ট্র করেছিল, জেলেনস্কি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ‘বিভ্রান্তির জগতে’ বাস করছেন, যা রাশিয়ার তৈরি। রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সামরিক ও অন্য যেসব সহায়তা যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দিয়েছে, তার পরিবর্তে ইউক্রেনের খনিজসম্পদের ওপর অধিকার দিতে চাপ দিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প। জেলেনস্কি বলেন, আমি আমার দেশ বিক্রি করতে পারি না।

মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। আমরা সেই অর্থ ফেরত চাই। আমরা বড় সমস্যায় থাকা দেশকে সাহায্য করেছি… কিন্তু আমেরিকার করদাতারা এখন তাদের অর্থ ফেরত পেতে চায়।’ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশায়না ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘চুক্তি পুরো ছবির একটি অংশ মাত্র’। তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কাছ থেকে অনেকবার শুনেছি যে, এটা বড় দৃশ্যপটের একটি অংশ। ইউক্রেনের সূত্রগুলো বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দাবি করছে, তা থেকে তাদের পিছিয়ে যেতে হবে এবং চুক্তির অনেক কিছু নিয়েই আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ইউক্রেনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির নতুন মোড়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। আগামী চার বছরে ট্রাম্প ও তার বৈদেশিক নীতিবিষয়ক দল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রয়োগ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেনের নিউজ সাইট ইউক্রেরাইনস্কা প্রাভডা বলছে, খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এতে বলা হয় যে, দুই দেশ একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিলও গঠন করবে। ইউক্রেনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের লিথিয়াম, টাইটানিয়াম, কয়লা, গ্যাস ও তেলের মজুত আছে। গত বছর জেলেনস্কি পশ্চিমাদের সামনে যে ‘বিজয় পরিকল্পনা’ তুলে ধরেছিলেন, তাতে বলা হয়েছিল যে, বিদেশি কোম্পানিগুলো তার দেশের খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকার পাবে। মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেনের রাশিয়া অধিকৃত এলাকার খনিজসম্পদেও যুক্তরাষ্ট্রের সুযোগের বিষয়ে তার আপত্তি নেই। ইউক্রেন ও তার ইউরোপিয়ান সহযোগীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে উদ্বেগ আছে। সৌদি আরবে গত সপ্তাহে দেশ দুটি বৈঠকে বসেছিল। এ নিয়ে কিয়েভ ও ইউরোপের মধ্যে এই উদ্বেগ আছে যে, তাদের বাদ দিয়েই দেশ দুটি শান্তি চুক্তিতে উপনীত হতে পারে।

কী ধরনের খনিজ আছে ইউক্রেনের: বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের ৫ শতাংশই ইউক্রেনের হাতে আছে বলে মনে করা হয়। ১৯ মিলিয়ন টন গ্রাফাইটের প্রমাণিত মজুত আছে। এটি ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ইউরোপে যত লিথিয়াম মজুত আছে তার এক-তৃতীয়াংশই ইউক্রেনে। এখন যে ব্যাটারি তৈরি হয় তার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এটি। তিন বছর আগে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের আগে বিশ্বে যত টাইটানিয়াম উৎপাদন হতো তার ৭ শতাংশ আসত ইউক্রেন থেকে। এটি উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত সবকিছুতেই ব্যবহৃত হয়। ইউক্রেনের ভূমিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিরল খনিজের মজুত আছে। ১৭টি উপাদানের এসব খনিজ অস্ত্র উৎপাদন, বায়ু টারবাইন, ইলেকট্রনিকসসহ আধুনিক বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে কিছু খনি রাশিয়া দখল করেছে। ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেঙ্কোর হিসাব মতে, অন্তত সাড়ে তিনশ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ রাশিয়ান অধিকৃত এলাকায় আছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

২১ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

৪ দিনের সফরে ঢাকায় পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাড়ল বাস ভাড়া

পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হবে ক্লিন সিটি : চসিক মেয়র

জুলাই সনদে মিত্রদের ‘কাছাকাছি মতামত’ দেওয়ার পরামর্শ বিএনপির

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

১০

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

১১

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

১২

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

১৩

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

১৪

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

১৫

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

১৬

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১৭

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১৮

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১৯

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

২০
X