চারদিকে এআই নিয়ে হৈচৈ। ক্যাম্পাসের আড্ডাতেও উঠে এলো চাকরির বাজারে প্রযুক্তির ভাগ বসানোর টেনশন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরে বসেছিলেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের হোসনেয়ারা, টুম্পা, রিমি, সোহানরা। তাদের আড্ডাটা টুকে নিয়েছিলেন মারুফ হোসেন-
কল করে আনতে হয়েছিল হোসনেয়ারাকে। ব্যস্ততা ছিল ঠিকই। তবে আড্ডার কথা শুনে ব্যস্ততাগুলো ‘পরে আসব’ বলে ছুটি নিয়েছিল নাকি।
রিমি : (হোসনেয়ারাকে) ইদানীং খুব ব্যস্ত মনে হচ্ছে।
হোসনেয়ারা : তেমন কিছু না।
সোহান : পড়াশোনা করছিস খুব?
টুম্পা : ঠিকই বলেছিস। হোসনেয়ারা এত পড়ে। নির্ঘাত সরকারি চাকরি পেয়ে আমাদের ভুলে যাবে।
হোসনেয়ারা : আরে ক্লাস, টিউশন নিয়ে ঝামেলায়। আর চাকরি মনে হচ্ছে আমি একাই পাব। তোরা বেকার থাকবি? চাকরির সঙ্গে মনে রাখা ভুলে যাওয়ার কী সম্পর্ক। নাকি তোদের মনেই ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটা..।
রিমি : তোরা কথা কাটাকাটি থামা তো। কাজের কথায় আস। এখন চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনার সঙ্গে আর কী কী করা যায় সেটি নিয়ে কথা বল।
সোহান : ঠিক। এমনিতে টেকনোলজি এসে যা শুরু করেছে। চাকরির বাজারও নাকি কমে যাচ্ছে। টিভির খবরও দেখলাম ইদানীং রোবট পড়ে দিচ্ছে।
রিমি : নতুন কী শিখব তাহলে? যা শিখব, পরে যদি সেটি এআই দখল করে নেয়?
টুম্পা : রোবট মানে পুতুল পুতুল। ওর ভেতর প্রাণবন্ত ভাব নেই। এআই-ও একই। তাই এমন কিছু ভাবতে হবে যার ভেতর মানুষের ব্যাপার স্যাপার থাকবে।
হোসনেয়ারা : আগে ভাবতাম, সৃজনশীল কাজ মানুষ ছাড়া হবে না। এখন দেখছি সেসবও রোবটের দখলে চলে যাচ্ছে। ছোটবেলায় আমার অনেক পুতুল ছিল। এখনকার রোবট দেখলে সেগুলোর কথা মনে পড়ে।
টুম্পা : আচ্ছা ছোটবেলার পুতুলগুলোই কি এখন বড়দের রোবট? মানে এ যুগে এখন রোবটই হলো খেলনা?
সোহান : পুতুলকে শাড়ি পড়ানো হচ্ছে। পুতুল দিয়ে খবর পড়ানো হচ্ছে। পুতুলগুলোর ঘটা করে বিয়েশাদিও হবে নাকি।
হোসনেয়ারা : একবার বেড়াতে গিয়ে কিনতে চেয়েছিলাম পুতুল কিন্তু পেলাম শাড়ি।
সোহান : তোর সেই শাড়িটা আমাদের ‘অপরাজিতা’ (এআই উপস্থাপক) আপাকে পরানো যাবে?
টুম্পা : (হোসনেয়ারাকে ইশারা করে) অপরাজিতাকে তুই শাড়িটা গিফট দে।
রিমি : হা হা হা। ঠিক।
সোহান : রিমি আজ বক বক করছে না কেন?
রিমি : আমি কথা বলা শুরু করলে তোদের এসব অহেতুক বক বক কে শুনবে?
হোসনেয়ারা : রোবট আর এআই তো এখন বক বক করে যাচ্ছে। কিন্তু যতই গর্জন করুক মানুষের সঙ্গে পেরে উঠবে বলে মনে হয় না। তবে এটিও সত্য, এআইর ভয়ে বসে থাকলে কিছুই হবে না।
সোহান : তবে আমার মনে হয় ধীরে ধীরে ওদের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) হাতে চলে যাবে সব। চাকরি-বাকরি আর করা লাগবে না কারও। আমি তো ঠিক করেছি কী করে রোবটের অ্যাসিস্ট্যান্ট হওয়া যায় সেই কোর্স করব।
রিমি : সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জে। এখন থেকে ট্রেনিং শুরু করতে হবে। কিন্তু কীভাবে কী করব সেটি জানাই আসল কাজ।
সোহান : চতুর্থ শিল্প বিল্পবে আছি। আরও চ্যালেঞ্জ আসবে সামনে।
টুম্পা : শিল্পের বিপ্লব বাদ দিয়ে জীবনের বিল্পবের কথাও ভাবিস (হেসে)।
সোহান : আমার আবার কীসের বিল্পব?
টুম্পা : সিঙ্গেল থেকে ডাবল হওয়ার বিল্পব।
হোসনেয়ারা : চল, ওর সঙ্গে অপরাজিতার পরিচয় করিয়ে দিই।
রিমি : কোনো সমস্যা হবে না। এআইর ভেতর রান্নাবান্নার সফটওয়্যারও থাকবে। তোর কিছু নিয়েই চিন্তা করতে হবে না।
হোসনেয়ারা : পরে দেখা যাবে এআইর প্রেমে পড়ে সোহান বেচারা খুব কষ্টে আছে। কারণ এআই তো খায় না। সোহানকে একা একা লাঞ্চ-ডিনার করতে হবে। একা একা রেস্টুরেন্টে খেতে হবে। আমার তো এখনই কষ্ট লাগছে ওর জন্য।
টুম্পা : আমার অ্যাসাইনমেন্ট পড়ে আছে। আজই কমপ্লিট করতে হবে। ওঠা দরকার।
রিমি : আরেহ আরেকটু বস। সবাই একসঙ্গে যাব।
সোহান : অ্যাসাইনমেন্ট তো এখন ‘এই শুনছো’ বললেই হয়ে যাবে।
রিমি : মানে?
সোহান : ‘এই’ মানে এআই, মানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এআই-কে বললেই...।
রিমি : আমি এসবে নাই। কষ্ট করে না করলে মাথায় কিছু ঢুকবে না।
রিমি : ভালো কথা, আজ তো বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইবি শাখার লেখক সম্মেলন। যাবি না সেখানে?
হোসনেয়ারা : যাব। আমার একটু লেট হবে।
টুম্পা : সম্মেলনে আমার ছবি তুলে দিবি, সোহান।
সোহান : আচ্ছা আচ্ছা। দেব।
হোসনেয়ারা : সবাই ভালে থাকিস। চলে গেলাম। সম্মেলনে দেখা হবে।
হোসনেয়ারা উঠে গেলে বাকি তিনজনও উঠে হাঁটতে থাকে টিএসসির দিকে।
মন্তব্য করুন