বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) স্থবির হয়ে পড়ে শিক্ষা কার্যক্রম। পরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের ফলে ভাটা পড়ে প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কাজে।
গত ২০ আগস্ট উপাচার্য, উপউপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনিক প্রধানরা একযোগে পদত্যাগ করলে সংকট আরও প্রকট হয়। ফলে অভিভাবক শূন্যতায় থমকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম। শুধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এমনই চিত্র দেখা গিয়েছিল দেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলেও বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দায়িত্ব দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ গত ২৯ আগস্ট একটি পত্র জারি করে। এ চিঠির আলোকে গত ২ সেপ্টেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্কুলের ডিন ও ডিসিপ্লিন প্রধানদের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা (ইউআরপি) ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমকে সর্বসম্মতভাবে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তিনি অগ্রাধিকারভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনাসহ শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নেন। একই সঙ্গে একাডেমিক প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে এবং পরীক্ষাগুলো নিয়মিত গ্রহণে উদ্ভূত সমস্যা জরুরিভাবে সমাধানে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
পরে দুই থেকে তিনটি ডিসিপ্লিনের ক্লাস শুরু করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেন। তার আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যান। ফলে সকল ডিসিপ্লিনেই এখন নিয়মিত ক্লাস গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে।
এ ছাড়াও আবাসিক হল পরিদর্শন করে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের কাছ থেকে হলের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে শোনেন। তিনি হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনে খাবারের মান যাচাই করেন। শিক্ষার্থীদের যা সমস্যা আছে তা সমাধানের আশ্বাস দেন। মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শন করে তিনি শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে আরও বেশি যত্নবান হতে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেন। কেন্দ্রীয় মাঠ পরিদর্শন করে তিনি খেলার উপযোগী করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা এবং শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলো দ্রুত শুরুর তাগিদ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ গণিত ডিসিপ্লিনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। যেখানে শহীদ মুগ্ধর পিতা, দুই ভাইসহ তার শিক্ষক, সহপাঠী ও সিনিয়র-জুনিয়রা স্মৃতিচারণ করেন। এ স্মরণসভায় প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম শহীদ মুগ্ধ স্মৃতির উদ্দেশে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক আবাসিক হল, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে ‘মুগ্ধ পানি সরবরাহ কর্নার’ করার ঘোষণা দেন।
মুগ্ধর ‘পানি লাগবে পানি’ এই স্লোগান লিখে দেশের প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুগ্ধ কর্নার করার উদ্যোগের শুরু এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হবে বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া শহীদ মীর মুগ্ধর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এ বছর আন্তঃডিসিপ্লিন ফুটবল প্রতিযোগিতাকে ‘শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ আন্তঃডিসিপ্লিন ফুটবল প্রতিযোগিতা-২০২৪’ নামে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক হিসেবে আমাকে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও একাডেমিক, প্রশাসনিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম গুরুত্বসহকারে পরিচালনা করা হচ্ছে। পরে পূর্ণাঙ্গ ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম আরও স্বাভাবিক হবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গতি ঠিক রাখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের অনুরোধ জানান।