

দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারতেন, সফল হয়ে ধরতে পারতেন পরিবারের হাল। হাসি ফোটাতে পারতেন পরিবারের মুখে। উজ্জ্বল করতে পারতেন এলাকাবাসীর মুখ। মা-বাবাও তার অতিআদরের সন্তানকে উচ্চশিক্ষার জন্য রাজধানীতে পাঠিয়েছিলেন। ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ মাসে মাসে সন্তানের পড়ার খরচ চালাতে পাঠাতেন। সব কষ্ট চেপে গিয়ে আশা ছিল, অতিআদরের সন্তান একদিন অনেক বড় হবে, বড় চাকরি পেয়ে বীরের বেশে ফিরবে। সন্তানের ফেরার পথ চেয়ে আছেন। তবে পিতা-মাতা কেউ জানেন না তার সন্তান আর ফিরবে না। মায়ের নাড়ি ছেঁড়া ধন চলে গেছে দূর আকাশে, যেখান থেকে আর কেউ ফেরে না। যেসব শিক্ষার্থীর কোলাহলে এখন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণ মুখর থাকার কথা ছিল, তারা এখন ঘুমিয়ে আছে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। পিতা, মাতা, পরিবার সব থাকার পরও তারা অজ্ঞাতপরিচয় লাশ। আঞ্জুমানের মধ্যস্থতায় বেওয়ারিশ হিসেবে তাদের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
পিতা-মাতা কিংবা পরিবার মরদেহ বুঝে পেলে হয়তো কবরটির যত্ন নিতেন। পরিবারের সদস্যরা হয়তো সকাল-বিকেল নিয়ম করে কবরের পাশে গিয়ে ফুল ছিটিয়ে দিতেন। তবে তার কিছুই জুটছে না। এসব কবরের কেউ যত্ন নিচ্ছে না। যে নৃশংসতা দেখে হয়তো প্রকৃতির সহ্য হয়নি। তাই কবরের ওপরে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছ নিজেই নিয়ম করে তার ডাল থেকে ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে।
গত ২০ আগস্ট রায়েরবাজার কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙাচোড়া কবর। বেওয়ারিশ মরদেহ হিসেবে হেয়ালিপনা করে দাফন করায় অল্প বৃষ্টিতেই ভেঙে পড়েছে মাটি। কিছু কবরের উঁচু অংশ বোঝাই যায় না। নতুন মাটি ভেঙেচুড়ে পড়ে আছে। আর সেসব কবরের ওপরে কৃষ্ণচূড়া ফুল বিছিয়ে পড়ে রয়েছে। কবরের ওপরে থাকা গাছ থেকে ঝরে পড়ছে কৃষ্ণচূড়া। এমনভাবে পড়েছে যা দেখে বোঝার উপায় নেই, এগুলো মানুষের হাতে ছিটানো নয়। প্রকৃতিই যেন বাংলার বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানানোর দায়িত্ব নিজ ঘাড়ে তুলে নিয়েছে।