কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১৩ এএম
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আদরের সৈকতকে হারিয়ে পরিবারটি দিশেহারা

কোটা আন্দোলন
আদরের সৈকতকে হারিয়ে পরিবারটি দিশেহারা

মাহামুদুর রহমান সৈকত। বয়স মাত্র ১৯। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সদ্য কৈশোর পেরোনো সৈকত ঘাড়ে তুলে নিয়েছিলেন পরিবারের দায়িত্ব। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে সময় দিতেন বাবার দইয়ের দোকানে। সংসারের টান বুঝতেন, অযথা খরচ করতেন না। বন্ধুদের সঙ্গে খেতেও যেতেন না তাদের খাওয়ানো লাগবে বা বিল দেওয়া লাগবে বলে। বাসায় থাকাকালীন দুই বড় বোনের সঙ্গে মেতে থাকতেন খুনসুটিতে। সৈকতের বাবা মাহাবুবের রহমান তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন প্রবাসে। উপার্জিত আয়ে তার ভাইয়েরা নিজেদের আখের গোছালেও দুর্দিনে খোঁজ নেননি সৈকতের পরিবারের। সৈকতের মৃত্যুতেও তারা একটি ফোনও দেননি। বাবর রোডে ছোট্ট একটি দইয়ের দোকানের আয়ে চলছিল সৈকতের পরিবার। দুই বোনের ভরসার জায়গা ছিল সৈকত। বাইরে গেলে ভিড়ের মধ্যে দুই বোনকে ছোট হয়েও বড় ভাইয়ের মতো হাতের বাহু দিয়ে আগলে রাখতেন। তবে গত ১৯ জুলাই চায়নিজ রাইফেলের একটি বুলেটে নিমেষেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা সৈকত। সঙ্গে সঙ্গেই নিভে যায় প্রাণপ্রদীপ। মৃত্যু ঘটে পুরো একটি পরিবারের স্বপ্নের। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন দিশেহারা সৈকতের পরিবার।

গত ২৫ আগস্ট রাতে সৈকতের বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয় কালবেলার। এ সময় পুরো বাসায় একটি আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। সৈকতের মা, বাবা ও দুই বোন কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকেন। সৈকতের মা বলছিলেন, সৈকত চাবি নিয়ে দোকান খোলার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। পরে আবার এসে আমাকে ডাকে, আমি তখন নামাজ পড়ছিলাম। নামাজ শেষ করে দেখি ও চলে গেছে। পরে আমি তাকে ফোন দিই; কিন্তু ছেলে আমার আর ফোন ধরেনি। পরে আমি জানতে পারি, বারবার ফোন দেওয়ায় সৈকত তার প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করছিল—এমন সময়েই গুলিটা লাগে বলেই কেঁদে দেন।

সৈকতের বাবা মাহাবুবের রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে আমার চেয়েও লম্বা। সন্ধ্যা হলে দোকানের সামনে একটা লাইট লাগাতে হয়। অনেক উঁচুতে হওয়ায় ওই লাইট আমি লাগাতে পারি না। সৈকত যেখানেই থাকুক প্রতিদিন সন্ধ্যায় গিয়ে লাইট লাগিয়ে দিয়ে আসত। আমি ওই লাইটটাই এখন খুলে ফেলেছি। আমার স্বপ্ন ছিল—ছেলে বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। আমি বাকি জীবনটা চিন্তামুক্ত কাটাব। আমার একটাই মাত্র ছেলে। এখন আমার পরিবারের কী হবে?

সৈকতের বড় বোন শাহরিনা আফরোজ সুপ্তি বলেন, ‘ও আমার ছোট; তবে বাইরে ঘুরতে গেলে ও হাত দিয়ে আমাদের আগলে রাখত। মনে হতো ও আমার বড় ভাই। ওর মৃত্যুর পর এখন বাইরে যেতেও ভয় লাগে। আমরা বিষয়টি মানতেই পারছি না। আমার এখনো মনে হয় আমার ভাই ফিরে আসবে।’

ওইদিন বাসায় ঢুকতেই দরজার সামনে দেখা যায় কালো রঙের বড় একটি বিড়াল। দরজা খুলতেই বড় বড় চোখ করে তাকিয়েছিল বিড়ালটি। বিড়ালটির বিষয়ে মেজো বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী বলেন, ‘বিড়ালটি সৈকতের খুব প্রিয় ছিল। ও মারা যাওয়ার পর থেকেই বিড়ালটি দরজার নিচ দিয়ে তাকিয়ে থাকে। কেউ দরজায় নক করলেই বিড়াল দৌড়ে দরজার সামনে চলে যায়। বিড়ালটি দরজার সামনে গিয়ে সৈকতকে খোঁজে।’

সৈকতের এক প্রতিবেশী বলেন, কত হাসিখুশি ছিল ছেলেটা। বিকেলে বাসার সামনের সড়কে ক্রিকেট খেলত। আমরা এখন বারান্দায় যাই না। বারান্দায় গেলেই ওর কথা মনে পড়ে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঘুষি মেরে বিমানের মনিটর ভেঙে ফেললেন লন্ডন প্রবাসী

ইসরায়েলের যে কারাগারে বন্দি শহিদুল আলম

আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, টিটিপি প্রধান নিহতের গুঞ্জন

বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল

এককভাবে সরকার গঠন করবে বিএনপি : এমরান চৌধুরী

‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে রংপুর অচল করে দিতে বাধ্য হবো’

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : লায়ন ফারুক

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

বৃহত্তর মিরপুরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

দেশ বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই : টুকু

১০

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / বস্তিবাসী ও শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি মেনে নিন

১১

মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

১২

রাজধানীতে ১৭ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাগপা ছাত্রলীগের বৈঠক

১৩

হাত-মুখ বেঁধে শিশুকে ধর্ষণ, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

১৪

এনসিটিবির নামে ‘নকল’ ছাপাখানা, আটক ৫ 

১৫

পচা চাল ক্রয়, বাচ্চু মিয়াকে বাধ্যতামূলক অবসর

১৬

শহিদুল আলমসহ নৌবহর থেকে আটক ব্যক্তিদের কারাগারে বন্দি

১৭

পা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আইসক্রিম বিক্রেতা রফিকুল

১৮

গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা তারেক রহমানের অঙ্গীকার : সাঈদ

১৯

চাকসু নির্বাচনের প্রচারে এগিয়ে ছাত্রদলের প্যানেল

২০
X