দেশের প্রচলিত আইনেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিচার চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগের গত ১৬ বছরের সব জুলুমের বিচার প্রচলিত আইনে করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, জামায়াতের ওপর যে অবিচার হয়েছে আওয়ামী লীগের ওপর তা যাতে না হয়।
গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে শফিকুর রহমান এ কথা বলেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী উপলক্ষে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না; কিন্তু আমরা ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী। ন্যায়বিচার পাওয়া আমাদের অধিকার। সব শহীদ পরিবারকে আহ্বান জানাব, আপনারা অবশ্যই ন্যায়বিচার চাইবেন। জামায়াতে ইসলামী আপনাদের পাশে থেকে আইনের অঙ্গনে লড়াই করবে। ন্যায়বিচার পেলে হয়তো কিছুটা সান্ত্বনা পাবেন। আগামী দিনে এ ধরনের স্বৈরশাসক হওয়ার খায়েশ তখন কারও জাগবে না। ওই কারণেই আমরা ন্যায়বিচার চাই।
শফিকুর রহমান আরও বলেন, গত ১৮ বছরের পর্যন্ত শহীদদের আত্মত্যাগ ও গণআন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে তুলে আনতে হবে। যারা শহীদ হয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন তাদের মর্যাদা দিতে হবে। সব শহীদ পরিবারের অন্তত একজনকে চাকরি দিয়ে রাষ্ট্রকে তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানাই। আহতদের উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিতে ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলগুলোকে শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণাও দেন তিনি।
ক্ষমতাচ্যুত শাসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা এ দেশকে ভালোবাসে তারা কখনো খুনি হতে পারে না, মানুষ খুন করতে পারে না। দেশপ্রেমিকরা কখনো পালায় না, পালাতে পারে না। তাহলে কারা পালায়? আপনারা জানেন, আপনারা জেনেছেন, খুনি ও চোরেরা পালায়। পালিয়ে জানে বাঁচতে পারবেন না। আপনাদের ধরে দেশে ফেরত পাঠাবে। পাপাচাররা কখনো জনতার চোখ ফাঁকি দিতে পারে না।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্ব ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ১২ দলীয় জোট প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী ড. রেদোয়ান আহমদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, গণঅধিকার পরিষদের (নুর) সদস্য সচিব রাশেদ খান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন।
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাজনৈতিক সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং অর্ধ সহস্রাধিক হাত-পা হারানো ব্যক্তি। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, দক্ষিণের নায়েবে আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন ও কামাল হোসেন প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির মধ্যে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের তার বক্তব্যে বলেন, গণহত্যার নেত্রী ও তাদের দোসররা ভারতে পালিয়ে গেছে। তাদের দেশে ফেরত এনে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ব্যক্তির বিচার করলেই চলবে না; বরং দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, শহীদরা মরে না; বরং তারা সবসময় জীবিত। আমাদের আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা দুনিয়া ও আখেরাতে পুরস্কৃত হবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। তাই তাদের বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ ত্যাগ ও কোরবানির মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটিয়ে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু আমাদের সংগ্রাম এখানেই শেষ নয়; বরং সবে যাত্রা শুরু হয়েছে। কারণ, ফ্যাসিবাদীদের দোসরা এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।