যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। গত বুধবার ক্লিনিকে ভর্তির পর মধ্যরাত পর্যন্ত তার সঙ্গে ছিলেন লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমানের হাতে রান্না করা খাবার খেয়েছেন খালেদা জিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেও তারেক রহমান মায়ের জন্য বাসা থেকে নাশতা নিয়ে যান বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে যুক্তরাজ্য যান খালেদা জিয়া। বুধবার সকালে তিনি দেশটিতে পৌঁছান। পরে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় যুক্তরাজ্যের পশ্চিম লন্ডনে বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি করা হয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসনকে। সেখানে অধ্যাপক ডা. প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
এর আগে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর সেখান থেকে সরাসরি ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ পৌঁছান খালেদা জিয়া। লন্ডনের স্থানীয় সময় বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিমানবন্দর থেকে গাড়ি চালিয়ে মা খালেদা জিয়াকে নিয়ে এই ক্লিনিকের উদ্দেশে যাত্রা করেন তার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বেলা ১১টা নাগাদ হাসপাতালে পৌঁছান তারা। এ সময় তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান তাদের সঙ্গে ছিলেন।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পরে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া চিকিৎসকরা যুক্তরাজ্যের ‘লন্ডন ক্লিনিকের’ চিকিৎসকদের কাছে খালেদা জিয়াকে কাগজপত্রসহ বুঝিয়ে দেন। প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কাগজপত্র দেখে বিএনপির চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে এরই মধ্যে তার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সঙ্গে অধ্যাপক কেনেডিসহ লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা একদফা বৈঠক করেছেন।
খালেদা জিয়া লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর ক্লিনিকের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি ১০ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সময় ঢাকার বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রায় ১৫ বার ভর্তি হয়েছিলেন। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা সবসময় মাল্টিডিসিপ্ল্যানারি অ্যাডভ্যান্স সেন্টারে উনার পরবর্তী চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেছেন। কিন্তু উনাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উনার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার পথ সুগম হয়। উনি চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সুদূর লন্ডনে এসেছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন কালবেলাকে বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে এখন যেসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন, অধ্যাপক কেনেডি সেটা নেবেন এবং পরে বাংলাদেশ থেকে আসা খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সঙ্গে আবারও পরামর্শ করবেন। এরপর সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক কালবেলাকে বলেছেন, চিকিৎসকরা এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করেছেন। বিভিন্ন রিপোর্ট পর্যালোচনা শেষে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অনেক দিন পর পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে অনেক হাসি-খুশি আছেন তিনি। সবার সঙ্গে খুনসুটি করছেন। পরিবারের সবাই রুটিন মাফিক আসা যাওয়া করছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তাররা তার বেশ কিছু টেস্ট দিয়েছেন। আজ কিছু রিপোর্ট পাওয়া যাবে। সে অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু হবে। আশা করি কাল-পরশুর মধ্যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষ হবে। তাছাড়া দেশের চিকিৎসা বিষয়ে গতকাল ডাক্তারদের ব্রিফ করা হয়েছে। তারা আমাদের চিকিৎসা নিয়ে যথেষ্ট প্রশংসা করেছেন। এর বাহিরে কিছু চিকিৎসা আমাদের দেশে হয় না। সেগুলোর জন্যই মূলত খালেদা জিয়াকে লন্ডনে আনা। এখন প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ব্যবস্থা নেবেন এখানকার চিকিৎসকরা।