সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ দাবিতে আজ বুধবার দুপুর ১২টায় ইসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে দলটির ঢাকা মহানগর শাখা।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে এনসিপির এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন থেকে এমন দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে আখতার হোসেন বলেন, ২০২০ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবৈধ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকাই দায়ী। ‘ইশরাক হোসেন বনাম শেখ ফজলে নূর তাপস গং’ মামলার বিবাদী হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীনভাবে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি, যার ফলে একতরফা রায় প্রদান করা হয়েছে। এমনকি রায়ের পর তারা উচ্চ আদালতে প্রতিকার প্রার্থনা না করে মামলার বাদীকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এর আগেও আমরা দেখেছি, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ বজায় রাখার পরিবর্তে এমন সব বক্তব্য প্রদান করেছে, যার সঙ্গে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অবস্থানের সাযুজ্য রয়েছে।
তিনি বলেন, এই মামলায় রায় ঘোষণার আগেই সংশ্লিষ্ট আইনের অধীন গত ১৯ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। ফলে পুরো মামলাটিই অকার্যকর হয়ে গেছে। রায় ঘোষণার পর গেজেট প্রকাশের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায়। কিন্তু তার আগেই তড়িঘড়ি করে রাতের আঁধারে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক ভূমিকা স্পষ্টতই পক্ষপাতমূলক।
এনসিপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান নির্বাচন কমিশন অবৈধ ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’ অনুযায়ী গঠিত, যা সে সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষ প্রত্যাখ্যান করেছিল। এতসবের পরও আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার আগেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ফলে বিদ্যমান নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার প্রতিফলন ঘটবে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। যেমন পলাতক ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে নাকচ করেছে বিদ্যমান নির্বাচন কমিশন। এর ফলে এই কমিশনের ওপর আস্থা রাখা সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি।
স্থানীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, জনপ্রতিনিধি না থাকায় নাগরিক সেবা প্রদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ‘ইশরাক হোসেন বনাম শেখ ফজলে নূর তাপস গং’ মামলাকে নজির হিসেবে নিয়ে সারা দেশে অবৈধ নির্বাচনের প্রার্থীরা আদালতের শরণাপন্ন হয়ে এক জটিল ও সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি করছে। এ সংকট নিরসনে এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনই একমাত্র সমাধান। কিন্তু ফ্যাসিবাদী আইনে গঠিত বর্তমান পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম নয় বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। তাই, আমরা অনতিবিলম্বে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ইশরাক হোসেনের মামলার যে বিষয়, এই সংকটটা সরাসরি নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছে। এই মামলায় তারা কোনো কন্টেস্টেই করেনি এবং তারা আপিলও করেনি। এটা স্পষ্ট হচ্ছে, তারা একটা দলের পক্ষ নিচ্ছে, একটা প্রার্থীর পক্ষ নিচ্ছে। এ ধরনের সংকট যে সামনে তারা করবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমরা এই নির্বাচন কমিশনের ওপর জাতীয় নির্বাচন বা যে কোনো নির্বাচনে আস্থা রাখতে পারছি না। ফলে আমরা গণতান্ত্রিকভাবে দাবি জানাচ্ছি বুধবার (আজ) ইলেকশন কমিশনের কাছে যাব এবং কর্মসূচি পালন করব। এরপর দাবি কর্ণপাত করা না হলে আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণ যে ম্যাচিউরিটি তাদের থেকে আশা করে, তারা কিন্তু সেটি দেখাচ্ছে না। শাহবাগ বন্ধ হচ্ছে, নগর ভবন বন্ধ হচ্ছে, যমুনা ঘেরাওয়ের হুমকি দিচ্ছে। নানাভাবে তারা অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। সবাইকে এই জায়গা থেকে সরে আসা উচিত। আলোচনার মাধ্যমে, সংলাপের মাধ্যমে যদি সমাধান করতে পারি, তাহলে সবার জন্য ভালো।’
জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কথা আমরা বলছি উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে পরিকল্পিতভাবে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা হয়েছে জাতীয় নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের বিরোধিতা কেউ কখনো করেনি। প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত যে সময় দিয়েছেন, আমরা কিন্তু সেটাকে সমর্থন করেছি। এর মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে এর মধ্যে আমরা বিচার এবং সংস্কারের কথা বলেছি। গণপরিষদ নির্বাচন একই সঙ্গে করতে হবে, সেই কথাটা আমরা বলেছি নতুন সংবিধানের জন্য। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিটা কিন্তু আজকে আমরা হঠাৎ দিচ্ছি না। এটা এর আগেও দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যে ত্রুটিপূর্ণ, সেটাও আজ আমরা প্রথম বলছি না।’
মন্তব্য করুন