আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন—এমন প্রশ্নে দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ছয়টি বিভাগের উত্তরদাতারা বিএনপিকে এগিয়ে রেখেছেন। জামায়াত এগিয়ে রয়েছে শুধু রংপুর বিভাগে। আর বরিশাল বিভাগে এগিয়ে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে ‘জনগণের নির্বাচন-ভাবনা’ শীর্ষক জরিপের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। জরিপটি পরিচালনা করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন কনসাল্টিং। সহযোগিতা করেছে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (বিআরএআইএন)।
জরিপের ফল তুলে ধরেন ইনোভেশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার। তিনি বলেন, মূলত আগামী নির্বাচনে জনগণ কাকে ভোট দেবে, তা দেখার চেষ্টা করেছি।
গত ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৪ জেলার ৫২১টি ওয়ার্ডে এ জরিপ চালানো হয়, তাতে অংশ নেন ১০ হাজার ৪১৩ জন ভোটার। রুবাইয়াৎ সারওয়ার বলেন, তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৬৭৩ জন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তা জরিপের মধ্যে প্রকাশ করেছেন।
জরিপের ফলে দেখা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। এসব বিভাগে বিএনপিকে সমর্থন করেছেন যথাক্রমে ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ, ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ, ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ, ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটার। অন্যদিকে, ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতার সমর্থন নিয়ে রংপুর বিভাগে এগিয়ে আছে জামায়াতে ইসলামী। আর ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতার সমর্থনে বরিশাল বিভাগে এগিয়ে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ।
ফলে দেখা যাচ্ছে, যারা ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন, সে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং তা প্রকাশ করেছেন—এ সমর্থনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে বিএনপি। জরিপে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপিকে ভোট দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। মার্চে এ হার ছিল একটু বেশি, ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ।
জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে এ হার মার্চের ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমে ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ হয়েছে। ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। গত মার্চে প্রথম পর্বের জরিপে এ হার ছিল ১৪ শতাংশ। আর এনসিপির ক্ষেত্রে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ থেকে কমে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ; জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ থেকে দশমিক ৯০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু ইসলামী আন্দোলন। তাদের ভোট দিতে আগ্রহীর সংখ্যা মার্চের ২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে।
আগামী সরকার গঠনে সবচেয়ে যোগ্য দল কোনটি—এমন প্রশ্নে ৩৯ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা রায় দিয়েছেন বিএনপির পক্ষে। এ ছাড়া ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা আওয়ামী লীগকে, ২৮ দশমিক ১ শতাংশ জামায়াতকে, ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এনসিপিকে এবং ১০ দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য দলের পক্ষে মত দিয়েছেন।
প্রশ্ন ছিল, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী নির্বাচন করতে না পারলে তাদের ভোট কোথায় যাবে। যারা ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং মতামত প্রকাশ করেছেন, তাদের ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সেই ভোট বিএনপি পাবে। এ ছাড়া ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ জামায়াত, ৪ দশমিক ৭ শতাংশ এনসিপি, ৩ দশমিক ৮ শতাংশ ইসলামী আন্দোলন এবং ২ দশমিক ১ শতাংশ জাতীয় পার্টির কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগকে যারা সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করেন—এমন ১ হাজার ৮৪০ জন ভোটারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাদের বিচারে দ্বিতীয় উপযুক্ত দল কোনটি। সেখানে ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশের রায় গেছে বিএনপির বাক্সে। ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ জামায়াত, ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এনসিপি, ১ দশমিক ২ শতাংশ ইসলামী আন্দোলন এবং ৮ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা জাতীয় পার্টিকে দ্বিতীয় উপযুক্ত দল মনে করার কথা বলেছেন। আর ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন তারা কোনো দলকে দ্বিতীয় উপযুক্ত মনে করেন না।
ভোটের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির পক্ষে রায় বেড়েছে, উল্টো ঘটেছে জামায়াতের ক্ষেত্রে। জেন-জি ও নারীদের মধ্যে জামায়াতের সমর্থন বেশি। শিক্ষা বাড়ার সঙ্গে ভোটাররা মত দিয়েছেন জামায়াতের পক্ষে, উল্টো ঘটেছে বিএনপির বেলায়।
জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ ভোটার ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক চায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার মত তুলনামূলকভাবে কম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরিপে অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ৮ শতাংশ পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব চান। আর ভারতের সঙ্গে দূরত্ব চান ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ।
ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা—এই প্রশ্নে মার্চে সবচেয়ে বেশি ৭১ দশমিক ২ শতাংশ বলেছিলেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দাবির কথা। সেপ্টেম্বরের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রাধিকার বদলে গেছে। সবচেয়ে বেশি ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির প্রত্যাশার কথা।
মন্তব্য করুন