কালবেলা প্রতিবেদক, ঢাকা ও রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজসাক্ষী মামুনের কম সাজায় অসন্তুষ্ট শহীদ পরিবার

প্রতিক্রিয়া
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী মামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাদের দ্রুত ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এ মামলার আসামি থেকে রাজসাক্ষী সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের অপরাধ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য হওয়ার পরও তার সাজা কমিয়ে দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা এসব মন্তব্য করেন।

এদিকে রায় ঘোষণার পর জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এ রায় শুনি অবশ্যই আমি খুশি হইছি; কিন্তু আরও যারা শহীদ হয়েছে, তাদের পরিবার যেন খুশি হয়। ভারত থেকে এনে দ্রুত যেন ফাঁসি কার্যকর করে বাংলার মাটিতে। তাহলে আমি খুশি হই। আমার জীবদ্দশায় যেন দেখতে পাই। একটু অন্তরটা ঠান্ডা হইল, কার্যকর হইলে পুরো খুশি হব।’

শেখ হাসিনা ও কামালের ফাঁসির রায় হলেও ফাঁসি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শহীদ পরিবারগুলোর মুখে হাসি ফুটবে না উল্লেখ করে শহীদ মীর মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও কামালকে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ ঘটনায় সাময়িক খুশি হলেও আমরা সন্তুষ্ট নই। পরিবারগুলোর মুখে তখনই হাসি ফুটবে, যখন আমরা শেখ হাসিনাসহ গণহত্যাকারীদের ফাঁসিতে ঝুলতে দেখব।’

মুগ্ধর ভাই মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, ‘যে রায় এসেছে, তাতে শহীদ পরিবার ও আহতরা সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সাবেক আইজিপির রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। তাকে ন্যূনতম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হোক।’

মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হলে ছেলের আত্মা শান্তি পাবে উল্লেখ করে নিহত মিরাজের বাবা আব্দুর রব বলেন, ‘এটি একটি মাইলফলক, যা শহীদ পরিবারকে সন্তুষ্ট করেছে। পুরো সন্তুষ্টি তখনই আসবে, যখন শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনা হবে। শেখ হাসিনাকে বাংলার মাটিতে যেদিন ফাঁসিতে ঝোলানো হবে, সেদিন ছেলের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।’

সাবেক আইজিপির রায় নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের সন্তান হত্যার এক বছর পার হয়ে যাওয়ার পর আমরা রায় পেয়েছি। এ রায়ে আদালতকে ধন্যবাদ জানাই; কিন্তু পরিপূর্ণ আশ্বস্ত নই। আরও বেশি ধন্যবাদ জানাতে পারব, যখন এ রায় কার্যকর করা হবে। সাবেক আইজিপি মামুনের রায় নিয়ে অসন্তোষের কথা আমরা বলেই যাব।’

সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেমন্তী বলেন, ‘সাবেক আইজিপি মামুন যেহেতু রাজসাক্ষী হয়েছেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পাঁচ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমাদের দাবি, সে যা অপরাধ করেছে, পাঁচ বছর কিছুই না। আইজিপি মামুনের পাঁচ বছরের শাস্তি আমরা মানি না।’

‘একটু অন্তরটা ঠান্ডা হইল’: রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে শহীদ আবু সাঈদের পরিবার, জুলাই আন্দোলনকারী ও স্থানীয়রা উল্লাসে মেতে ওঠেন। এ সময় সেখানে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। গতকাল রায় ঘোষণার পর দুপুরে পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তার বাবা মকবুল হোসেন বলেন, ‘এ রায় শুনি অবশ্যই আমি খুশি হইছি; কিন্তু আরও যারা শহীদ হয়েছে, তাদের পরিবার যেন খুশি হয়। ভারত থেকে এনে অতি দ্রুতগতিতে যেন ফাঁসি কার্যকর করে বাংলার মাটিতে। তাহলে আমি খুশি হই। আমার জীবদ্দশায় যেন দেখতে পাই। একটু অন্তরটা ঠান্ডা হইল, কার্যকর হইলে পুরো খুশি হব।’

আবু সাঈদ হত্যা হামলার বাদী ও তার বড় ভাই রমজান আলী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও খুনিরা দেশের বাইরে যেখানেই থাকুক, তাদের ফিরিয়ে এনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। তাহলে শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। শহীদ ও আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এটাই আমাদের প্রধান দাবি।’

শহীদ আবু সাঈদের আরেক ভাই আবু হোসেন বলেন, ‘শুধু রায় ঘোষণা করলে হবে না, হাসিনাকে বাংলার মাটিতে এনে এ রায় কার্যকর করতে হবে।’

এদিকে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণায় মহানগর ও জেলার বিভিন্ন জায়গায় উল্লাসে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিকেলে প্রেস ক্লাব এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশ করেন জুলাই আন্দোলনকারীরা। একই সময়ে নগরীর পার্ক মোড় এলাকায় উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রংপুর মহানগর কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আলমগীর নয়ন বলেন, ‘গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা তার অপরাধের থেকেও কম শাস্তি পাচ্ছেন; কিন্তু এর চেয়ে সর্বোচ্চ রায় নেই। এ রায়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব তাকে দেশে এনে রায় কার্যকর করলে আমাদের শহীদ ভাইদের আত্মা শান্তি পাবে।’

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী বলেন, ‘এ রায়ে আমরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও খুশি হয়েছি। ট্রাইব্যুনাল-২-এ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় যারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ওএসবি চক্ষু হাসপাতালে কাজের সুযোগ, দ্রুত আবেদন করুন

গাজায় নিরাপত্তা বাহিনী গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুমোদন করল জাতিসংঘ

সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে ভাঙচুর

ঢাকায় শীতের আমেজ, তাপমাত্রা নামল ১৮ ডিগ্রিতে

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

স্থানীয় সরকার বিভাগে বড় নিয়োগ, আবেদন যেভাবে

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৮ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

মোবাইলে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দেখবেন যেভাবে

মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন যুবরাজের বাবা!

১০

রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ

১১

থানায় ককটেল নিক্ষেপ, ৩ পুলিশ আহত

১২

বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে মধ্যরাতে হামজার পোস্ট

১৩

‘আই ডোন্ট কেয়ার’ লেখা ফটোকার্ড পোস্ট, ঢাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে থানায় সোপর্দ

১৪

ইতালিতে শীতকালীন পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত

১৫

হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় ভুক্তভোগীদের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’: জাতিসংঘ

১৬

২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত যে ৩২ দলের

১৭

‘হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় যেদিন কার্যকর হবে, সেদিন আমি আনন্দিত হবো’

১৮

সাবেক এমপি হারুনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের

১৯

সড়ক অবরোধের অভিযোগে দুই ছাত্রলীগ নেতা আটক

২০
X