

ফুটবলের ইতিহাসে যার নাম উচ্চারিত হয় প্রথম সারির নেতাদের তালিকায়, সেই কার্লোস কাইতানো ব্লেডর্ন ভেরি, ভক্ততের কাছে যিনি পরিচিত শুধু দুঙ্গা নামে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে চতুর্থ শিরোপা এনে দেওয়া এই কিংবদন্তি সম্প্রতি মেক্সিকোর পাচুকায় ফুটবল হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সেই উপলক্ষে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুঙ্গা খোলামেলা কথা বলেছেন ব্রাজিলের বর্তমান দল, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র থেকে শুরু করে রদ্রিগো, এনড্রিক ও ব্রাজিলের নেতৃত্ব সংকট নিয়ে। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ কালবেলাার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল ।
‘ভিনি টেকনিক্যাল লিডার, ট্র্যাডিশনাল নেতা নয়’
ব্রাজিল দলে ভিনিসিয়ুসের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই দুঙ্গা স্পষ্ট উত্তর দেন, “ভিনিসিয়ুস একজন ফুটবলিং লিডার—ড্রেসিংরুম লিডার নয়।”
দুঙ্গার মতে, ভিনির কাজ হলো মাঠে খেলা গড়ে দেওয়া, উদ্যোগ নেওয়া, ম্যাচের গতি বদলে দেওয়া। কিন্তু ড্রেসিংরুমে যে ধরনের দৃঢ় নেতৃত্ব দরকার, সেটা তার মধ্যে নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘রিয়ালে ভিনির কাজ শুধু খেলায় মন দেওয়া। সেখানে নেতৃত্বের জায়গায় অন্যরা আছে। কিন্তু ব্রাজিলে তাকে অনেক বাড়তি দায়িত্ব নিতে হয়, যা তার জন্য যুক্তিসঙ্গত নয়।’
ক্যাসেমিরোকে দেখছেন প্রকৃত নেতৃত্বের জায়গায়
দুঙ্গা মনে করেন ব্রাজিলের জন্য এখনো একজন ক্যাপ্টেন-চরিত্র অপরিহার্য। সেই জায়গায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ক্যাসেমিরোকে দেখছেন তিনি। দুঙ্গা বলেন, ‘ক্যাসেমিরো সেই নেতা হতে পারে। নেতা বানানো যায় না—আপনি নেতা হয়ে জন্মান। এমন কাউকে দরকার যে ড্রেসিংরুম নিয়ন্ত্রণ করবে।’
রদ্রিগো–এনড্রিক: সমস্যা অভিজ্ঞতার, প্রতিভার নয়
রিয়াল মাদ্রিদের রদ্রিগো নিয়ে চলমান বিতর্কে দুঙ্গার দৃষ্টিভঙ্গি ঠাণ্ডা মাথার
“ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড় ভিন্ন—তারা সব সময় খেলতে চায়। না খেললে মন খারাপ হয়। আর জাবি আলোনসোর সঙ্গে সিস্টেম বদলেছে, রদ্রিগোকে সময় দিতে হবে।’
এনড্রিক পরিস্থিতি আরও সংকটজনক বলে মনে করেন তিনি—‘এত কম বয়সে খেলতে না পারা বিশাল সমস্যা। প্রতিযোগিতামূলক মিনিট না পেলে উন্নতি অসম্ভব। সপ্তাহে তিন ম্যাচ বেঞ্চে বসে থাকলে একজন তরুণ চার-পাঁচ ঘণ্টা অভিজ্ঞতা হারায়—এটা ধ্বংসাত্মক।’
বিশ্বকাপ ফেভারিট কারা?
ব্রাজিলের সাবেক অধিনায়ক জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রাজিল পিছিয়ে আছে—
“এই মুহূর্তে স্পেন, ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা আমাদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। কিন্তু ছয় মাসে অনেক কিছু বদলে যেতে পারে।”
‘মেন্টালিটি’—ব্রাজিলের প্রকৃত অস্ত্র
সবশেষে ভিনিসিয়ুসের মানসিক দৃঢ়তার প্রশংসা করেছেন দুঙ্গা—‘সে চেষ্টা করে, ব্যর্থ হলে আবার চেষ্টা করে। অন্যরা ভয় পায়, সে পায় না। বড় খেলোয়াড়ের পার্থক্য এখানেই।’
ইউরোপে গিয়ে ‘ব্রাজিলিয়ান ফ্লেয়ার’ হারাচ্ছে তরুণরা
দুঙ্গার মতে, কম বয়সে ইউরোপে যাওয়া ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী স্বাভাবিক ফুটবলকে বদলে দিচ্ছে— ‘আমাদের সময়ে পেছনে বল দেওয়া ছিল অপরাধ। সবসময় সামনে, সবসময় ড্রিবল! কিন্তু এখন ১৭–১৮ বছর বয়সে ইউরোপে গিয়ে ওদের পিছনে বল দেওয়া শিখতে হচ্ছে। এতে সৃষ্টিশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে।’
সাক্ষাৎকারের প্রতিটি বক্তব্যে স্পষ্ট, দুঙ্গা এখনও আগের মতোই—স্পষ্টবাদী, পর্যবেক্ষণশক্তি তীক্ষ্ণ, এবং ব্রাজিল ফুটবলের ভবিষ্যত নিয়ে তীব্রভাবে নিবেদিত।
মন্তব্য করুন