আতাউর রহমান
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভোটের মাঠে ভয়ের ছায়া

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ অস্ত্রধারীরা
ভোটের মাঠে ভয়ের ছায়া

জাতীয় নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত তপশিল ঘোষণা হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। ভোটের মাঠে সন্ত্রাসের ছায়ায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নানা স্তরে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার অন্যতম শর্ত হলেও সেই গ্রাফটা এখনো নিচের দিকেই রয়েছে। ভয়হীন ভোটের মাঠ তৈরিতে দ্রুতই অবৈধ অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে তাগাদা দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার খোদ রাজধানীতে ফিল্মি স্টাইলে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এর আগে গত মাসেই চট্টগ্রামে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সন্ত্রাসী ঘটনায় প্রার্থীদের স্বাভাবিক প্রচার-প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটবে, আতঙ্কে থাকবেন ভোটাররা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরুতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক না রাখতে পারলে দিনে দিনে নির্বাচনী মাঠে তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে। এজন্য আগাম গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও বেশি করে তৎপর থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভোটের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার আগেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে খুব শিগগির দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে বড় ধরনের অভিযানও চালানো হতে পারে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবশ্যই নির্বাচনের পরিবেশের ওপর বিরূপ ও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। সেই ধরনের তৎপরতা আমরা দেখতে পাইনি। অস্ত্র উদ্ধারে বড় ধরনের অপারেশন আমরা দেখতে পাইনি। মুখে দু-একটা কথা বলা হয়েছে, কিন্তু কার্যত তেমন কোনো কিছু দৃশ্যমান হয়নি।

তিনি বলেন, ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়াতে হবে, তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি ও তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। এসব কিছুতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরও সক্রিয় ভূমিকায় থাকতে হবে।

গত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধ কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘ভালোমন্দ’ নির্ধারক প্রায় সব সূচকই নিম্নমুখী রয়েছে। খোদ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। ক্ষুদ্র সংঘাতেও আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া দেখা গেছে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকতে হয়। বর্তমানে খুব একটা খারাপ নেই, আবার খুব ভালোও নেই। এমনটা থাকলেও নির্বাচন পার হয়ে যাবে হয়তো। যাতে অবনতি না হয়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।’

গতকাল ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, তপশিলের পর একজন প্রার্থীর ওপর এমন ঘটনা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। যদি জড়িতদের বিরুদ্ধে ভালো অ্যাকশন না নেওয়া হয়, তাহলে কিছু লোক উৎসাহিত হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে রহস্য উদ্ঘাটনে একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।

গত এক মাসে কালবেলার প্রথম ও শেষ পাতায় প্রকাশিত হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই সময়ের মধ্যে সারা দেশে আলোচিত অন্তত ২০টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১২টি হত্যাকাণ্ডে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও অন্তত চারটি ঘটনায় গুলিবর্ষণ হয়। এর আগে ৫ নভেম্বর চট্টগ্রামে নির্বাচনী জনসংযোগের সময় বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ হন। তবে এখনো ওই ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার হয়নি। এর মধ্যেই হাদির ওপর গুলির ঘটনা ঘটল।

এ ছাড়াও গত ৫ নভেম্বর টেকনাফে সেতুর নিচ থেকে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৬ নভেম্বর খুলনায় এক প্রবাসীকে ৮ রাউন্ড গুলিতে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১০ নভেম্বর পুরান ঢাকার আদালত থেকে হাজিরা দিয়ে বের হওয়ার পর সন্ত্রাসীরা ফিল্মি স্টাইলে গুলি করে তারিক সাইফ মামুন নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। মামুনও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ছিল। ১০ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জে আরিফ মীর নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে ২ নভেম্বর একই এলাকায় তুহিন দেওয়ান নামে আরেক তরুণকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১১ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে ছাত্রদল নেতা সৌরভকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১২ নভেম্বর মধ্য বাড্ডার একটি বাসায় মেলে মামুন সিকদার নামে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তির লাশ। একই দিন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এক ব্যক্তিকে ৫ রাউন্ড গুলি করে হত্যা করা হয়। ১২ নভেম্বর সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে এক ব্যবসায়ীর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৬ নভেম্বর খুলনার সোনাডাঙ্গায় গুলিতে নিহত হন আলাউদ্দিন মৃধা নামে এক ব্যক্তি। একই দিন খুলনা নগরীর জিন্নাপাড়ায় নাতি-নাতনিসহ নানিকে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১৭ নভেম্বর রাজধানীর পল্লবীতে দোকানে ঢুকে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ১৪ নভেম্বর লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা আবুল কালাম জহিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসায় ঢুকে বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর জুরাইনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। একই দিন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাউল শিল্পীর স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গত ১১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর লালবাগে রিয়াদ নামে এক তরুণকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। একই দিন দুপুরে শ্যামবাজারে গুলি করে হত্যা করা হয় এক ব্যবসায়ীকে।

এদিকে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্র বিশ্লেষণে পুলিশ সদর দপ্তর প্রতি মাসে এবং প্রতি তিন মাস পরপর অপরাধ পর্যালোচনা সভা করে থাকে। এসব সভার মধ্যে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনায় সাধারণত দুই মাসে দেশে সংঘটিত অপরাধের পরিসংখ্যান নিয়ে আলোচনা হয় এবং পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নানা কৌশলসহ নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত অক্টোবর মাসের অপরাধ পর্যালোচনা সভাটি গত ২৩ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে দেশে সংঘটিত খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি, অপহরণ, দাঙ্গা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত মামলার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তাতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে প্রায় সব ক্ষেত্রেই অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে সেপ্টেম্বর মাসে ২৯৭টি খুনের মামলা হয়। তবে গত অক্টোবরে ৩২০টি খুনের মামলা হয়। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে ২৩টি খুনের মামলা বেশি হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসে সারা দেশে ৩৯৯টি খুনের মামলা হয়েছিল। চলতি বছরের বছরের সেপ্টেম্বরে ৫০টি ডাকাতির মামলা হলেও অক্টোবরে তা ৬টি বেড়েছে। যদিও গত বছরের অক্টোবরে ৬৮টি ডাকাতির মামলা হয়। গত সেপ্টেম্বরে ১৬৯টি দস্যুতা বা ছিনতাই মামলা হলেও পরের মাসে তা ১০টি বেড়ে ১৭৯টি হয়। অবশ্য গত বছরের একই মাসে ৩৯৯টি ছিনতাই মামলা হয়েছিল। চলতি বছরের অক্টোবরে অপহরণের ঘটনায় ১১০টি মামলা হলেও গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৯৬টি। এ ছাড়া ওই দুই মাসে সংঘটিত অপরাধ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাস থেকে অক্টোবরে চুরির মতো অপরাধও বেড়েছে।

গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে খুনের মামলা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোর মধ্যে অক্টোবরে ঢাকায় ২২টি এবং গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় ১১টি হত্যা মামলা হয়। তবে সেপ্টেম্বরে ঢাকায় এই সংখ্যা ছিল ২৫টি এবং গাজীপুরে মাত্র ৩টি। পুলিশের রেঞ্জগুলোর মধ্যে অক্টোবরে ঢাকা রেঞ্জে ৫৯টি হত্যা মামলা হলেও আগের মাসে তা ১৮টি কম ছিল। চট্টগ্রাম রেঞ্জে সেপ্টেম্বরে ৫৫টি হত্যা মামলা হলেও অক্টোবরে তা বেড়ে হয়েছে ৫৯টি। এ ছাড়া খুলনা রেঞ্জে ৩৪টি এবং রাজশাহী রেঞ্জে ৪১টি হত্যা মামলা হয়। যদিও এর আগের মাসে এই দুটি রেঞ্জে যথাক্রমে ২৭টি ও ২৬টি হত্যা মামলা হয়েছিল।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, গত বছর গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশ স্থাপনা থেকে বিপুলসংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়ে যায়। অবৈধ এসব অস্ত্র উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চললেও পুরোপুরি সফলতা আসেনি। এখনো বিভিন্ন ধরনের ১ হাজার ৩৪০টি অস্ত্র ও ২ লাখ ৫৭ হাজার ২৮০টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা যায়নি। এসব অস্ত্র-গুলিও বড় চিন্তার কারণ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাদির হামলাকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার 

এই বয়সে এগুলা কেন করেন বুঝি না, রুনা-জয়াকে নিয়ে যা বললেন চুমকি

ফেনীতে জলাতঙ্কের টিকার সংকট, ভোগান্তিতে রোগীরা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু আটক

হাদির ওপর বর্বরোচিত হামলা গণতন্ত্রের ওপর আঘাত : মির্জা আব্বাস 

শাহীন শিক্ষা পরিবারের শিক্ষার্থীদের ‘স্মৃতিমিলন-২০২৫’ অনুষ্ঠিত

মিয়ানমারে হাসপাতালে হামলা, দায় স্বীকার সেনাবাহিনীর

আইপিএল : নিলামের আগেই হুট করে বাদ ৯ ক্রিকেটার

এবার উপজেলা নির্বাচন অফিসে আগুন দেওয়ার চেষ্টা

দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরিঘাট বন্ধ

১০

বাসায় ঢুকে মাথায় হাতুড়ির আঘাতে নারীকে হত্যা

১১

শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বিজয় দিবস উপলক্ষে জামায়াতের কর্মসূচি ঘোষণা

১২

ইউরোপ যাচ্ছে ‘দেলুপি’

১৩

বিজয় দিবস ঘিরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে চার স্তরের নিরাপত্তা

১৪

বালিতে শুয়ে উষ্ণতা ছড়ালেন মিম

১৫

যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মহান বিজয় দিবস পালনের আহ্বান জামায়াত আমিরের

১৬

প্রতারণা এড়াতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পরামর্শ

১৭

অ্যাশেজ ছেড়ে আইপিএলের নিলামে থাকবেন ভেট্টোরি

১৮

মাকে মারধর করায় ছেলেকে কোমর পর্যন্ত পুঁতে রাখলেন এলাকাবাসী

১৯

সীমান্তে বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ মরদেহ ফেরত দিল ভারত

২০
X