

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কার বিষয়টি সামনে এসেছে। রাজনৈতিক নেতা ও প্রার্থী এবং জুলাই যোদ্ধাদের ওপর এমন আরও ঘটনার শঙ্কার কথাও এসেছে রাজনৈতিক নেতাদের মুখ থেকে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নির্দেশনা (নিরাপত্তা প্রটোকল) সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রোববার আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক জরুরি বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেও আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কার বিষয়টিরও আলোচনা হয়। এ ধরনের হামলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
গতকাল সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাদির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তির শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ যখন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। সেই সময় আবার নতুন করে দেশের শত্রুরা হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠেছে। গত পরশু একটি হত্যাচেষ্টা হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, এ রকম আরও ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে, গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচন কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
ওসমান হাদির ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পর এখন নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
অবশ্য পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও প্রার্থীসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল সরবরাহ করা হবে।
এতে বলা হয়, এই প্রটোকলে রাজনৈতিক নেতা এবং আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের বাসস্থান, কার্যালয়, চলাচল, জনসভা ও সাইবার স্পেসে কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতৃত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, গতকাল নির্বাচন ভবনে বৈঠকের আগে গত শনিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে রাজনৈতিক দলের নেতা ও নির্বাচনে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে নিরাপত্তা প্রটোকল বা নির্দেশিকা তৈরির সিদ্ধান্তও হয়। প্রার্থী ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাদের প্রয়োজনে সাময়িক সময়ের জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য বিদ্যমান অস্ত্র নীতিমালা কিছুটা শিথিল করার বিষয়ে কথাও হয়। দুই থেকে তিন মাসের জন্য পিস্তল বা শটগানের সাময়িক লাইসেন্স দেওয়ার প্রাথমিক চিন্তা রয়েছে। প্রার্থীদের সবাইকে সরকারের পক্ষ থেকে গানম্যান দেওয়া সম্ভব হবে না বিধায় সাময়িক সময়ের জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্য নেওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অতিরিক্ত ঝুঁকিতে থাকা প্রার্থীদের জন্য গানম্যান দেওয়া হতে পারে। হাইপ্রোফাইল প্রার্থী নিজেদের বাড়িতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্যও বলা হবে। সেক্ষেত্রে তাদের বাড়িতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, দারোয়ান রাখা, আর্চওয়ে বা ডিটেকটিভ যন্ত্রপাতি স্থাপন সংক্রান্ত শর্ত পূরণের প্রটোকল পূরণ করতে হতে পারে।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জুলাই যোদ্ধা এক হাদি না, হাজারো-লক্ষ জুলাই যোদ্ধা আছে। এই লক্ষ জুলাই যোদ্ধার ইনডিভিজ্যুয়াল সিকিউরিটি (প্রত্যেককে আলাদা করে নিরাপত্তা) নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। তবে সার্বিক পরিস্থিতি আমার সিকিউর (সুরক্ষিত) করতে হবে। রাষ্ট্রকে সিকিউর করতে হবে। রাজধানীকে সিকিউর করতে হবে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘যাদের স্পেসিফিক (সুনির্দিষ্ট) এ ধরনের সিকিউরিটি থ্রেট (নিরাপত্তা-হুমকি) আছে, তাদের নিয়ে আমরা অ্যানালাইসিস (বিশ্লেষণ) করছি। যাদের ক্ষেত্রে আমরা খুব হাই থ্রেট মনে করছি, তাদের আমরা পারসোনাল (ব্যক্তিগত) সিকিউরিটি দেব।’
মন্তব্য করুন