

ফর্টিফাইড আটা উৎপাদনে মান নিয়ন্ত্রণ ও গুণগত মান নিশ্চিতকরণ বিষয়ে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ঢাকার গুলশানে অবস্থিত লেকশোর হাইটস হোটেলে মিলার্স ফর নিউট্রিশন কোয়ালিশনের উদ্যোগে এ প্রশিক্ষণ হয়। গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে কোয়ালিশনটি পরিচালনা করছে টেকনোসার্ভ।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি শনাক্তকরণ, কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন মানদণ্ডের সঙ্গে উৎপাদন ব্যবস্থাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করেন। দেশের ৯টি মিল কারখানার প্রতিনিধিরা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে ফর্টিফাইড আটা উৎপাদনে তাদের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়; যা জাতীয় বিধিমালা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
প্রশিক্ষণে উদ্বোধনী সেশনে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন টেকনোসার্ভের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. গুলজার আহম্মেদ। তিনি ফর্টিফাইড আটা উৎপাদনে যথাযথ ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এ ছাড়া বক্তব্য প্রদান করেন গেইন বাংলাদেশের পোর্টফলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ, বুলার বাংলাদেশের টিম ম্যানেজার (প্রজেক্ট এক্সটেনশন) মাহফুজুর রহমান।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় টেকনিক্যাল সেশনে টেকনোসার্ভের সিনিয়র ফুড ফর্টিফিকেশন স্পেশালিস্ট মো. নাঈম জোবায়ের খাদ্য নিরাপত্তা ও গুণগত ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো তুলে ধরেন এবং মিলারদের জন্য অপরিহার্য ধাপগুলোর ওপর আলোকপাত করেন। এর মধ্যে রয়েছে- প্রিমিক্স ব্যবস্থাপনা, ডোজিং নির্ভুলতা, প্রসেস মনিটরিং, রেকর্ড সংরক্ষণ এবং পণ্যের গুণমান পরীক্ষা। তিনি জানান, আটা-ময়দা ফর্টিফিকেশনে সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ ও গুণগত মান নিশ্চিতকরণ ব্যবস্থা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি ভোক্তার আস্থা বৃদ্ধি ও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ময়দা শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কর্মশালায় উপস্থিত হেক্সাগন নিউট্রিশনের প্রতিনিধি অদ্বৈত রোডে তার উপস্থাপনায় বলেন, উন্নতমানের প্রিমিক্সই কার্যকর আটা ফর্টিফিকেশনের ভিত্তি—পুরো প্রক্রিয়াটির নির্ভরযোগ্যতা ও স্থায়িত্ব এতে নির্ভর করে। নির্ভরযোগ্য ও বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত প্রিমিক্স ব্যবহারে ভোক্তারা ধারাবাহিক ও নিরাপদ পুষ্টিগুণ পেতে পারবেন।
অংশগ্রহণকারীরা উৎপাদন উৎকর্ষতা, মান নিয়ন্ত্রণ, ডকুমেন্টেশন সিস্টেম ও প্রসেস কন্ট্রোল—এ সমস্ত বিষয়ে ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করেন, যা তাদেরকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে সক্ষম উচ্চমানের ফর্টিফাইড আটা উৎপাদনে সহায়তা করবে।
প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জামাল হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সরকার এখনও ফর্টিফাইড আটা অন্তর্ভুক্ত না করলেও ভবিষ্যতে জনসাধারণের যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিতকরণে ফর্টিফাইড আটা অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। খোলা বাজারে ফর্টিফাইড আটার দ্রুত বিস্তার ও সম্ভাবনাকে সরকার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহ এ উদ্যোগ জাতীয় পর্যায়ে প্রসারিত করতে যে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে, তা প্রশংসনীয়। একই সঙ্গে তিনি ফুড ফর্টিফিকেশন ইকোসিস্টেম জোরদারকরণে টেকনোসার্ভের ধারাবাহিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান।
মিলার্স ফর নিউট্রিশন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে স্ট্র্যাটেজিক ফোর্টিফিকেশন পার্টনার- বিএএসএফ, বায়োঅ্যানালিট, ডিএসএম-ফারমেনিস, ম্যুলেনকেমি, স্টার্নভিটামিন; আঞ্চলিক সহযোগী- হেক্সাগন নিউট্রিশন, পিরামাল, সাংকু এবং ক্রমবর্ধমান স্থানীয় কারিগরি অংশীদারদের সমন্বয়ে। যারা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে সমাজসেবা ও ব্যবসায়িক স্থায়িত্বে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উদ্যোগটি পরিচালিত হচ্ছে টেকনোসার্ভের মাধ্যমে, গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে। মিলারস, খাদ্য ফর্টিফিকেশন সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ আগ্রহী সবাই কোয়ালিশনে যুক্ত হওয়ার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
মন্তব্য করুন