আতাউর রহমান
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:০৬ এএম
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সহিংসতা মোকাবিলায় কঠোর পুলিশ

সহিংসতা মোকাবিলায় কঠোর পুলিশ

রাজনৈতিক সহিংসতা দমনে আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ২৮ অক্টোবরের আগে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশের ‘ছাড় দেওয়ার’ মনোভাব ছিল। তবে ওইদিন বিএনপির মহাসমাবেশের সহিংসতায় কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে নির্মমভাবে হত্যা এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার পর বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে মাঠ পুলিশ। ওই হামলাকে গোটা বাহিনীর ওপর হামলা মনে করে জড়িতদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ সদস্য পারভেজকে হত্যা, দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতিদের বাসভবনে হামলার বিষয়টি একেবারেই ভালোভাবে নেওয়া হয়নি। এসব ঘটনায় যারা সরাসরি জড়িত এবং যাদের ইন্ধনে এমন নাশকতা হয়েছে—কাউকেই ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। গতকাল শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দেওয়া বক্তব্যেও এমন আভাস মিলেছে। রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কারাগারে জাতীয় চার নেতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সিদ্ধান্ত দিচ্ছিলেন, আর কর্মীরা সেটির বাস্তবায়ন করছিলেন। তাই এ সহিংসতার দায় নেতারা এড়াতে পারবেন না।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন বিভাগ ও জোনের কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের আগের দিন বিকেলে ডিএমপি সদর দপ্তরে সব মাঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে ব্রিফ করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহায়তা করতে ঊর্ধ্বতনরা স্পষ্ট নির্দেশনা দেন। যে কোনো উসকানিতে পা না দিয়ে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরারও নির্দেশনা ছিল। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিরাপত্তার স্বার্থে চেকপোস্টগুলোতেও যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন, সেই নির্দেশনাও দেওয়া ছিল। পরের দিন পুলিশ সকাল থেকে সেভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করে। সহিংস ঘটনার জন্য তারা কেউ প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু যেভাবে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও জাজেস কমপ্লেক্সে আক্রমণ শুরু হয়, তখনো পুলিশ বিরোধীদের ওপর সেভাবে কঠোর না হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এরপরও নাইটিংগেল মোড়ে নির্বিচারে পুলিশের ওপর আক্রমণ শুরু হয় এবং সমাবেশ ছেড়ে যাওয়ার পথে একেবারে বিনা উসকানিতে কনস্টেবল পারভেজকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যু নিশ্চিত করারও পর লাশের ওপর পৈশাচিকতা চলে। এ ধরনের ভিডিও ফুটেজ দেখে বাহিনীর সদস্যরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, কনস্টেবল পারভেজের ওপর যে নৃশংস আঘাত করা হয়েছে, সেই আঘাত সব পুলিশ সদস্যের ওপর বলে তারা মনে করছেন। এর সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রত্যেককে আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে। ডিএমপির অন্য এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ ঘিরে মাঠপর্যায়ে ফোর্সের কাছে চায়নিজ রাইফেল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। নন লেথাল রাবার বুলেট, লাঠি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড দেওয়া হয়, যাতে বিশৃঙ্খলা হলে তা মোকাবিলা করা যায়। কিন্তু সেদিন বিএনপির সহিংসতার ধরন দেখে শুরুর দিকে অবাক হয়েছে পুলিশ। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে পেশাদারিত্ব নিয়ে আরও বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকানো হয়েছে। এ ধরনের নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা ঠেকানোর মতো কৌশল বা প্রস্তুতি ডিএমপির রয়েছে।

পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, তারা মনে করছে, বিএনপির মহাসমাবেশের দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ভুয়া উপদেষ্টা মিয়ান আরেফিকে দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার ব্যবস্থা করে পুলিশের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টার পরিকল্পনা ছিল। নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিবৃত রেখে আরও বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা করা হতো। কিন্তু পরিচয় ফাঁস হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া পুলিশ পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্যাংশন বা এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার ভয় যে করে না, সেটি সহিংসতায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার মধ্যদিয়ে প্রমাণ করেছে। সামনের দিনগুলোতেও কেউ যদি নাশকতা করে বা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতা করে—তাহলে তা শক্ত হাতেই মোকাবিলা করা হবে। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে আইন অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্ব পালনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পিছপা হবে না।

পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, সর্বশেষ ৭২ ঘণ্টার অবরোধের মতো আগামীতে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে নাশকতা হতে পারে, জ্বালাও-পোড়াও হতে পারে। এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কারা এ ধরনের ঘটনার বাস্তবায়ন করছে—সেই দিকে চোখ রয়েছে গোয়েন্দাদের।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘প্রকাশ্যে আমার পুলিশ ভাইকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া আমার আরও অনেক পুলিশ ভাই ঢাকা মেডিকেল কলেজে ও রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে একজন কোমায় চলে গেছেন। হাসপাতালে গেলে দেখা যায় এসব পুলিশ সদস্যের পরিবার ও বাচ্চাদের কান্না ও আহাজারি।’ তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে রাজধানীতে হামলা, আগুন ও পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় করা মামলার আসামি এবং এখনো পলাতক বিএনপির বাকি নেতাকর্মীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ থেকে ’১৫ সাল পর্যন্ত যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও এ ধরনের নাশকতা মোকাবিলার অভিজ্ঞতা রয়েছে পুলিশের। সে অনুযায়ী সামনের দিনগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানমাল ও সম্পদের ক্ষতি কেউ করতে চাইলে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। তবে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে পুলিশ সহায়তার মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

মঙ্গলবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৯ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের মাঝে পুতিনকে ট্রাম্পের ফোন

‘মিডিয়া কিছু বলছে মানেই সেটা সত্যি, এটা বিশ্বাস করা বোকামি’

ঘুম থেকে উঠে যে কাজগুলো করা ক্ষতিকর

লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত, নতুন বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস

মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমার সময় বাড়াল ডাকসু নির্বাচন কমিশন

এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তা বরখাস্ত

টকশোতে বসে এনসিপি নেতা জানলেন তিনি বহিষ্কার

১০

ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের তথ্য জানালেন জেলেনস্কি

১১

এশিয়া কাপের আগে ভারত দলে দুঃসংবাদ

১২

দুই দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও বস্তিবাসীদের

১৩

আ.লীগ নেতা এফএম শরীফুল গ্রেপ্তার

১৪

ছাত্রদলকে সুবিধা দিতেই মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় বৃদ্ধি : বাগছাস

১৫

এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহিন সরকারকে বহিষ্কার

১৬

ডাকসু নির্বাচন / ‘দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে যাচ্ছে’

১৭

এক ফ্যান এক বাতিতে বিদ্যুৎ বিল এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা!

১৮

চমক রেখেই বাছাইপর্বের শেষ দুই ম্যাচের প্রাথমিক দল ঘোষণা আর্জেন্টিনার

১৯

মাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেল শিশু সন্তানেরও

২০
X